স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ফাইল গায়েব, যা আছে তদন্ত প্রতিবেদনে

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২১, ১০:০৫ এএম
ফাইল ছবি

ঢাকা : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নথি গায়েবের জন্য কাউকে অভিযুক্ত না করেই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে দায়িত্বে অবহেলার জন্য দুজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়াসহ কয়েকটি সুপারিশ করেছে কমিটি। গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিবের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

খোয়া যাওয়া নথি উদ্ধারেও আপাতত ভাটা পড়েছে। এরই মধ্যে সেই ১৭ নথি নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে নথিগুলো গায়েব হয়েছিল গত ২৮ অক্টোবর।

গত ২৭ অক্টোবর অফিস সময়ে ক্রয় ও সংগ্রহ শাখা-২-এর একটি ফাইল কেবিনেটে ১৭টি নথি রাখা হয়। পরদিন দুপুরে কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় ফাইলগুলো নেই। ওই দিনই এ বিষয়ে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।  

জিডিতে বলা হয়, খোয়া যাওয়া নথিগুলোর মধ্যে রয়েছে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজসহ বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজের কেনাকাটাসংক্রান্ত নথি, ইলেকট্রনিক ডেটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচির তথ্য, নিপোর্টের কেনাকাটা, ট্রেনিং স্কুলের যানবাহন বরাদ্দ ও ক্রয়সংক্রান্ত নথি। এর বাইরেও নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক প্রকল্পের নথি ছিল।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নাদিরা হায়দারের করা জিডির পর বিষয়টি অলোচনায় আসে। ঘটনা তদন্তে নামে অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। তারা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সাঁটমুদ্রাক্ষরিক ও কম্পিউটার অপারেটর আয়েশা সিদ্দিকা, যোশেফ সর্দারসহ মোট ৯ জনকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর বাইরে রাজশাহী থেকে ঠিকাদার নাসিমুল গনি টোটনকেও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি।

একই সঙ্গে মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব মো. শাহ আলমকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্য করা হয় যুগ্ম সচিব আহসান কবির ও উপসচিব মোহাম্মদ আবদুল কাদেরকে। পরবর্তী সময়ে উপসচিব মল্লিকা খাতুনকেও যুক্ত করা হয়। চার সদস্যের তদন্ত কমিটি ওই বিভাগের ২৫-৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান জানান, তদন্ত কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। পরে আরো পাঁচ দিন সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার কমিটি তাদের প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দপ্তরে জমা দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কমিটি নথি গায়েবের সঙ্গে জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা নষ্ট থাকার কারণে ধরা পড়েনি কারো ছবিও। ফাইলগুলো সাঁটমুদ্রাক্ষরিক ও কম্পিউটার অপারেটর আয়েশা সিদ্দিকা ও যোশেফ সর্দারের দায়িত্বে ছিল। এ কারণে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে ফাইল ব্যবস্থাপনা কিভাবে সুরক্ষিত করা যায় এ বিষয়ে কয়েকটি সুপারিশ করেছে কমিটি।

নতুন করে ফাইল তৈরি : মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চুরি যাওয়া ১৭টি ফাইল এরই মধ্যে নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। ফাইলগুলোর সফটকপি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কম্পিউটারে ছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে কালের কণ্ঠকে বলেন, যে ফাইলগুলো খোয়া গেছে সেগুলো এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ছিল না যে সেগুলো না পাওয়া গেলে খুব ক্ষতি হবে। কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ওই ফাইলগুলো নতুন করে তৈরি করা হয়েছে।

ঘটনার পর পর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘হারিয়ে যাওয়া ফাইলগুলো তেমন গোপনীয় নয়। ফাইল হারিয়ে যাওয়াটাই বড় বিষয়। এগুলো ক্রয়সংক্রান্ত। প্রতিটা ফাইলের তথ্য আমাদের অন্যান্য বিভাগেও আছে, আমাদের কম্পিউটারেও আছে, আমাদের ডিজি অফিসগুলোতেও আছে। এটা নিয়ে তেমন সমস্যা না। মূল বিষয়টা হচ্ছে ফাইল মিসিং হওয়াটা। এটিই উদ্ধারের চেষ্টা করছি। ’

তবে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়ে কথা বলার জন্য গতকাল তাঁর দপ্তরে গেলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

সিআইডির তদন্ত অব্যাহত : সিআইডি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা অহিদ খান, মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী যোসেফ সর্দার, আয়েশা সিদ্দিকা, বাদল, বারী, মিন্টু, ফয়সাল, সেলিম ও হাবিবকে হেফাজতে নিয়ে তিন দিন জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়।

এরপর রাজশাহী থেকে ঠিকাদার নাসিমুল গনি টোটনকেও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তাঁকেও ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সিআইডির কর্মকর্তারা এই জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য জানাননি।

গতকাল সন্ধ্যায় জানতে চাইলে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, ‘তদন্ত চলছে। এর বেশি কিছু এখন বলা যাবে না।’ সূত্র: কালের কণ্ঠ।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ