যেখানে মাত্র ১০ টাকায় দুপুরের খাবার মেলে শিক্ষার্থীদের

  • সজীব আলম, লালমনিরহাট | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৪, ০৭:২৪ পিএম

লালমনিরহাট: প্রতিদিন সকাল থেকে টানা ক্লাস চলার পর দুপুরে অনেকটা ক্ষুধা নিয়েই কলেজের ক্লাসে বসে থাকতে হয় অনেক শিক্ষার্থীদের। আর তাই শিক্ষার্থীদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া আদর্শ কলেজে ‘টেন টাকা ফুড’ নামের একটি ক্যান্টিন প্রতিষ্ঠা করেছেন অধ্যক্ষ মোফাজ্জল হোসেন। এই ক্যান্টিনে মাত্র ১০ টাকায় দুপুরের খাবার খেতে পারেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে করে দুপুরের ক্ষুধা মিটিয়ে ক্লাসে আরও মনোযোগী হতে পারেন শিক্ষার্থীরা। ১০ টাকার এই খাদ্য তালিকায় রয়েছে সবজি-ডাল মিশ্রিত খিচুড়ি ও একটি করে ডিম।

সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত দইখাওয়া আদর্শ কলেজ। কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই এখানকার বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিকের পর উচ্চ শিক্ষার জন্য আর অন্যত্র উপজেলায় যেতে হয় না। কলেজে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট ৭০০ জন। তবে এখানকার ৯০ ভাগ শিক্ষার্থীই দরিদ্র পরিবারের। শিক্ষার্থীরা সকালে বের হওয়ার সময় অনেকেই বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসতে পারেন না। তাই কলেজ অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে কলেজেই ‘টেন টাকা ফুড’ নামে একটি ক্যান্টিন চালু করেন। সেখানে দুপুরে মাত্র ১০ টাকায় ডাল-ভাত ডিম খাবার সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

গত ছয় বছর ধরে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দুপুরে মাত্র ১০ টাকায় পেট ভরে খাবার খেতে পারছেন। কলেজ অধ্যক্ষের নিজস্ব অর্থায়ন আর বাহিরের দু’একজন বন্ধুর সহযোগীতায় চলে এ ১০ টাকার ফুড ক্যান্টিন।

এই বিষয়ে কথা হলে কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া শিক্ষার্থী সজল রায় জানান, আমাদের কলেজে একটি মানসম্মত ক্যান্টিন রয়েছে। এর ফলে বাইরের কোন খাবার খেতে হয় না। দুপুরে আমরা পেট ভরে খেতে পারি। খাওয়া শেষে আবারও মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করতে পারছি।

কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিদিন সকাল দশটায় কলেজ গেটে প্রবেশের সময় ১০ টাকা দিয়ে একটি টিকিট সংগ্রহ করেন তারা। দুপুর ১ টায় ওই টিকিট জমা দিয়েই তারা ক্যান্টিনে খাবার খেতে পারেন।

ক্যান্টিনে রান্নার দায়িত্বে থাকা মনোয়ারা বেগম বলেন, বাচ্চাদের রান্না করে খাওয়াই আমার অনেক ভালো লাগে। পাঁচ বছর ধরে এখানে রান্না করি। প্রতিদিন দুইশ থেকে আড়াইশো বাচ্চাকে রান্না করে খাওয়াই।

তবে বর্তমানে বাজারের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে খাবার জোগান দিতে গিয়ে হিমশিত খেতে হচ্ছে কলেজ অধ্যক্ষ মোফাজ্জাল হোসেনকে। তিনি বলেন, কলেজটি সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় অনেক দূর থেকে শিক্ষার্থীরা সকালে না খেয়ে সাইকেল চালিয়ে কলেজে আসে এবং সারাদিন কলেজে ক্লাস করে অনেকেই অসুস্থ ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সেই দিকটা চিন্তা করে আমি ২০১৮ সালের শুরুর দিকে এই ১০ টাকার ক্যান্টিনটি চালু করি। মাঝখানে করোনার সময় যখন কলেজ বন্ধ ছিলো, তখন ক্যান্টিনও বন্ধ ছিলো। তবে বর্তমানে বাজারের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় ১০ টাকায় তাদের একবেলা খাওয়াতে গিয়ে খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। এলাকার বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসতো, তাহলে শিক্ষার্থীদের খাবারে আমিষসহ পুষ্টির যোগান দেওয়া যেত। 

এসএস