ঢাকা : স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিশাল মুক্ত প্রাঙ্গণে বিচরণ করে অনেক শিক্ষার্থীই খেই হারিয়ে ফেলেন। জীবনের চলার পথে আনন্দ, বিনোদন, সংস্কৃতির প্রয়োজন রয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন তাদের মূল লক্ষ্য ক্যারিয়ার থেকে সরে না যায় সেই লক্ষ্যেই ক্যারিয়ার ক্লাবের পথচলা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন উদ্যমী, কর্মঠ, সৃষ্টিশীল ভবিষ্যতের জন্য রেখে গেছেন উচ্ছ্বসিত তরুণ-তরুণীদের ক্যারিয়ার গঠনের দিকনির্দেশক ক্যারিয়ার ক্লাব।
শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার ভাবনা নিয়ে হাজারো সমস্যার সমাধান, দক্ষতা উন্নয়নের উদ্দেশ্য ও কর্মক্ষেত্রে নিজেকে এগিয়ে রাখার লক্ষ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাবের (জেএনইউসিসি) পথচলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের আট শিক্ষার্থীর হাত ধরে ২০১১ সালের পহেলা জুলাই ক্লাবটির যাত্রা। তরুণদের ক্যারিয়ার ভাবনা ও তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট, স্কিল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে জেএনইউসিসি।
পরিবর্তনশীল, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন প্রকার সফটস্কিল ও কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপমেন্ট করতে তরুণদের সহায়তা করছে ক্লাবটি। বিভিন্ন ধরনের ক্যারিয়ার-বিষয়ক কর্মশালা, প্রশিক্ষণ, সেমিনার, প্রেজেন্টেশন প্রোগ্রাম, পাবলিক স্পিকিং, সিভি রাইটিং, আইডিয়া কম্পিটিশন, লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, শিল্প-কারখানা পরিদর্শনসহ শিক্ষার্থীদের পরিচালনায় এ ক্লাব ক্যারিয়ার নির্দেশনা, ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ, ক্যারিয়ার ফেস্টিভ্যাল, দিনব্যাপী কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, কুইজ প্রতিযোগিতা, বিজনেস কেইস কম্পিটিশন, সার্টিফিকেশন কোর্স, উন্নত যোগাযোগ প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে যাত্রা শুরুর পর থেকেই। ক্লাবটির শুরু থেকেই চিফ মডারেটর ও মডারেটর হিসেবে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন ও সহকারী অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম।
প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থী ক্লাবটিতে যুক্ত হতে আবেদন করে। আবেদনকারীদের বহুনির্বাচনী, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। এ পরীক্ষায় ভালো ফলাফলকারীদের বিশেষ সদস্যপদ ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তাদের এক বছরব্যাপী লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (নেতৃত্ব উন্নয়ন কর্মশালা) করানো হয়। আর তাদের মধ্যে থেকে যারা ভালো দক্ষতা ও আগ্রহ দেখায় তাদের নির্বাহী সদস্য হিসেবে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়। যারা সদস্য বাছাই পরীক্ষায় ভালো করতে পারে না তাদেরকে হতাশ করা হয় না। তাদেরকে ক্লাবের সাধারণ সদস্য হিসেবে রাখা হয়। ক্লাবের সদস্যদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য প্রতি বছর সদস্যদের মধ্য থেকে যারা নিজেদের দক্ষতা বেশি দেখাতে পারে ও ক্লাবের প্রতি বেশি আন্তরিক এমন দুজনকে সেরা সদস্য নির্বাচিত করে পুরস্কৃত করা হয়। বর্তমানে জেএনইউসিসির সদস্যসংখ্যা প্রায় ৩৮০ জন।
ক্লাবটির মডারেটর শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চাকরির বাজারে নিজেকে যোগ্য প্রতিযোগী হিসেবে তৈরি করতে ক্লাবের বিভিন্ন ওয়ার্কশপ ও সেমিনারগুলো থেকে নানা কৌশল ও প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দিচ্ছে ক্যারিয়ার ক্লাব। ফলে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসের জায়গাটাও দিনদিন বেড়েই চলেছে।’
প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে তরুণদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম করে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই মূলত আমরা জবি ক্যারিয়ার ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে এক ধাপ এগিয়ে রাখতে ক্যারিয়ার ক্লাব কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে।’
ক্লাবের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জেনারেশনের করপোরেট লিডার হিসেবে তৈরি করার জন্য কাজ করছি। ক্লাবটি একেবারে শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং, নেটওয়ার্কিং এবং চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া জবি শিক্ষার্থীরা নিজেদের যেন চাকরি বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে সেজন্য প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতার আয়োজন করে যাচ্ছে।’
ক্লাব নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাব সংগঠনের সাথে সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলাসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইয়ুথ সামিটের আয়োজন করার চিন্তাভাবনা রয়েছে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই