মেহেরপুর : গাংনীর পল্লীতে ইটের উপর বসে চুল-দাঁড়ি কাটানোর সেই অতীতের পেশা আজও ধরে রেখেছেন ক্ষৌরকার (নৃপতি) আব্দুল কুদ্দুস। অনেকেই সেই ৫০/৬০ দশকের পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। সর্বত্র আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামের সাধারণ মানুষ এখনও হাটে-বাজারে ও বাড়ির আঙ্গিনায় ইটের উপর বা কাঠের পিড়িতে বসে চুল কাটানোর কাজটি সেরে নেন।
গ্রামের অতীত স্মৃতি খুঁজতে কল্যাণপুরে গেলে এরকম পেছনে ফেলে আসা দিনগুলির চিত্র চোখে পড়ে। কল্যাণপুর বাজারের অদূরে রাস্তার একপাশে একবারেই ভাঙ্গা চোরা রেলিং ঘেরা জায়গায় দাঁড়িয়ে চুল কাটছেন ঐ গ্রামের খুব চেনা মানুষ আব্দুল কুদ্দুস (৬০)। আব্দুল কুদ্দুসকে গ্রামের সবাই কুদ্দুস নাপিত বলে জানেন। এক নামেই যার পরিচিতি। কথা হলো সেই মানুষটির সাথে। আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আমি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে অত্রা লে চুলদাড়ি কামানোর কাজ করে আসছি। আমি ছেলে মেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে আল্লাহর রহমতে অনেক ভাল আছি। আমি অনেক কিছু করেছি। অনেকেই পেশা বদল করলেও আমি আজও ধরে রেখেছি।
শহরে এমনকি গ্রামেও আধুনিক মানের সেলুন ব্যবসা শুরু হয়েছে। আধুনিককালে সুন্দর ও উন্নতমানের ডেকোরেশন করে বিশাল আয়নার সামনে কাঠের বা প্লাষ্টিক চেয়ারে বসে প্রসাধনী ও সেভিং ক্রীম দিয়ে চুল দাঁড়ি কাটা হয়। ৪০ টাকা থেকে শুরু করে শতাধিক টাকা দিয়ে বর্তমানে চুল কাটা ও দাঁড়ি সেভ করা হয়। কিন্তু গ্রামের সেই কুদ্দুস নাপিতের কাছে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা দিলেই চুল কাটানো হয়।
গ্রামের দীনমজুর বজলু জানান, আমরা গরীব মানুষ। বেশী টাকা দিয়ে বাজারের সেলুনে যেতে পারিনা। তাই অল্প টাকা খরচ করে গরীবের বন্ধু কুদ্দুস নাপিতের কাছে আমরা চুল দাঁড়ি কাটিয়ে থাকি। দীর্ঘদিন যাবত আমাদের ছেলে মেয়েদেরও চুল কাটানোর কাজটি করে থাকি। কথা প্রসঙ্গে বেশ কয়েকজন জানান, কল্যাণপুর গ্রাম সহ আশে পাশের গ্রাম গুলোতে আ্ব্দুল কুদ্দুস কাজ করে থাকেন। গ্রামের বেশীরভাগ দরিদ্র পরিবারের লোকজনের চুল দাড়ি কাটানোর কাজ বাকীতে করে পরবর্তীতে ফসল কাটার মৌসুমে ধান গম নিয়ে থাকেন।
এব্যাপারে গ্রামের একজন শিক্ষক জানান, আমরা যাই করিনা কেন, অতীতকে ভুলে নয়। শেকড়ের কথা আমাদের মনে রাখতে হবে। আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য সাহিত্য সংস্কৃতি আমরা যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পারি।
সোনালীনিউজ/এসএন