চাকরির পেছনে না ছুটে থাই পেঁয়ারা চাষে লাখপতি তরুণ উদ্যোক্তা মোস্তাক আহমেদ

  • জনাব আলী, রাজশাহী | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৫, ০৩:৫২ পিএম
চাকরির পেছনে না ছুটে থাই পেঁয়ারা চাষে লাখপতি তরুণ উদ্যোক্তা মোস্তাক আহমেদ

রাজশাহী : রাজশাহীর নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএসএস (অনার্স) ডিগ্রী অর্জন করেছেন। পড়াশুনা করে চাকরি পেছনে ছুটেনি। নিজেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। অন্যদেরও তার পেয়ারা বাগানে কর্মসংস্থান দিয়েছেন।

বলছিলাম রাজশাহীর পবা উপজেলার তেবাড়িয়া গ্রামের সফল তরুণ উদ্যোক্তা মোস্তাক আহমেদ (ছোট) এর কথা। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে পেঁয়ারা চাষ করেই সফল হয়েছেন তিনি। শিক্ষিত এই যুবক পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নে বাণিজ্যিক ভাবে শুধুমাত্র পেঁয়ারা চাষ করেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। প্রতিমাসে প্রায় লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করেন তিনি।  তার দেখাদেখি এখন এই ইউনিয়নে আরো ৭-৮ জন নতুন ভাবে পেঁয়ারা চাষে উদ্ভুদ্ব হয়েছে।

মোস্তাক আহম্মেদ জানান, প্রথমে তিনি রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায় পেঁয়ারা চাষ শুরু করেছিলেন। কিন্তু গোদাগাড়ী উপজেলার মাটি বরেন্দ্র অঞ্চল হওয়ায় সেখানকার পেঁয়ারার উৎপাদন খুব একটা ভালো হয়না। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে তিনি তার নিজের এলাকা (পবার পারিলা ইউনিয়নে) জমি লিজ/বর্গা নিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে পেঁয়ারা চাষ শুরু করেন।

[242583]

তার উৎপাদিত পেঁয়ারা জাতের নাম থাই-৮। বড় সাইজের ৩ থেকে ৪ টা পেঁয়ারায় ১ কেজি পূর্ণ হয়। বর্তমানে তাঁর ৩টি বাগানে সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে প্রায় ১ হাজার ৩ শত পেঁয়ার গাছ রয়েছে।

বারোমাসি থাই পেয়ারার চারা এনে রোপণ করেন মোস্তাক আহমেদ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় মাত্র এক বছর বয়সী গাছের উচ্চতা দাঁড়িয়েছে আড়াই থেকে তিন ফুট। প্রতিটি গাছে ভালো ফল এসেছে। অসময়ের প্রতিটি পেঁয়ারা গাছে ঝুলছে ছোট বড় সাইজের হাজারো পেঁয়ারা। প্রতিটি পেয়ারা প্যাকেট জাত করায় পোকামাকড় দমনে কোন কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে না। এতে ফলের রং সুন্দর থাকে। কীটনাশক মুক্ত ফল উৎপাদনের পাশাপাশি বাগানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে কয়েকজন বেকার যুবকের।

বাগানে কাজ করা শ্রমিক আব্দুল মাজেদ বলেন, বাগানে কাজ করে বেকারত্ব দূর হয়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো আছি। আরেক শ্রমিক মো. আজমল মিয়া বলেন, বাগান রাস্তার পাশে অবস্থিত হওয়ায় দর্শনার্থীদের আনাগোনা বেশি।

প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় লোকজন নতুন জাতের এ পেয়ারার বাগান দেখতে আসছেন। এ রকম বাগান করার ইচ্ছে পোষণ করেন পারিলা ইউনিয়নের মারিয়া গ্রামের জব্বার আলী। তিনি বলেন, মারিয়া গ্রামের বাংলা বাড়ির পতিত জায়গায় বারোমাসি পেয়ারা স্বল্প পরিসরে চাষ করে তিনি সফল হয়েছেন।

[242561]

পেঁয়ারা চাষের বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তাক আহমেদ (ছোট) বলেন, “আমার কয়েকজন বন্ধু পেয়ারা চাষে সফল হয়েছিল। তাদের দেখাদেখি আমিও তাদের কাছে থেকে চারা কিনে পেঁয়ারা চাষ শুরু করি।

আমি প্রথমদিকে গোদাগাড়ী উপজেলায় পেঁয়ারার বাগান করি। তার পরে দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের কাছে পেঁয়ারার বাগান তৈরী করি। আমি দীর্ঘ ১১ বছর থেকে পেঁয়ারা চাষের সাথে জড়িত আছি। প্রথমদিকে পেয়ারা চাষে আমি অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয় পেয়ারা চাষ না জানার জন্য। প

রবর্তীতে আমি সব জেনে যখন চাষ শুরু করলাম তখন ১ বিঘা ২ কাঠা জমিতে ৩০৪ টি গাছ থেকে ৪ বছরে প্রায় আমি ১৮ লক্ষ টাকার পেয়ারা বিক্রি করেছি। অবশ্য এখানে কিছু খরচও ছিলো। তবে পেঁয়ারা চাষে যেমন লাভ করা যায় আবার আপনি যদি চাষ পদ্ধতি না জেনে চাষ করতে যান তখন কিন্তু ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়বেন। তাই এখন যারা নতুন উদোক্তা হতে চান তাদের উদ্দেশ্য আমি বলবো আপনারা আগে এই পেয়ারার চাষাবাদ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে তারপরে চাষ শুরু করবেন।”

তার বাগান থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২০০ কেজি পেয়ারা বিক্রি করতে পারছেন বলে জানান তিনি। প্রতি কেজি পেয়ারা পাইকারী দরে ৩০-৫০ টাকায় বিক্রি করছেন বলে জানান।

আকারে বড় ও সুস্বাদু এই পেয়ারা বছর জুড়ে ফলন হওয়ায় এর প্রতি কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। আর কম খরচে বেশি লাভের সুযোগ থাকায় এই পেঁয়ারা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে বেশ কিছু কৃষক উল্লেখ করে পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাসনিম বলেন, “থাই পেয়ারার উৎপাদন হয় মূলত রাজশাহী, নাটোর ও বরিশালসহ কয়েকটি এলাকায়। চারা লাগানোর এক বছরের মাথায় ফল আসে গাছে। একেকটি পেয়ারার ওজন আধা কেজি পর্যন্ত হয়। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ২৫ মেট্রিক টন।

পোকার আক্রমণ ঠেকাতে এবং গুণগত মান ধরে রাখার জন্য ব্যাগিং পদ্ধতিতে পেঁয়ারার চাষ করা হচ্ছে। পেয়ারা বিক্রির পাশাপাশি কলম চারা বিক্রি করে বাড়তি আয় হচ্ছে কৃষকদের। অধিকাংশে ছয় মাসের মধ্যে পেয়ারা ধরতে শুরু করে। বছর শেষে সব গাছেই পেঁয়ারা ধরে। একেকটি গাছে ১০-২০ কেজি পেয়ারা উৎপাদন হয়।

স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি  দেশের অন্যান্য জেলা বিশেষ করে ঢাকা, রংপুর ও চট্টগ্রামে এই পেয়ারা বাজারজাত করার সুযোগ রয়েছে। মৌসুমে প্রতি মণ পেয়ারা এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ ও অন্য সময় দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়।

এছাড়া কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। প্রতিটি চারা ৩০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়। ফলে পেয়ারার পাশাপাশি চারা বিক্রি করে অনেক টাকা মুনাফা করা সম্ভব হবে। এই পেয়ারার চাষে তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে রোদে ঝলসে যাওয়া কিংবা পোকার হাত থেকে রক্ষা পেতে ব্যাগিং পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে চাষিদের। এতে পেয়ারা গাছে ধরার পর পলিথিনের ব্যাগ দিয়ে পুরো পেয়ারা ঢেকে দেওয়া হয়। ফলে উৎপাদিত পেয়ারার গুণগত মান ভালো থাকে। রাজশাহীর আবহাওয়া ও মাটি থাই পেয়ারা চাষের জন্য উপযোগী। বন্যার সময়ও এই গাছের কোনো ক্ষতি হয় না। তাই বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে এই পেয়ারা চাষের।

এমটিআই