ঢাকা : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনীতি।
নির্বাচনকালীন সরকার, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনসহ (ইভিএম) গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে অনেকটা বিপরীত মেরুতে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সংকট নিরসনে প্রয়োজন দুই দলের আলোচনা বা সংলাপ। কিন্তু আপাতত সেই সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। উলটো নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে তাদের মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়ছে। দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ব্যস্ত বাগ্যুদ্ধে।
সেপ্টেম্বর থেকে রাজপথ দখল-পালটা দখলের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে আগামীতে রাজনীতি সংঘাতের পথেই যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
আগস্ট মাসে বিএনপি কর্মসূচি পালনের সময় আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, শোকের মাস শেষে সেপ্টেম্বর থেকে তারা মাঠে থাকবেন। তখন অন্য কাউকে মাঠে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে এ মাসেই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বিএনপির কর্মসূচিতে কোনো বাধা দেওয়া হবে না। এ মাসে দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিএনপি নেতারা বলেছেন, তারা মাঠে নেমেছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবেন না।
এদিকে কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত না থাকলেও প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে বাধা, এমনকি হামলার ঘটনা ঘটছে। এর পেছনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতি রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
তাদের মতে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় দলীয় মনোনয়ন ও আধিপত্য ধরে রাখতে স্থানীয় নেতারাই বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। এমনকি আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখেও অনেকে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে এসব ঘটনা ঘটাতে পারেন।
জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ইস্যুতে বড় দুই দলের বিপরীতমুখী অবস্থান রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত। দিন যত যাবে রাজপথ আরও উত্তপ্ত হবে। রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে সংঘাত। রাজনৈতিক সংঘাত বাড়লে তা দেশের অর্থনৈতিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে দেবে। যা কারও জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না।
তিনি বলেন, দেশের চরম সংকটকালে প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। বিরোধী দলের কর্মসূচিতে যাতে বাধা দেওয়া না হয় সে নির্দেশ তিনি দিয়েছেন। এখন তার এই নির্দেশ বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না সে দিকেও তাকেই নজর দিতে হবে। না হলে এটা খুবই খারাপ দিকে যাবে। কেউ যদি আমার ওপর আক্রমণ করে আমি যে তার ওপর পালটা আক্রমণ করব না তা তো নয়। এভাবে চলতে থাকলে দেশে চরম নৈরাজ্য হবে। এসব করলে আগামী নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাইলে বিরোধী পক্ষকে মাঠে থাকার সুযোগ দিতে হবে।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সংকট নিরসনে আলোচনা বা সংলাপের বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেই উদ্যোগ নিতে হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে সংলাপে বসতে হবে।
আওয়ামী লীগ : বিএনপির হুঙ্কার এবং আন্দোলন মোকাবিলায় পালটা প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মাঠ দখলে রাখতে আগামী মাস থেকে রাজপথ দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির নেতারা।
১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির উদ্দেশে বলেন, ‘খেলা হবে আগামী নির্বাচনে। খেলা হবে রাজপথে। খেলা হবে, মোকাবিলা হবে।’
একই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘আজকে তো শুধু নমুনা দেখালাম এই বিক্ষোভ সমাবেশ করে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বিএনপি-জামায়াতকে বঙ্গোপসাগরে ফেলব। যেখানেই বিএনপি-জামায়াত, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
১৩ আগস্ট চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় এক অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা রাজপথে এখনো নামিনি, আগামী মাসে পরিপূর্ণভাবে নামব। রাজপথে নামলে বিএনপি পালানোর জায়গা খুঁজে পাবে না।’
বিএনপি : মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ধাপে ধাপে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায়। তৃণমূল থেকে শুরু হওয়া এ আন্দোলন সামনে আরও বেগবান করার ঘোষণা দিয়েছে। যত বাধাই আসুক এবার রাজপথ থেকে সরবে না তারা।
১১ আগস্ট রাজধানীর নয়াপল্টনে এক সমাবেশে সরকার হটাতে নেতাকর্মীদের রাজপথ দখলের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘লড়াই শুরু হয়েছে।
এ লড়াই আমাদের প্রাণের লড়াই, বেঁচে থাকার লড়াই এবং দেশ রক্ষার লড়াই। দেশের ১৮ কোটি মানুষের বাঁচার লড়াই। রাজপথের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে অবশ্যই এই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারকে সরাব।’
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নেতাকর্মীদের আন্দোলনে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না, এই সিদ্বান্তে অটল থাকতে হবে। কাজের মাধ্যমে এখন থেকেই যেন জনগণ সেই বার্তা পায়। আমাদের সাহসী হতে হবে। আঘাত আসলে পালটা আঘাত করতে হবে। রাজপথে সক্রিয় থেকে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে।’ সূত্র : যুগান্তর
সোনালীনিউজ/এমটিআই