ঢাকা : মো. সাব্বির রহমান শুভ। ২০১৪ সাল থেকে ফ্রিল্যান্সিং-এর সঙ্গে যুক্ত। ফ্রিল্যান্সিং-এর হাতেখড়ি ইমেইল মার্কেটিং-এর মধ্য দিয়ে। ধৈর্য এবং একাগ্রতার মধ্য দিয়ে নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন অনন্য উচ্চতায়। তার ইচ্ছা ছিলো কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়ালেখা করতে তবে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস এন্ড টেকনোলজি (বিউবিটি) থেকে ব্যাচেলর অফ সাইন্স ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়ালেখা শেষ করেন।
বর্তমানে তিনি SetSchedule-এর বাংলাদেশের Head of Operations। একই সঙ্গে Fiverr Bangladesh-এর মাধ্যমে নতুন ফ্রিল্যান্সিং-এর যারা যুক্ত হচ্ছে তার নিয়ে কাজ করছেন। তার কাজ এবং ফ্রিল্যান্সিং-এর জন্য নিজেকে তৈরি করার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিলেন ‘সোনালী নিউজ’ -এর সঙ্গে।
সোনালী নিউজ : ফ্রিল্যান্সিং-এ আসার বা শুরু করার গল্পটি বলুন আমাদের -
মো. সাব্বির রহমান শুভ : তাহলে প্রথম থেকেই শুরু করি, ছোট থেকেই কম্পিউটারের প্রতি অনেক আগ্রহ ছিলো আমার। প্রায় অনেকটা সময় কম্পিউটার সামনেই আমার সময় কাটতো। এভাবেই এক সময় ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানতে পারি এবং অনেক ধরনের কাজ দেখে নিজের ভেতর আগ্রহ বাড়তে থাকে। একটা সময় শেখা শুরু করি এবং চর্চা করতে থাকি। করতে করেতে অনেক কিছু শিখতে শুরু করি। তবে কিছু দিনের ভেতর হযবরল হয়ে যাই।
কারণ একসঙ্গে অনেক কিছু শেখা এবং বৈঠাহীন নৌকা একই। মানে ফ্রিল্যান্সিং-এর জন্য। এজন্য ইমেইল মার্কেটিং শেখা শুরু করলাম। খুব অল্প সময়ে অনেক কিছু শিখে ফেলি। এমনও হয়েছে ৩ মাসের কোর্স ১০ দিনে শেষ করে ফেলেছি। দিনে ১৫-১৮ ঘণ্টা সময়ও দিয়েছি। এরকম করে যখন নিজের ভেতর আত্মবিশ্বাস আসলো তখনই প্রফেশনালি ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট প্লেসে কাজ শুরু করি। সময়ে কথা বলতে গেলে ২০১৪ থেকে, যদিও পুরোপুরি শুরু করি ২০১৫ থেকে। খুব অল্প সময়ে অনেক কাজ পেয়ে যাই যদিও প্রথম মাসে মাত্র ২৭০০-৩০০০ টাকা এসেছিলো। তারপর আস্তে আস্তে অনেক কাজ করা হয়েছে। ইমেইল মার্কেটিং ছাড়াও অনেক ধরনের কাজ শেখা এবং করা হয়েছে। এমনও হয়েছে কাজ পারি তারপরও নতুন কিছু শিখা যায় কিনা তার জন্য বিভিন্ন আইটিতে ভর্তি হয়েছি। নিজে নিজে আরও অনেক কিছু শিখেছি। এখন পর্যন্ত ১০০০+ কোম্পানির সঙ্গে কাজ করেছি। ওয়ার্ল্ডের সব বড় বড় মার্কেট প্লেসেই কাজ করা হয়েছে। যা কিনা ১৮০০+ প্রজেক্টে।
সোনালী নিউজ : শুরুর দিকে ১৫-১৬ ঘণ্টা কম্পিউটারের সমনে সময় কাটিয়েছেন। তার মানে বলতে চাচ্ছেন ধৈর্য এবং শেখার একাগ্রতার প্রয়োজন -
মো. সাব্বির রহমান শুভ : যেকোনো কাজ শেখার জন্যই ধৈর্য এবং একাগ্রতা প্রয়োজন। এমন না শুধু ফ্রিল্যান্সার হতে হলে ধৈর্য এবং একাগ্রতা প্রয়োজন। আপনি যেকোনো কাজ শিখতে চাইলে বা যে কোন কিছু পেতে হলে ধৈর্য এবং একাগ্রতা প্রয়োজন। আর সেটা আপনার ভিতর থেকে আসতে হবে। কারোটা দেখে সে ভালো করেছে তাই শুরু করে দিলাম এমন যেন না হয়। আগে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে যে আমি যদি এই সেক্টরে যাই তাহলে সেটাতে আমি আমার ১০০% দিতে পারবো কিনা। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং-এ আসতে হলে আপনাকে অবশ্যই কাজ শিখার পরেও কাজ পাওয়ার জন্য ধৈর্য ধরতে হবে। কেননা এখন নতুনদের জন্য অনেক বেশি কম্পিটিশন। তবে ধৈর্য এবং একাগ্রতার মাধ্যমে যে কেউ এগিয়ে যেতে পারবে।
সোনালী নিউজ : কাজ করতে গিয়ে কখনও হতাশ হয়েছেন, যদি হয়ে থাকেন নিজেকে প্রস্তুত কি ভাবে করেছেন -
মো. সাব্বির রহমান শুভ : কাজ করতে যেয়ে কখনো হতাশায় পরিনি। কেননা সব সময়ই যতটুকু নিজের টার্গেট ছিলো সেটা পেয়েছি কখনো বেশিও পেয়েছি। তবে তাই বলে আশা বা টার্গেট কখনো অনেক বেশি ছিলো এমন না। কখনো কম কখনো বেশি মিলিয়েই ছিলো। তবে কাজ করতে যেয়ে অনেক সময় বোরিং হয়ে গিয়েছি বা একঘেয়েমি চলে এসেছ এইটা সত্য তবে আবারও বলছি হতাশ হইনি। যখনই মনে হতো না একটু রেস্ট প্রয়োজন তখন কোথাও থেকে ঘুরে এসে আবার নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছি।
তবে বর্তমানে নতুনদের মাঝে কাজ না পাওয়া নিয়ে অনেক হতাশা দেখা যায়। তবে কাজ না পেলে সেটা আপনার ব্যর্থতা। আপনাকে আরও ভালো করে কাজ শিখতে হবে। নিজের ভুলগুলো খুঁজে বের করে শুধরায় নিতে হবে। তাহলে অবশ্যই সফলতা আসবে। আপনি এমন অনেক কম মানুষই পাবেন যারা ভালো কাজ জানে তবে কাজ পাচ্ছে না।
সোনালী নিউজ : আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে ফ্রিল্যান্সিং এখনও নতুন বলা যায়। শুরুর দিকে পরিবারে কাছ থেকে কতটুকু উৎসাহ পেয়েছেন-
মো. সাব্বির রহমান শুভ : আসলে কাজ শেখার সময় না বলেনি কখনোই বাবা-মা। কোন কিছু শিখতে চাইলে বাসা থেকে সব সময়ই সাপোর্ট করেছে। তবে যখন কাজ শুরু করার কিছু দিন পর থেকে থেকে চাকরির জন্য বাসা থেকে বলাবলি করতো। যদিও আর্থিক কোনও সমস্যা নয় তবে বাবা-মা সবসময়ই চায় সন্তান কিছু করুক। কারণ আমাদের দেশের মানুষের কাছে ফ্রিল্যান্সিং এখনও বলতে গেলে নতুন।
সোনালী নিউজ : আপনি একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। সম্ভাবনাময় খুব ভালো কর্মস্থল রেখে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টি আপনার পরিবার কিভাবে দেখেছে -
মো. সাব্বির রহমান শুভ : আমার খুব ইচ্ছা ছিলো কম্পিউটার সাইন্সে পড়ার কিন্তু বিভিন্ন কারণে হয়ে উঠেনি। তবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কর্মস্থল তো ভিন্ন হয় প্যাশন বা ভালো লাগা থেকে। অন্যদিকে শুধু আমি না আরো অনেকে আছে বিভিন্ন বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করেছেন, তবে বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং করছেন। আমার পরিচিত অনেকে বুয়েট, ডুয়েটসহ বাংলাদেশের ভালো মানের ইউনিভার্সিটি থেকে পাস করেছেন তবে বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং করছেন। এখানে যদি আপনার ভালো কিছু হয় তবে কেও আটকিয়ে রাখতে পারবে না। এক সময় না এক সময় সবাই বুঝবে। সেটার জন্য আপনাকে ভালো কিছু করে দেখানোর ইচ্ছা থাকতে হবে এবং করে দেখাতে হবে।
সোনালী নিউজ : ইমেইল মার্কেটিং সম্পর্কে যদি একটু বলতেন-
মো. সাব্বির রহমান শুভ : ইমেইল মার্কেটিং আসলে অনেক ব্যাপক একটি কাজ। যার মাঝে অনেক ধরনের কাজ আছে। তবে বেসিক জিনিসটা হচ্ছে সাবস্ক্রাইবারদের ইমেইলে মার্কেটিং ইমেইল কন্টেন্ট পাঠানো। এখানে মার্কেটিং কন্টেন্টও হতে পারে আবার ট্রাঞ্জেকশনালও হতে পারে। আসলে কথাগুলো অনেকের বুঝতে সমস্যা হবে। কেননা প্রথমেই বলেছি সংক্ষেপে বুঝানো কষ্টকর। আপনি যেকোনো কাজের ব্যাপারেই ইউটিউব ও গুগল থেকে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
সোনালী নিউজ : বর্তমানে কি ধরনের কাজ করছেন -
মো. সাব্বির রহমান শুভ : বর্তমানে আমেরিকার, ক্যালিফোর্নিয়ার একটি কোম্পানি "SetSchedule"-এ কর্মরত আছি। কোম্পানি খুব শীঘ্রই বাংলাদেশে তাদের ব্রাঞ্চ শুরু করতে যাচ্ছে। তাদের কোম্পানির বাংলাদেশের হেড অব অপারেশন, বাংলাদেশ এবং ডিজিটাল মার্কেটিং ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছি।
সোনালী নিউজ : SetSchedule এর সাথে কাজ শুরু কিভাবে-
মো. সাব্বির রহমান শুভ : আসলে SetSchedule এর সাথেও আমার পরিচয় হয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেস ফাইবারের মাধ্যমে। ২০১৭ সালে প্রথম SetSchedule এর CEO, Roy Dekel এর সাথে কাজ করি। তার সাথে মার্কেট প্লেসেই অনেক কাজ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ এর দিকে কোম্পানিতে পার্মানেন্ট কাজের অফার করে। তখন বিভিন্ন কারণে জয়েন করিনি। পরবর্তীতে আবার ২০২০ এ কোম্পানিতে পার্মানেন্ট কাজের অফার করে তখন জয়েন করি। কেননা এর মাঝে রয় এবং কোম্পানির অনেকের সাথে ভালো সম্পর্ক হয়ে যায়। জয়েন করি Digital Marketing Engineer হিসেবে। পরবর্তীতে এই বছর ২০২১ এ যখন কোম্পানিতে আরও নতুন ইমপ্লয়ি নিবে ঠিক হয় তখন রয়ের সাথে একটি মিটিং এ বাংলাদেশ থেকে হায়ার করার ব্যাপারে কথা হয়। সব কিছু ঠিক থাকাতে এবং যেহেতু বাংলাদেশে আমি আছি তাই বাংলাদেশে নতুন ব্রাঞ্চ করবে এই ডিসিশন সহ বাংলাদেশ থেকে হায়ারিং শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ১২/১৩ জন হায়ার করা হয়েছে। এবং বর্তমানে কোম্পানির হেড অব অপারেশন, বাংলাদেশ এবং ডিজিটাল মার্কেটিং ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছি।
সোনালী নিউজ : Biggest Fiverr Bangladesh event সম্পর্কে বলুন বা আপনারদের কাজ এবং পরিকল্পনা-
মো. সাব্বির রহমান শুভ : বেশ কিছুদিন হলো কমিউনিটিতে সময় দেওয়ার জন্য Fiverr Bangladesh গ্রুপে মডারেটর হিসেবে কাজ করছি। Fiverr Bangladesh গ্রুপ খুব শীঘ্রই, যথা সম্ভব এবার ডিসেম্বরে Biggest Fiverr Bangladesh Event করতে যাচ্ছে, নাম পরবর্তীতে জানানো হবে। যা কিনা আমরা চাচ্ছি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অনলাইন কমিউনিটির সবচেয়ে বড় ইভেন্ট করতে। যেখানে যারা বর্তমানে ফাইভার মার্কেট-প্লেসে ভালো করছেন তাদের সংবর্ধনার পাশাপাশি ভালো ভালো ফ্রিল্যান্সাররা নতুনদের দিক নির্দেশনা দিবেন এবং আরও অনেক কিছু যা আগে বাংলাদেশের কোন অনলাইন কমিউনিটির ইভেন্টে হয়নি। সব কিছু এখনি বলা যাচ্ছেনা। বিস্তারিত ইভেন্টের আগে প্রকাশ করা হবে এবং কিছু জিনিস ইভেন্টে সারপ্রাইজ হিসেবে থাকবে। যা কিনা ইভেন্টে জয়েন করলেই জানা যাবে।
সোনালী নিউজ : সরকার কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে অবদান রাখতে পারে বলে মনে করেন -
মো. সাব্বির রহমান শুভ : আসলে সরকার এই সেক্টরের জন্য নতুন নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে। আমরা প্রতিনিয়তই অনেক নতুন উদ্যোগের কথা শুনতে পাচ্ছি। এখন বাকিটা সময়ের ব্যাপার। তবে সরকার যত বেশি ফ্রিল্যান্সিং এবং ফ্রিল্যান্সারদের প্রায়োরিটি দিবে, এই সেক্টর ততবেশি উন্নতি করবে এবং দেশের ফরেন রেমিট্যান্সে ততবেশি অবদান রাখবে বলে বিশ্বাস করি আমি।
সোনালী নিউজ : আপনার দৃষ্টিতে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরকে কিভাবে দেখন -
মো. সাব্বির রহমান শুভ : আমার দৃষ্টিতে ফ্রিল্যান্সিং একটি ব্যাপক সম্ভাবনাময় সেক্টর। এখানে যেমন নিজে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায় ঠিক তেমনি দেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে ব্যাপক অবদান রাখা সম্ভব। এবং প্রতিনিয়ত যা বেড়েই চলেছে।
সোনালী নিউজ : আপনার অভিজ্ঞতা থেকে নতুন যারা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করছে বা করতে যাচ্ছে তাদের জন্য কিছু বলুন -
মো. সাব্বির রহমান শুভ : নতুনদের আমি সব সময়ই বলি, যে কোনও কাজ শেখা শুরু করার আগে তার সম্পর্কে ভালো ধারণা নিতে হবে। ভালো করে বুঝুন কোন কাজটি আপনার ভালো লাগে। কখনোই এটা ভেবে শুরু করবেন না যে কোন কাজটি সহজ, কোনটা করলে তাড়াতাড়ি আর্নিং করা যাবে। কেননা যে কাজটি শিখতে বেশি সময় লাগবে, বেশি শ্রম দিতে হবে সেটির ভবিষ্যৎ ভালো এবং আর্নিং বেশি। এখন যে কাজ সহজে শিখবেন পরবর্তীতে কাজ পেতে সমস্যা হবে এবং এক পর্যায় হতাশাগ্রস্ত হবেন। কখনই এটা দেখে শুরু করবেন না কে কোন কাজ করে ভালো আর্নিং করলো। সব সময় দেখবেন আপনার কোন কাজটি ভালো লাগে, সেটার ফিউচার কেমন। আর ভালো করে কাজ না শিখে মার্কেট প্লেসে একাউন্ট করবেন না। তাহলে পরবর্তীতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন।
আর যারা ভালো কাজ পারেন, এক সময় অনেক কাজ করেছেন। বর্তমানে তেমন কাজ পাচ্ছেন না। হতাশাগ্রস্ত হয়ে আছেন তাদের বলবো- If you need inspiration, don't need to see someone else. See your self & remember the greatest things which you did. You will be inspired more! --- MSRSuvo