ঢাকা : জাতীয় পরিচয়পত্র রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতির সবচেয়ে মূল্যবান দলিল। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা ছাড়াও বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা অর্জনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা আবশ্যক।
আমাদের দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকাশনা, মুদ্রণ ও তথ্য ব্যবস্থাপনায় জনগণের অসতর্কতা, অসাবধানতাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে অনেকেই জাতীয় পরিচয়পত্রে বিভিন্ন ভুলের স্বীকার হন যা পরবর্তীতে সীমাহীন দুর্ভোগের সৃষ্টি করে।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, ঠিকানা পরিবর্তন, পিতা-মাতার নামের ভুল, জন্ম তারিখ সংশোধনসহ অন্যান্য বিষয়ের ২০টি প্রশ্ন এবং তাদের উত্তর-
কিভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করবো?
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য উপজেলা, থানা অথবা জেলা নির্বাচন অফিসে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। আবেদনের সাথে সোনালী ব্যাংকে নির্ধারিত ফিস জমা দিয়ে সংশোধনের পক্ষে উপযুক্ত কাগজ-পত্র দাখিল পূর্বক আবেদন করতে হবে।
বিয়ের পর কিভাবে স্বামীর নাম লিপিবদ্ধ করবো?
জাতীয় পরিচয়পত্রে স্বামীর নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হলে বিয়ের কাবিন অথবা অন্যান্য প্রমাণসহ স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিসহ সংশোধনের আবেদন করতে হবে। স্বামীর ঠিকানা নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রে ব্যবহার করতে চাইলে সে বিষয়টিও আবেদনে উল্লেখ করতে হবে।
তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদের পর কিভাবে স্বামী বা স্ত্রীর নাম কর্তন করবো?
জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে স্বামী বা স্ত্রীর নাম কর্তন করতে চাইলে তালাক বা বিচ্ছেদের পক্ষে প্রমাণ দাখিল পূর্বক আবেদন করতে হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্রে পেশা পরিবর্তনের নিয়ম কী?
যদিও জাতীয় পরিচয়পত্রে পেশা উল্লেখ থাকে না তবুও আপনি চাইলে তা পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে, পেশা পরিবর্তনের জন্য প্রাসঙ্গিক আবেদনের সাথে যুক্ত করা আবশ্যক।
জাতীয় পরিচয়পত্রে ছবি অস্পষ্ট তাই পরিবর্তন করতে চাই, কিভাবে করবো?
অধিকাংশ লোকের ছবিই অস্পষ্ট। তবু কেউ যদি পরিবর্তন করতে চায় তাহলে, সরাসরি জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগে মূল জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে হাজির হয়ে নতুন করে ছবি উঠাতে পারবে।
নিজের নাম বা পিতা-মাতার নামের বানান ভুল কিভাবে সংশোধন করবো?
নামের বানান বা অংশ বিশেষ পরিবর্তনের জন্য নির্দিষ্ট ফরমে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে আবেদন করতে হবে। আবেদনের সাথে যে সব কাগজ দাখিল করতে হবে তার তালিকা-
১. একাডেমিক সনদ (এসএসসি/এইচএসসি/ বা অন্যান্য)।
২. পিতা/ মাতা বা স্বামী/স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র বা কাবিন নামার কপি।
৩. প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সম্পাদিত ২০০ টাকা স্ট্যাম্পে নোটারিকৃত হলফনামা।
৪. জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি।
৫. ওয়ারিশান সনদ (বিশেষ ক্ষেত্রে)।
৬. ইউনিয়ন বা সিটি কর্পোরেশন প্রদত্ত নামের প্রত্যয়নপত্র।
জাতীয় পরিচয়পত্রে বর্ণিত ঠিকানা কিভাবে পরিবর্তন বা সংশোধন করবো?
ঠিকানা পরিবর্তন সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে করা যায়। একই নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ঠিকানা পরিবর্তন করতে চাইলে সংশোধনের সাধারণ নিয়মে আবেদন করতে হয়। কিন্তু ভিন্ন নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ঠিকানা পরিবর্তন করতে চাইলে নির্ধারিত ফর্ম-১৩ মোতাবেক আবেদন করতে হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্রে রক্তের গ্রুপ কিভাবে যুক্ত করবো অথবা সংশোধন করবো?
জাতীয় পরিচয়পত্রে রক্তের গ্রুপ লিপিবদ্ধ না হলে কিংবা ভুল প্রকাশ হলে তা সংশোধনের জন্য আপনার এলাকার সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে রক্তের গ্রুপ সম্পর্কিত ডায়াগনোসিস রিপোর্ট দাখিল করে আবেদন জমা দিতে হবে।
বয়স বা জন্ম তারিখ ভুল উঠেছে, কিভাবে পরিবর্তন করবো?
জন্ম তারিখ বা বয়স পরিবর্তন বা সংশোধন জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের একটা জটিল প্রক্রিয়া। জন্ম তারিখ বা বয়স সংশোধনের আবেদনের সাথে উল্লেখিত দলিলাদি দাখিল করা আবশ্যক-
১. একাডেমিক সনদ (এসএসসি/এইচএসসি/ বা অন্যান্য)।
২. জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি
৩. প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সম্পাদিত ২০০ টাকা স্ট্যাম্পে জন্ম তারিখের ভুল সংক্রান্ত নোটারিকৃত হলফনামা।
৪. জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি।
৫. টিকা কার্ড এর কপি
৬. পাসপোর্ট থাকলে পাসপোর্টের কপি।
কতবার জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করা যায়?
একই তথ্য এক বারের বেশি সংশোধন করা যায় না। তবে, ঠিকানা, স্বামীর নাম, স্ত্রীর নাম এবং রক্তের গ্রুপ একাধিকবার সংশোধন করা যায়।
কিভাবে স্বাক্ষর পরিবর্তন করবো?
স্বাক্ষর পরিবর্তনের জন্য আপনার সর্বাধিক ব্যবহৃত স্বাক্ষরের নমুনাসহ আবেদন করবেন এবং নতুন করে বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্ট করতে হবে।
পিতা-মাতা মারা গেলে জাতীয় পরিচয়পত্রে কিভাবে মৃত উল্লেখ করবো?
পিতা-মাতা বা স্বামী-স্ত্রী মারা গেলে মৃত ব্যক্তির মৃত্যু সনদসহ দরখাস্ত করতে হবে।
ভাই-বোনের জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতা-মাতার নামের গড়মিল থাকলে কিভাবে সংশোধন করবো?
পিতা-মাতার নাম বিভিন্ন ভাই-বোনের জাতীয় পরিচয়পত্রে বিভিন্ন রকম আসলে নির্ধারিত ফরমে সব ভাই-বোন মিলে আবেদন করতে হবে এবং আবেদনের সাথে পিতা-মাতাসহ আবেদন কারীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল করতে হবে। পিতা-মাতার সঠিক নাম এবং বর্তমানে থাকা ভুল নাম আবেদন ফরমে আলাদা আলাদা করে নির্ধারণ করে দিতে হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেছে। কিভাবে আমি জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে পারি?
হারিয়ে যাওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে হলে থানায় প্রথমে জিডি করতে হবে। কিভাবে জিডি করবেন এ সংক্রান্ত আইন বিশারদের অন্য ভিডিও তে আলোচনা করা হয়েছে। জিডির কপি সহ সংশ্লিষ্ট অফিসে ডুপ্লিকেট কপির জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদন পত্রে অবশ্যই আবেদন কারীর পূর্ণ নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার অথবা ভোটার নং প্রদান করতে হবে। আবেদন করার পর আপনাকে একটি ডেলিভারি স্লিপ দিবে। ডেলিভারি স্লিপে উল্লেখিত তারিখে অথবা নির্ধারিত তারিখের ৫ কার্যদিবসের মধ্যে আপনার ডুপ্লিকেট জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে হবে। বর্তমানে, ডুপ্লিকেট কপির জন্য কোন ফি দরকার হয়না। তবে, স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি প্রদান করা লাগতে পারে।
হারানো জাতীয় পরিচয়পত্র পাবার আবেদন এবং সংশোধনের আবেদন একসাথে করা যাবে?
আগে হারানো আইডি উঠাতে হবে। তারপর সংশোধনের আবেদন করতে হবে।
বিদেশে অবস্থান করার কারণে সময়মত ভোটার হতে পারিনি, এখন আমি কিভাবে ভোটার হব?
সরাসরি নির্বাচন কমিশন অফিসে উপস্থিত হয়ে নতুন নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে অথবা পরবর্তী ভোটার তালিকা হালনাগাদ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এক নামে বা জন্ম তারিখে কি একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন করতে পারবো?
অবশ্যই না। কেননা, বর্তমানে ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার কারণে একাধিক নিবন্ধন করা সম্ভব না। কোনোভাবে করে ফেললেও ধরা পড়লে রয়েছে জেল-জরিমানার ব্যবস্থা।
আমার বাড়ি নোয়াখালী, আমি কি ঢাকায় ভোটার হতে পারবো?
জী, আপনি ঢাকা অথবা নোয়াখালী যেকোনো এক যায়গায় ভোটার হতে পারবেন।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের প্রয়োজনীয় ফরম কোথায় পাব?
সরাসরি উপজেলা, থানা বা জেলা নির্বাচন অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। অথবা অনলাইনে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
ভোটার আইডি সংশোধন কি নিজে নিজে করা সম্ভব? কত টাকা লাগে?
ভোটার আইডি সংশোধন একটি সুসংগঠিত পদ্ধতি। আপনি একা একাই সংশোধন করতে পারবেন। কারো সাহায্য বা কোন টাকা-পয়সার দরকার হবে না।
সোনালীনিউজ/এমটিআই