ঢাকা: এমন অনেকেই আছেন যাদের ভোটার এলাকা স্থানান্তরে করার প্রয়োজন কিন্ত ভোটার এলাকা স্থানান্তর করার জন্য করণীয় কি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসমূহ কি কি সে বিষয়ে সঠিক ধারণা নেই। ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। যাদের ভোটার এলাকা স্থানান্তরের প্রয়োজন তারা অবশ্যই উল্লেখিত পরামর্শ আনুযায়ী আবেদন দাখিল করতে পারেন।
মানুষ খুবই কর্মব্যস্ত জীব। দৈনন্দিনের প্রয়োজনীয়তার কারণে মানুষ সর্বদা নিজের স্থায়ী ঠিকানায় বসবাস করতে পারে না। এমন লক্ষ লক্ষ মানুষ আছে যারা লেখাপড়া বা চাকরী বা ব্যবস্য বা অন্য যে কোন প্রয়োজনের জন্য নিজ বাড়ী ছেড়ে দুর-দুরান্তে গিয়ে বসবাস করে থাকেন। ফলে তারা নিজের স্থায়ী ঠিকানায় ভোটার না হয়ে বর্তমান ঠিকানায় ভোটার হয়েছেন। যেহেতু সেটি তাদের অস্থায়ী ঠিকানা সেহেতু কখনো না কখনো তাদের ভোটার এলাকা স্থানান্তর করে স্থায়ী ঠিকানায় নিয়ে আসার প্রয়োজন হয়ে থাকে।
আপনি যে উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা, অর্থাৎ আপনি যে উপজেলায় স্থানান্তরিত হবেন সেই উপজেলার নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার এলাকা স্থানান্তর করার জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদন ফরমের নাম ১৩ নং স্থানান্তর ফরম। ফরমটি অফিস থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে, অফিসের সামনে ফটোকপির দোকানেও স্থানান্তর ফরম ১৩ পাওয়া যেতে পারে।
* আবেদন ফরম পুরণ করার নিয়মঃ-
স্থানান্তর ফরম ১৩ হাতে পাওয়ার পর প্রথমে ভালোভাবে পড়ে দেখবেন। ফরম পূরণ করা খুবই সহজ তাছাড়া ফরম পুরণের জন্য নিম্নে বর্ণিত পরামর্শগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
* ফরমের ১ নং ক্রমিকে আবেদনকারীর নাম লিখতে হবে বাংলায়।
* ফরমে ২ নং ক্রমিকে আবেদনকারীর এনআইডি কার্ড/ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর লিখতে হবে।
* ফরমের ৩ নং ক্রমিকে আবেদনকারীর জন্ম তারিখ লিখতে হবে।
* ফরমের ৪ নং ক্রমিক আপনি যে এলাকায় ভোটার ছিলেন সেই এলাকার ঠিকানা লিখতে হবে। ভোটার এলাকার নাম, ভোটার এলাকার নম্বর, উপজেলা/থানার নাম, জেলার নাম, গ্রাম/রাস্তার নাম ও নম্বর, বাসা/হোল্ডিং নম্বরসহ সবগুলো ফিল্ড পুরণ করবেন। তবে ভোটার নম্বর ও ভোটার এলাকার নম্বর যদি না জেনে থাকেন তাহলে লেখার দরকার নেই অথবা অফিস থেকে জেনে নিয়ে লিখতে পারেন। ভোটার এলাকার নাম এবং গ্রাম/রাস্তার নাম অধিকাংশ সময়ই একই হয়। ক্ষেত্র বিশেষ আংশিক বা সম্পূর্ণ আলাদা হতে পারে। তাই ভোটার এলাকার নামের স্থানে আপনার গ্রাম/রাস্তার নাম লিখে দিবেন।
* ফরমের ৫ নং ক্রমিকে আপনি যে ঠিকানায় ভোটার স্থানান্তর করাতে চা্ইছেন সেই এলাকার ঠিকানা লিখতে হবে। জেলার নাম, উপজেলার নাম, ইউনিয়ন/সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ক্যান্টঃ বোর্ড এর মধ্যে যেটির আন্ডারে আপনি স্থানান্তর হবেন সেটিতে টিক চিহ্ন দিবেন এবং পাশে ইউনিয়ন/সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ক্যান্টঃ বোর্ডের নাম লিখে দেবেন। তারপর আপনার ওয়ার্ড নম্বর, ভোটার এলাকার নাম, ভোটার এলাকার নম্বর, গ্রাম/রাস্তার নাম ও নম্বর, বাসা/হোল্ডিং নম্বর, মোবাইল নম্বর, ডাকঘর এবং পোষ্ট কোড লিখে দেবেন।
ভোটার এলাকার নাম ও গ্রামের নাম দুইটা আলাদা হতে পারে। আপনার সঠিক ভোটার এলাকা কোনটি না জানা থাকলে ওয়ার্ড মেম্বর বা এলাকার জনপ্রতিনিধীদের কাছ থেকে আপনার সঠিক ভোটার এলাকা কোনটি নিশ্চিত হয়ে নিবেন। ভোটার এলাকা ভুল হলে বা ৫ নং ক্রমিকে বর্ণিত তথ্যাদি যদি ভুল লিপিবদ্ধ হয় তাহলে সমস্ত কষ্টই বৃথা হয়ে যাবে। কারণ আপনার ভোটার তথ্য ভুল ঠিকানায় স্থানান্তর হয়ে যাবে। তাই যতদুর সম্ভব সাবধানতার সাথে ৫ নং ক্রমিক পূরণ করবেন।
* ফরমের ৬ নং ক্রমিকে বলা হয়েছে যে, ৫ নং ক্রমিকে বর্ণিত ঠিকানায় আপনি কতদিন যাবত বসবাস করছেন তা উল্লেখ করতে হবে। হতে পারে ৫নং ক্রমিকের ঠিকানা আপনার জন্মস্থান, হতে পারে ১ বছর বা ৩ বছর যাবত বসবাস করছেন (যার ক্ষেত্রে যেমনটি হবে তেমনটি লিখে দেবেন)।
* ফরমের ৭ নং ক্রমিকে বলা হচ্ছে, আপনি কেন ভোটার এলাকা স্থানান্তর করবেন। হতে পারে বৈবাহিক সূত্রে স্বামীর ঠিকানায় বসবাস করছেন বিধায় ভোটার স্থানান্তর করতে চান, বা এটিই আপনার স্থায়ী ঠিকানা বিধায় আপনি স্থায়ী ঠিকানায় ভোটার স্থানান্তর করাতে চান ইত্যাদি (যার ক্ষেত্রে যেমনটি হবে তেমনটি লিখে দেবেন)।
ফরমের পিছনের পাতায় আবেদনকারীর স্বাক্ষর বা টিপ সহি'র স্থানে কেবলমাত্র আবেদনকারীই সই করতে পারবে এবং আবেদনকারীর এনআইডি কার্ডে/ভোটার আইডি কার্ডে ছবির নিচে যেমন করে স্বাক্ষর করা আছে ঠিক তেমন করেই স্বাক্ষর করতে হবে। স্বাক্ষর আলাদা হলে আবেদন বাতিল হতে পারে।
আবেদনকারীকে সনাক্তকারীর স্বাক্ষরের স্থানে অবশ্যই একজন জনপ্রতিনিধী দ্বারা স্বাক্ষর করাতে হবে। যে কেউ সনাক্তকারীর স্থানে স্বাক্ষর করলে আবেদন বাতিল হতে পারে। সনাক্তকারী অবশ্যই তার স্বাক্ষর করবেন, এনআইডি নম্বর লিখবেন ও সীল ব্যবহার করবেন।
আবেদনের সাথে যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হবেঃ-
ফরমের ৮ নং ক্রমিকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের বিষয়ে উল্লেখ আছে। যাবতীয় কাগজপত্রস আপনি যে ঠিকানায় ভোটার স্থানান্তর করে আনতে চাইছেন সেই ঠিকানার হতে হবে।
* যদি ইউনিয়নের আওতায় হয় তাহলে চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র লাগবে। পৌরসভা হলে পৌর মেয়র বা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র লাগবে। অর্থাৎ একজন জনপ্রতিনিধী কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্র (যার ক্ষেত্রে যেটি প্রযোজ্য)।
* বাড়ীর বিদ্যুৎ বিল/গ্যাস বিলের কপি । (বাড়ীর যেকোন একজন সদস্যের নামীয় বিল হলেই হবে)।
* চৌকিদারী ট্যাক্স রশিদ/ পৌর করের রশিদ/বাড়ী ভাড়ার রশিদ এর মধ্যে যার যেটি আছে সেটি জমা দিতে হবে। (বাড়ীর যেকোন একজন সদস্যের নামীয় রশিদ হলেই হবে)।
* এবং আবেদনকারীর এনআইডি কার্ড/ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি।
উল্লেখিত কাগজপত্র আবেদনর পিছনে পিনআপ করে উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিবেন। অফিস থেকে আপনাকে আবেদনের নিচের অংশ কেটে দেবে সেটি যত্ন করে রেখে দেবেন। পরবর্তীতে অফিসে গেলে অবশ্যই আপনকে দেয়া স্লিপটি সঙ্গে নিয়ে যাবেন। যখনই আপনার আবেদনের কাজ শুরু হবে আপনার মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে আপনাকে জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রথম ম্যাসেজ পাওয়ার পরে আপনার কোন কিছুই করণীয় নেই। যখন দ্বিতীয় ম্যাসেজ যাবে সেটি পড়ে দেখবেন। সেখানে আপনার আবেদন অনুমোদন হয়েছে নাকি বাতিল হয়েছে নাকি আরো কাজগপত্র লাগেব সে বিষয়ে উল্লেখ থাকবে। ম্যাসেজে যদি আবেদন অনুমোদনের কথা বলা থাকলে বুঝবেন আপনার ভোটার এলাকা স্থানান্তর হয়ে গেছে তাই শুধু শুধু অফিসে গিয়ে
খোজ নেয়ার দরকার নেই ।
আর যদি এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে কোন ম্যাসেজ না আসে তাহলে স্লিপটি নিয়ে অবশ্যই উপজেলা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করবেন।
ভোটার এলাকা স্থানান্তরের আবেদন অনুমোদন হয়ে গেলে আপনি ওই এলাকার ভোটার হয়ে যাবেন এবং পরবর্তীতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভোট দিতে পারবেন। তবে ভোটার এলাকা স্থানান্তর করলে অফিস থেকে আপনাকে নতুন কোন এনআইডি কার্ড দেবে না। ভোটার এলাকা স্থানান্তর হওয়ার পর অনলাইনে/অফিসে রিইস্যুর আবেদন/এনআইডি কার্ড উত্তোলনের আবেদন করে এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করতে হবে।
এখানে আরো একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, ভোটার আইডি কার্ডের তথ্যে একজন ব্যক্তির দুইটা ঠিকানা লেখা থাকে। একটি বর্তমান ঠিকানা আরেকটি স্থায়ী ঠিকানা। যখন কেউ ভোটার এলাকা স্থানান্তর করেন তখন অধিকাংশ সময়ই তার বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন হয় এবং স্থায়ী ঠিকানার স্থানে পূর্বের ঠিকানাই লেখা থাকে। এক্ষেত্রে সংশোধনের আবেদন করে ভোটার আইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা সংশোধন করে নিতে হয়।
সোনালীনিউজ/এন