বাজার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব

জনজীবনে বিরূপ প্রভাব নিয়ে শঙ্কা

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪, ০৪:১০ পিএম

ঢাকা : বিদেশিরা কী করল, কী করল না তা নিয়ে ভাবছে না সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারকদের দাবি, তাদের ভাবনায় এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে লাগাম টেনে ধরা। যেকোনো মূল্যে নাগালের বাইরে চলে যাওয়া নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে চায় সরকার। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে জনজীবনের বিরূপ প্রভাব নানামুখী বেকায়দায় ফেলে দিতে পারে সরকারকে।

এই ভাবনা থেকে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা এবং প্রয়োজন হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বৈঠক করবেন। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। বাজার নিয়ে নয়ছয় করা ব্যবসায়ীদের শাস্তির ধরন নিয়ে সরকারের চিন্তা আছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ নেতাদের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল হক টিটু বলেন, ‘বাজার ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এজন্য সরকারের কিছু প্যাকেজ পরিকল্পনাও রয়েছে।’

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, সাধারণ মানুষের ভেতর থেকে চাপা ক্ষোভ-বিক্ষোভ বড় ধরনের প্রতিবাদ সৃষ্টি করতে পারে। মাঠে-ঘাটে সরকারের সমালোচনা বাড়ার দুশ্চিন্তাও করছে ক্ষমতাসীনরা।

দলটির নেতারা মনে করেন, সাধারণ মানুষের ভোগান্তি পুঁজি করে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষরা মাঠে আসার চেষ্টা করবে। তাদের পক্ষে জনসমর্থন চলে যেতে পারে। এতে বেকায়দায় পড়ে যেতে পারে সরকার। এসব দিক ভেবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখাকেই বেশি গুরুত্ব ধরে দিচ্ছে আওয়ামী লীগও। চ্যালেঞ্জও মনে করছেন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।

আগামী মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে রোজা শুরু হচ্ছে। তার আগে চাল, পেঁয়াজ, ডিমসহ নিত্যপণ্যের বাজারে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে।

[216798]

এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ে তারা চিন্তিত। বিএনপি নির্বাচনের প্রতিক্রিয়া নিয়ে কী বলবে, কী করবে তা নিয়ে আওয়ামী লীগ বিচলিত নয়। তিনি বলেছেন, ‘আমরা বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য নিয়ে চিন্তিত।’

ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে স্বস্তিও প্রকাশ করেছেন তিনি।

কাদের বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতার মধ্যেও জনগণের হাহাকার নেই। জনগণের পক্ষ থেকে কোনো বিক্ষুব্ধ আমরা লক্ষ করিনি। সবাই স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। আমাদের দায়িত্ব যেটা আমরা সেটা পালন করছি। আমাদের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন এ বিষয়টি নিয়ে ভাবিত।’

সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ে কঠোর অবস্থানের কথা যখন জানায়, তখনই দাম বেড়ে যায়। এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি তো এ কথা বলিনি আগামীকালই দ্রব্যমূল্য কমে যাবে। আমি বলেছি নিয়ন্ত্রণের সর্বোচ্চ চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি। এর অর্থ কি আগামীকাল কমে যাবে? সে আশা দেওয়ার ক্ষমতা আছে আমার? এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা আমার মুখ দিয়ে অন্তত বের হবে না।’

আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা বলেন, আগামী মাস পবিত্র রমজান মাস। এ মাসে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি ক্ষুব্ধ করে তুলবে। তাই এবার রমজান মাসকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীদের কারসাজি বরদাশত করবে না সরকার।

তারা বলেন, অস্বাভাবিক পরিস্থিতি জয় করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করে ক্ষমতায় আসতে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশলে পরাজিত হওয়া প্রতিপক্ষরা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চক্রান্ত থেকে এখনো সরে আসেনি। সুযোগ পেলেই কাজে লাগিয়ে ফায়দা হাসিল করার চেষ্টা করবে বিএনপিসহ তাদের সমমনারা। তাই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কোনোভাবেই ব্যর্থ হওয়া যাবে না। ব্যর্থ হলেই সংকট শুরু হবে এবং দীর্ঘ হবে তা।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলে সাধারণ মানুষ বিগড়ে যাবে। এ বিগড়ানো মানুষের ‘সেন্টিমেন্ট’ পুঁজি করে দেশি-বিদেশি বিশেষ মহল ও গোষ্ঠী সরকারকে-আওয়ামী লীগকে অস্থির করে তুলবে।

দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, বিএনপি কী করল, বিদেশিরা সমর্থন দিল কি দিল না, তার চেয়ে সরকারের কাছে বেশি গুরুত্বের নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা।

তারা বলেন, মজুদদার, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছেন। শুধু নির্দেশনা দিয়ে বসে নেই, তিনি এ অভিযান মনিটরিংও করছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘সিন্ডিকেটের কবজা থেকে বাজার মুক্ত করতে চান প্রধানমন্ত্রী। মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের মূল্য আকাশচুম্বী করার কারসাজিতে যুক্ত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। শাস্তিও কার্যকর করা হবে।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। বিদেশি চক্রান্তে পা দিয়ে ব্যবসায়ীদের একটি মহল দেশের জনগণকে খেপিয়ে তুলতে দ্রব্যমূল্য নিয়ে কারসাজি করছে।

পবিত্র রমজান মাসকে টার্গেট করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে জনগণকে রাস্তায় নামানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সরকার সেই অপচেষ্টা নসাৎ করতে বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে মজুদদার চক্রকে চিহ্নিত করা শুরু করেছে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে তাৎক্ষণিক দাম বাড়ানোর চক্রও খুঁজে বের করেছে। বাজার ব্যবস্থা স্থিতিশীল না থাকলে চিহ্নিত করা ওইসব ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় আনা হবে।

সভাপতিমণ্ডলীর ওই সদস্য বলেন, আমদানিতে শিথিলতার সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। উৎপাদনেও উদারনীতি রয়েছে সরকারের। তবুও বাজারকে হঠাৎ অস্থির করে তোলার মানেই হলো চক্রান্ত।

সরকারি দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘বাজারে সংকট সৃষ্টি করে জনজীবনে অস্থির করে তোলার চক্রান্ত সফল হতে দেব না আমরা।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি সুযোগ খুঁজছে সংকট সৃষ্টি করে বৈরী পরিবেশে দেশকে ও দেশের মানুষকে বেকায়দায় ফেলতে। আমরা সতর্ক, সরকার সতর্ক। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে।’ সূত্র : দেশ রূপান্তর

এমটিআই