ঢাকা: গ্রুপের কেউ একজন সংসার চালানোতে তার কষ্টের কথা কিংবা বিদ্যমান বৈষম্যের কথা লিখে কিছু পোস্ট করলে কিছু সদস্য আছেন যারা পোস্টের উপর নেতিবাচক মন্তব্য নিয়ে হামলে পড়েন। আজকে তেমনই একটি পোস্ট দেখলাম। পোস্টটি ছিল এমন-
(বাজারে যারা তরকারি বিক্রি করে তারাও সরকারি কর্মচারিদের থেকে বেশি ইনকাম করে)
পোস্টে পজেটিভ মন্তব্যের পাশাপাশি অনেক নেগেটিভ মন্তব্য এসেছে। কেউ বলেছেন যান তরকারি বেচেন, কেউ বলেছেন আলহামদুলিল্লাহ বলেন (অবশ্যই আলহামদুলিল্লাহ বলা উচিৎ। কিন্তু এখানে তা বলা হয়েছে অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে।), কেউ বলেছেন তরকারি ওয়ালার সাথে তুলনা করা ঠিক হয়নি। কেউ আবার গালাগালিও করেছেন।
পছন্দসই পেশা কয়জন করতে পারে। জীবিকার তাগিদে কেউ হয়তো ব্যবসা করছেন, কেউ হয়তো সরকারি চাকরি করছেন, কেউবা হয়তো বেসরকারি চাকরি করছেন। নিজের পছন্দসই পেশা বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে অনেকেরই করা হয়ে উঠে না। তারপরও বলি চাকরিতে ঢুকার আগে যদি কেউ জানতে পারে যুগ পেরিয়ে যাবে তার টাইম স্কেল পাবে না, ১৮/২০ বছর চাকরি জীবন পার করেও সে প্রমোশনের দেখা পাবে না কিংবা বছরে তার ৫০০/৬০০ টাকা বাড়বে পক্ষান্তরের আরেকজনের বাড়বে ৩০০০/৪০০০ টাকা। এছাড়াও আরো অনেক বৈষম্য আছে। তাহলে কি সে এমন চাকরিতে যোগদান করতো? হয়তো তরকারিই বিক্রি করতো।
চাইলেই কেউ তার পেশা হঠাৎ করে পরিবর্তন করে ফেলতে পারে না। এগুলো কথার কথা উর্বর মস্তিস্কের ফালতু কথা।
বর্তমানের প্রেক্ষাপটে অনেক অনেক দপ্তরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিরাও কিন্তু মাস্টার্স পাশ। ভবিষ্যতে এর পরিমাণ আরো বাড়বে। কর্মকর্তা হয়তো ভালো রেজাল্ট দিয়ে কর্মকর্তা হয়েছেন অথবা মামা খালুর কল্যাণে কর্মকর্তা হয়েছেন। পক্ষান্তরে ভাগ্য সহায় না হওয়ায় বা মামা খালু না থাকায় ভালো রেজাল্ট নিয়েও হয়তো অনেক কর্মচারি তার কপালে কর্মকর্তার তকমা লাগাতে পারেনি। চাকরিতে যোগদানের সময় একজন কর্মকর্তা যেমন ফ্রেস থাকে তেমনি একজন কর্মচারিও থাকে ফ্রেস। কারো কোন কাজের অভিজ্ঞতা থাকে না। একজন কর্মকর্তা চাকরিতে যোগদানের পর সরকার নানাভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুযোগ সুবিধা প্রদান করে কর্মকর্তাকে কর্মকর্তা হিসেবে গড়ে তোলা। পক্ষান্তরে একজন কর্মচারি কোন প্রশিক্ষণের সুযোগ কি পায়? এখান হতেই বৈষম্যের শুরু। একজন কর্মচারি কর্মকর্তার মতো প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হলে, তাকে সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হলে সেও অফিসারের মতো ঠাট বাটের হতো। কয়জন কর্মকর্তার প্রমোশন আটকে থাকে? একই বাজারে বাজার করে সবাই।
ধরা যাক, ১-২০ গ্রেডের চাকুরেরা সবাই বাজারে গেল। তাদের মধ্যে ১নং গ্রেড বাজারে গেল ১০০ টাকা নিয়ে ২নং গ্রেড গেল ৯৮ টাকা নিয়ে এভাবে ক্রমান্নয়ে ১০নং গ্রেড গেল ৮০ টাকা নিয়ে। আবার ১১নং গ্রেড বাজারে গেল ৫০ টাকা নিয়ে এভাবে ক্রমান্নয়ে ২০নং গ্রেড বাজারে গেল ৩০ টাকা নিয়ে। এখন বাজার তো সম হারের। গ্রেড ভিত্তিক বাজার ব্যবস্থা তো নেই। এখন ভাবুন তো কার কেমন ক্রয় ক্ষমতা হবে? পেট তো সবারই সমান। জৈবিক চাহিদা তো প্রাকৃতিক। আয় কম বলে তো জৈবিক চাহিদা অপূর্ণ রাখতে পারবে না। কম খেলেও কতটকিু কম খেতে পারবে? তারও একটা সীমা রয়েছে। এখানে খেয়ে পড়েই তো বাঁচা কষ্টকর। অন্যান্য মৌলিক অধিকারের কথা বাদই দিলাম। আর এমনটা হয়েছে সরকারি বেতন বৈষম্যের কারণে। বেসরকারি বেতন কাঠামোর জন্য নয়। কারণ দেশ চলে সরকারি হিসাব মতে।
আগের প্রসঙ্গে আসি (Md Sagor এর পোস্ট প্রসঙ্গ)। অনেকেই মন্তব্য করেছেন তরকারি ওয়ালার সাথে তুলনা করায় সরকারি কর্মচারিদের অসন্মান করা হয়েছে। তরকারি বেচাটা অসন্মানের হবে কেন? হয়তো তরকারি ওয়ালার শিক্ষা না থাকতে পারে (থাকতেও পারে) কিন্তু তার পেশা তো হালাল এবং সৎ পথের। এখানে আত্মসন্মান নষ্ট হওয়ার কি আছে। আপনি আপনার জায়গা থেকে আপনার পেশাটাকে সন্মানের ভাবছেন। আর তা ভাবাও অন্যায়ের না। তেমনি তরকারি ওয়ালাও তার পেশাকে সন্মাসের ভাবে। আপনি আপনার জায়গা হতে তরকারি ওয়ালার পেশাকে অসন্মান করছেন। নিজেকে অতি উত্তম ভেবে অন্যকে ছোট করে দেখাই আমাদের দৈন্যতা। চাকরিটা না পেলে আপনি আমি হয়তো এমন পেশাই বেছে নিতাম। তখন সেটাই আমাদের কাছে সন্মানের হতো। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার আমাদের। যারা @Md Sagor এর পোষ্টে একমত হতে পারছেন না তারা হয়তো ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারি না। অথবা তারা সরকারি চাকরিই করেন না। তাদের তো এই গ্রুপে থাকাই উচিৎ না। তারা অনৈতিকভাবে এই গ্রুপে আছেন। অনৈতিকদের মুখে নীতির কথা মানায় না। আর যদি তারা ১১-২০ গ্রেডের হয়েও এ পোষ্টের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন তবে বুঝতে হবে তাদের অন্য কোন সোর্স অফ ইনকামের ব্যবস্থা আছে।
আমাদের সমস্যা এটা না যে কে কত আয় করল। আমাদের সমস্যা সরকারি কর্মচারি কর্মকর্তাদের মধ্যে বিদ্যমান বেতন বৈষম্যেসহ চাকরির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য। আকাশ পাতাল বৈষম্যই বাজার ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলে। নিচের গ্রেডের সৎ কর্মচারিরা সংসার চালাতে হিমশিম খায়। কারণ সর্বনিন্ম হার ধরে বাজার দর নির্ধারণ হয় না। আপনারা পোস্টের বিরোধীতা করে অসততাকে উৎসাহিত করছেন।
আল্লাহ সকলকে সঠিক বোধের তৌফিক দান করুণ। বৈষম্য নিরসনে সোচ্চার হউন, যে যেই মাজহাবেরই হন। আমিন?
সোনালীনিউজ/আইএ