নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে ‘চুপ থেকেও যেন সরব’ ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। এবারের নির্বাচন নিয়ে আগে থেকেই আলোচিত এই আওয়ামী লীগ নেতার মুখে ছিল তালা। আচরণবিধি ভঙ্গ হতে পারে এ শঙ্কায় গত ৩০ নভেম্বর নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর থেকেই একেবারে মুখে কুলুপ আঁটা। তার পরও সময়ে সময়ে বিতর্ক শামীম ওসমানের পিছু ছাড়েনি।
আরও পড়ুন : ‘ভোটের পরিবেশ এখনও ঠিক আছে, পরে কী হবে জানি না’
আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রথমে পরোক্ষভাবে এবং সর্বশেষ গত ৮ জানুয়ারি সরাসরি ভোটের মাঠে তাকে নিয়ে আসেন। অভিযোগ করে বসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার শামীমের প্রার্থী। আইভীর এই অভিযোগের দু'দিন পর ১০ জানুয়ারি দুপুরে নির্বাচন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নীরবতা ভাঙেন শামীম ওসমান। বলেন, ‘প্রার্থী কলা গাছ নাকি আম গাছ, যেই হোক না কেন নৌকার বিরুদ্ধে যাওয়ার সুযোগ নেই।’ শামীম ওসমানের এই বক্তব্যের পর কিছুটা স্বস্তি আসে আইভী শিবিরে।
নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী রাজনীতিতে শামীম ওসমানপন্থি নেতাই বেশি। আজ ভোটের দিন শামীম ওসমান ও তার অনুসারী আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা কে কোথায় থাকবেন, তা নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই নগরবাসীর। তবে আইভীপন্থিদের কাছ থেকে জানা গেছে, শামীম ওসমানপন্থিদের সন্দেহের তালিকায় রেখে তাদের ‘মাকাল ফল’বানিয়ে রাখা হয়েছে। ভোটের দিন তাদের কোনো দায়িত্বেই রাখা হয়নি। তাদের মাধ্যমে কোনো কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে সংবাদ সম্মেলন করে শামীম ওসমান নৌকার পক্ষে থাকার ঘোষণা দিলেও আদতে তা বিশ্বাস বা আমলে নেননি আওয়ামী লীগ প্রার্থী আইভী বা তার অনুসারী নেতারা।
নির্বাচনের দিন কোন নেতা কোথায় থাকবেন, কীভাবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং দায়িত্বে ওসমানপন্থি নেতারা আছেন কিনা জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সেলিনা হায়াৎ আইভীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, 'কেন্দ্র কমিটি' করে দেওয়া হয়েছে। সেই কমিটি কেন্দ্রে কাজ করবে। ওইসব কমিটিতে শামীম ওসমানপন্থি কিছু নেতাদেরও রাখা হয়েছে। তবে বড় পদধারী কাউকে রাখা হয়নি।
আইভীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আনিসুর রহমান দীপু বলেন, ‘দলের যাদের ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে তাদের ভোটের দিন নির্দিষ্ট কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।’ তবে তিনি আইভীর বাসায় বসে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবেন বলে জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শামীম ওসমান সিটি এলাকার ভোটারই নন। তিনি ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়নের ভোটার। ফলে তিনি ভোট দিতে আসার উছিলায়ও আজ নারায়ণগঞ্জ নগরে ঢুকবেন না। তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।
মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু বলেন, ‘ভোটের দিন তিনি নিজ এলাকা ১২ নম্বর ওয়ার্ডে থাকবেন। নির্ধারিত কোনো দায়িত্ব নেই। নৌকার জন্য কাজ করবেন।’
শামীম ওসমানপন্থি হিসেবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা জানান, ভোটের দিন তিনি সাধারণত তার নিজ ওয়ার্ড ১৩ নম্বরে অবস্থান করেন। আজও সেখানে থাকবেন। তবে তিনি নির্বাচনে নির্দিষ্ট কোনো দায়িত্বে নেই।
মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। শুক্রবার তিনি করোনা নেগেটিভ হয়েছেন। আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ইউনিয়ন পরিষদের ভোটার। আমাদের দলের প্রার্থীর কাছে আমরা অবিশ্বাসী। তাই ভোটের দিন আমাদের কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।’
নির্বাচনের দিনের দায়িত্ব সম্পর্কে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল বলেন, 'আমার ভোট ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে। আমি সেখানেই থাকব। নির্ধারিত কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি প্রার্থীর পক্ষ থেকে। তবে আমি যেখানেই থাকি না কেন নৌকার জন্য কাজ করব।’ সূত্র: সমকাল।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ