ঢাকা: ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে পে-স্কেলসহ ৭ দফা দাবি অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা।
দাবি আদায়ে শনিবার (৫ জুন) মানববন্ধন করেছেন তারা।ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচির কথা বলা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ১১ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারীদের দুঃখ-দুর্দশা এবং ক্ষোভ-বিক্ষোভের আলোচনা।
আরও পড়ুন<<>>ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সরকারি কর্মচারীরা
শরীফ আহমেদ নামের একজন সরকারি কর্মচারীদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন-যতই চাপাচাপি করুন কোন লাভ নেই! একমাত্র নির্বাহী প্রধান (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া সমস্যার সমাধান দেওয়ার কোন লোক ঐ ভূখণ্ডে নেই। ১১-২০ গ্রেডের জাতীয় পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহিত সাক্ষাৎ করে বিনয়ের সহিত উক্ত গ্রেডের কর্মচারীদেরকে শুভঙ্করের ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি তাঁকে অবগত করতে হবে। শুভঙ্করের ফাঁকি দেওয়ার সূচনা, পটভূমি, এর প্রতিফলন, বর্তমান কর্মচারীদের দুর্দশা, দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কারণ ইত্যাদি সম্পর্কে আলোকপাত করতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন বিধিমালার ভিত্তিতে পদোন্নতি, বেতন বৈষম্য ইত্যাদি বিষয়ে তাঁকে অবহিত করতে হবে। তবে যদি সূর্য দেখা যায়। পোস্ট আপনার ভালো না লাগলে এড়িয়ে চলুন। ধন্যবাদ
আরেকজন লিখেছেন-৫ বছর পর জাতীয় নির্বাচন এটা নাকি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা
বাট ৬ বছরেও পে-স্কেল পরিবর্তনের খবর নাই!
এটা কী?
আশফাকুল আশেকিন লিখেছেন-বাজারমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধগতি ও পারিবারিক ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করে দ্রুত ৯ম পে-কমিশন গঠন ও অবিলম্বে ৫০% মহার্ঘ ভাতার ঘোষণা চাই।
গোলাম মোস্তফা আকন্দ একটি পোস্টে মন্তব্য করেছেন-১২-২০ গ্রেডের সরকারী কর্মচারীরা আজ বঞ্চিত অবহেলিত, তাদের সংসারে আর্থিক টানাপোড়ন অভাব অনটন আজ নিত্যদিনের সঙ্গী আর কর্মকর্তাদের পোয়াবারো। এ ধরনের অমানবিক বৈষম্যর অবসান চাই।
আরও পড়ুন<<>>সরকারি জনবল নিয়োগ শুরু, বয়সসীমায় ছাড়
আরেকজনের মন্তব্য এরকম- বেতনের আকাশ পাতাল বৈষম্য থাকলেও দৈনন্দিন খরচে নেই খুব বেশি পার্থক্য। ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের মাসের ১৫ দিন না পার হতেই হতেই শুরু হয় টানাটানি। সংসারের খরচ নির্বাহ করতে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই স্ত্রী সন্তানকে গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
তিনটি মূল দাবি খুবই জরুরী বলে উল্লেখ করেছেন নাজিম উদ্দিন নামের একজন।
তিনি একটি মন্তব্যে লিখেছেন- ১. টাইমস্কেল,সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল ২. বেতন বৈষম্য দূরীকরণ ৩.মহার্ঘ ভাতার যৌক্তিক দাবী। এই ৩টি মূল দাবী নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বসার চেষ্টা করুন।
উল্লেখ্য, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ২০০৯ সালে সপ্তম জাতীয় পে-স্কেল প্রদান করা হয় এবং সর্বশেষ ২০১৫ সালে অষ্টম পে-স্কেল প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রদান করা হয়। বর্তমান সময়ে বাজার মূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি ও পারিবারিক ব্যয় বৃদ্ধির দরুণ ২০২১ সালে নবম জাতীয় পে-স্কেল প্রদান অনিবার্য হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন সরকারি কর্মচারীরা।
তাদের ৭দফা দাবিগুলো হলো-
১) জাতীয় স্থায়ী বেতন কমিশন গঠন পূর্বক বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ১৯৭৩ সনের ১০ ধাপে ৯ম পে-স্কেল বাস্তবায়ন করতে হবে। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের পার্থক্য ১:৫ হতে হবে। পূর্বের ন্যায় শতভাগ পেনশন প্রথা পূনঃবহাল করতে হবে।
২) এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি চালুসহ সচিবালয়ের ন্যায় সচিবালয়ের বাহিরের সরকারী কর্মচারীদের পদ ও বেতন বৈষম্য দুর করতে হবে। ব্লক পোষ্টধারীদের পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
৩) আউটসোর্সিং পদ্ধতি বাতিল পূর্বক উক্ত পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে হস্থান্তর করতে হবে। বিভিন্ন দপ্তর/প্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন খাতে কর্মরত কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে। ডাক বিভাগের প্রার্থী প্রথা চালুসহ মাস্টার রোল ও অন্যান্য দপ্তররে কর্মরত মাস্টার রোল, কন্টিজেন্স ও ওয়ার্কচার্জ কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে।
৪) সরকারি কর্মচারিদের পূর্বের ন্যায় ৩টি টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড ও বেতন সমতাকরণ পূনঃবহাল করতে হবে। জীবন যাত্রার মান সমুন্নত রাখার স্বার্থে ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে এবং দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধোগতির বিষয় বিবেচনা করে পেনশনের হার ৯০% থেকে ১০০% ও গ্রাইচ্যুইটির হার ১ টাকায় ২৩০ টাকার স্থলে ৪০০ টাকায় উন্নীত করণ করতে হবে।
৫) ৯ম পে-স্কেল প্রদানের পূর্ব পর্যন্ত দ্রব্য মূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধোগতির বিষয় বিবেচনা করে ৫০% মহার্ঘ ভাতা অবিলম্বে দিতে হবে।
৬) প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত কর্মচারীদের ন্যায় ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডের সরকারি কর্মচারিদের বিনা সুদে ৩০ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা গৃহনির্মাণ ঋণ দিতে হবে ও উন্নয়ন খাতের কর্মচারীদের যোগদানের দিন থেকে সিনিয়রিটি পাওয়ার জন্য করা রীট মামলার মহামান্য হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারীকৃত আদেশ অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
৭) চাকুরীতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর এবং অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৬২ বছর করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষার শিক্ষকদের ন্যায় অন্যান্য সকল দপ্তরে পোষ্য কোটা চালু করতে হবে।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সরকারর র্কমচারী সমন্বক আমজাদ আলী খান, কো-সমন্বয়ক বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আনোয়ারুল ইসলাম তোতাসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সোনালীনিউজ/আইএ