ফুল বাজার জমজমাট, ৬০ কোটি টাকা বিক্রির সম্ভাবনা

  • যশোর প্রতিনিধি  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৪, ০৮:১০ পিএম
ছবি প্রতিনিধি

যশোর : ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর ফুলের বাজার জমে হয়ে উঠেছে। বাজারে হরেক রকমের দেশি-বিদেশি ফুল শোভা পাচ্ছে। যেদিকে চোখ পড়ছে সেদিকে ফুল আর ফুল। ক্রেতা-বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ফুল চাষিরা বলছেন, আর কয়েকদিন পরেই আসছে পহেলা ফাল্গুন বা বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে ফুলের ব্যাপক চাহিদা হবে। তিন দিবসে ৬০ কোটি টাকার বেশি বেচাকেনা হবে বলে ফুলচাষি ও বিক্রেতারা আশা করছেন।

ঝিকরগাছার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, গদখালি ও পানিসারা এলাকায় এবার ৬৩০ হেক্টর জমিতে ৭২ প্রজাতির ফুল চাষ হয়েছে। ফুল চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।

গদখালী ও পানিসারা অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে চাষীরা ফুলক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রয়োজনমাফিক পানি দেয়া, স্প্রে করা, আগাছা নিড়ানো, মরা-রোগাক্রান্ত গাছ তুলে ফেলাসহ ক্ষেত পরিচর্যায় তাদের দম ফেলবার সময় নেই। পাশাপাশি ক্ষেত থেকে ফুল তুলে নিয়ে ছুটছেন গদখালি ফুলবাজারে। দূর-দূরান্তের ক্রেতারাও হাজির হচ্ছেন সেখানে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণা আর হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠছে গোটা এলাকা। গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা ফুলের পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন শত শত ফুলচাষী। কেউ ভ্যান, কেউ সাইকেল বা ঝুড়ির মধ্যে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে ফুলের দাম নিয়ে হাক-ডাকে ব্যস্ত। ফুলের চাহিদা বাড়তি থাকায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি ফুল কিনছেন এই বাজার থেকে। একই সাথে বেশি দাম পাওয়ায় ফুল চাষীরাও বাজারে দ্বিগুণ ফুল এনেছেন। সবমিলিয়ে ফুল-বেচাকেনা জমে উঠায় ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের মনে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্যমতে, যশোরে প্রায় ৭ হাজার ফুলচাষি রয়েছেন। তারা অন্তত ৭ শতাধিক হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষ করেন। ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলার বিভিন্ন মাঠে ফুল চাষ হয়ে থাকে। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, ক্যালেন্ডোলা, চন্দ্র মল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ হচ্ছে। এই অঞ্চলের ফুলচাষিরাই দেশের ৭০ভাগ ফুলের চাহিদা মেটায়।

গদখালী ফুলবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে ফুলের বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। লাল গোলাপ ফুল প্রতি পিস ২০-২২ টাকা, চায়না গোলাপ লংস্টিক রোজ ৩০-৩৫ টাকা, ক্যাপ গোলাম ১০-১২ টাকা, রজনীগন্ধা স্টিক ১১-১২ টাকা, গ্লাডিওলাস ফুল রঙ ভেদে ১৪-১৫ টাকা, ভুট্টা ১১-১২ টাকা, জারবেরা প্রতিটি ১০-১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি চন্দ্রমল্লিকা ৩ থেকে ৪ টাকায়, গাঁদা প্রতি হাজার সাড়ে তিনশ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা, রডস্টিক প্রতি বান্ডিল ১৫০ টাকা, জিপসি ফুল প্রতি আঁটি ১০০ টাকা, মকমল ৪-৫ টাকা, ভ্যারাটিস ৭-৮ টাকা, হলুদ ১৪-১৫ টাকা, সিঁদুর ১৫ টাকা, বিশ্ব সুন্দরী ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গদখালী বাজার কমিটি ও গ্রায়ার্স সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল হোসেন জানায়, এবার ফুলের বাজার খুবই জমজমাট। ফুলের দামে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা খুবই খুশি।

ব্যবসায়ী মারুফ হোসেন জানান, তার ক্রয়কৃত ফুল তিনি চারটি জেলায় বিক্রি করবেন। ফুলচাষী হাবিবুর রহমান জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফুলের চাষ ও উৎপাদন ভাল হয়েছে। সামনের তিন উৎসব ঘিরে ফুলবাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। ভাল বেচাকেনা হচ্ছে।

যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপনন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, গতবছর বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশি ফুল বেচাকেনা হয়েছিল। এবার বেচাকেনা ৬০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

ওয়াইএ