ঢাকা : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির তরফ থেকে তেমন কোনো বাধা পায়নি আওয়ামী লীগ সরকার। এখন মাঠেও তাদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় বিএনপি নতুন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার চেষ্টা করছে। কিন্তু দলটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্যাকেজ পরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়টি জানা গেছে।
সরকারবিরোধী কর্মসূচি দুর্বল করতে আওয়ামী লীগ বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা করার পরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে বলে নেতারা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, নতুন মামলার উপাদান জোগাড় করা হবে বিএনপির ডাকা কর্মসূচির মধ্য থেকেই।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দুই বছরের বেশি সময় ধরে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি ভোট বর্জন করে। এর আগে গত বছর ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে সহিংসতার ঘটনায় দলটির মহাসচিবসহ শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর টানা দুই মাস হরতাল-অবরোধের মতো আন্দোলন করলেও সহিংসতার ঘটনায় ধরপাকড়ে একপর্যায়ে নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে। এরপর নির্বাচনে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেন, নির্বাচনবিরোধী আন্দোলন করার সময় যেসব মামলা হয়েছে, সেই সব মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামির ঘরে বিএনপির আরও নেতাকর্মীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এই নেতারা আরও বলেন, আগামী পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগের চলার রাস্তা নিষ্কণ্টক রাখতে চাইলে এর কোনো বিকল্প নেই দলটির হাতে।
[217364]
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, গত শনিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।
দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে গণভবনে ডেকে বিশেষ বর্ধিত সভা করে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এবার একটা ভালো কাজ করেছে বিএনপি। সেটি কী, আগে বিএনপি চুপিসারে আগুন দিত গাড়িতে, রেলে, সব জায়গায়। এবার তারা প্রকাশ্যে দিয়ে আবার ছবি তোলে। তাদের গুরু লন্ডন থেকে বলে দিয়েছেন যে ছবি পাঠাতে হবে এ জন্য প্রকাশ্যে আগুন দিত তারা।
তাতে সুবিধা হয়ে গেছে, তারা যে আগুন দিচ্ছে সেই ছবি আর এভিডেন্সটা সহজে পাওয়া যাচ্ছে। যে যে এলাকায় এই ঘটনাগুলো ঘটেছে, এগুলো জোগাড় করে...। এই মামলাগুলো যেন ঠিকমতো চলে এবং শাস্তিটা যেন পায়। তাদের নেতাই তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কাকে দোষ দেবে? নেতাকে খুশি করতে ছবি তুলেছে, পাঠিয়েছে। এখন ডিজিটাল সিস্টেমে সেভাবে এভিডেন্সগুলো এসেছে।’
বিশেষ বর্ধিত সভার বক্তব্যে নতুন মামলার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে বলে জানান টানা চারবার ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা। তারা বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন শেষে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যে হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছে, সেখান থেকে বের হওয়ার সুযোগ দিতে চান না তারা।
ক্ষমতাসীন দলের এই নেতারা বলছেন, বিএনপির নীতিনির্ধারকরা কর্মসূচির নামে কর্মী-সমর্থকদের হতাশা দূর করতে কর্মসূচির গ্রহণ করেছেন। এই তৎপরতায় সফল হতে দেওয়া যাবে না বিএনপিকে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘বিএনপি সোজা পথে চললে রাজনীতি করতে পারবে। বাঁকা পথে চললে আওয়ামী লীগ বাঁকা পথেই বিএনপিকে মোকাবিলা করবে। হিসাব মেলাতে হবে বিএনপিকেই।’
[216903]
দলটির আরেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বন্ধ না করলে এ দেশের জনগণ বরাবরই তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। আওয়ামী লীগও উপযুক্ত জবাব দেবে বিএনপিকে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের ভেতরে একটা সময়ে ভীতির সৃষ্টি করতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কিছু কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ভীতি কেটে যায়। ফলে সফল কিছু কর্মসূচি পালন করতে পেরেছে দলটি। তাই বিএনপিকে দুর্বল করতে হলে চাপে রাখার নীতি অনুসরণ করে চলতে হবে অন্তত এক বছর।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘এবার নির্বাচন করে ফেলে আওয়ামী লীগ ঝামেলাহীনভাবে ক্ষমতায় থাকায় বিএনপির বড় অংশের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। বিএনপি কিছু করতে পারবে না, দলটির শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতার মধ্যে এমন নিরাশার কথাও আছে। বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের হতাশার মধ্যে রাখতেই আওয়ামী লীগকে কঠোর অবস্থান বজায় রাখতে হবে।’
দলটির সম্পাদকম-লীর এক সদস্য বলেন, বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীর মনোবলে চিড় ধরানোর জন্য মূলত নতুন মামলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। এই পরিকল্পনা বিএনপিকে ধীরে ধীরে ‘ছোট’ করে ফেলার কৌশল। তিনি বলেন, সংগঠন হিসেবে আগামী নির্বাচনে বিএনপি যাতে ফ্যাক্টর হিসেবে থাকতে না পারে, সে জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তারা।
[217294]
সম্পাদকমন্ডলীর এই নেতা আরও বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছর বিএনপিকে নিয়ে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা হলো- বিএনপিকে টিকে থাকতে হলে তারেকমুক্ত বিএনপি হতে হবে। আওয়ামী লীগ মনে করে, তারেকের নেতৃত্বাধীন বিএনপি দেশের ও দেশের মানুষের জন্য অনিরাপদ।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘বিএনপির ধ্বংসাত্মক রাজনীতি দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে টানা চতুর্থবার। মানুষ আস্থা রাখছে আওয়ামী লীগের ওপর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করছেন। সেখানে কেউ ব্যাঘাত ঘটাতে চাইলে ছাড় দেওয়া হবে না। ধ্বংসাত্মক রাজনীতির অপচেষ্টা করা হলে রাজনৈতিকভাবে, প্রশাসনিক ও সামাজিকভাবে প্রতিহত করা হবে বিএনপিকে।’ সূত্র : দেশ রূপান্তর
এমটিআই