হঠাৎ পুলিশ ‘নেতা’ বনে যাওয়া জয়ের হুংকার থেমে গেছে রিমান্ডে

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪, ০৩:৪৭ পিএম

ঢাকা: কনস্টেবল শোয়াইবুর রহমান জয়। চাকরি করছেন ১৬ বছর ধরে। এরমধ্যে ১২ বছর তিনি ইউনিফর্মে কোনো ডিউটি করেননি। পুলিশ নাট্যদলের অভিনেতা হিসাবে শেখ কামালের চরিত্রে অভিনয় করতেন। অভিনয় করতে করতে বাস্তবেও তিনি ছিলেন শেখ কামালের ভূমিকায়। শেখ কামালের মতোই গোঁফ। বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে তিনি শুভেচ্ছা জানিয়ে যেসব পোস্টার ও ব্যনার তৈরি করেছেন সেগুলোর মূল স্লোগান ছিল-‘জয় বাংলা/জয় বঙ্গবন্ধু’।

পোস্টার-ব্যানারের ওপরের দিকে শোভা পেত শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি। প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসাবে তার এ ধরনের পোস্টার ব্যানার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সমালোচনা হলেও এতদিন তার কিছুই হয়নি। 

[231699]

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশে বিদ্রোহের চেষ্টা হয়েছিল জয়ের নেতৃত্বেই। তিনি সিনিয়র পুলিশ সদস্যদের কোনো তোয়ক্কা করতেন না। এমনকি আইজিপিকে তিনি ডাকতেন ‘আইজি সাব’ বলে। ‘পরাক্রমশালী’ এই কনস্টেবল অবশেষ ধরা পড়েছেন। 

রোববার তাকে গ্রেপ্তারের পর সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর আদালতেও তিনি দিয়েছেন হুংকার। তবে রিমান্ডে নেওয়ার পর থেমে গেছে সেই হুংকার। তিনি অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন। 

[229799]

রিমান্ডে জয়ের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যে নতুন সরকার গঠন করা হয় সেই সরকারকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। জয় জানিয়েছে, ১৫ বছরে পুলিশে বেশকিছু লোক তৈরি হয়েছে, যারা পুলিশের পোশাক পরলেও কাজ করেছেন দলীয় নেতাদের মতো। তারা পুলিশ নামধারী মটিভেটেড দলীয় কর্মী। সরকার পতনের পর ওইসব পুলিশ সদস্যই পুলিশে বিদ্বেষ ছড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে। তাদের নির্দেশেই তিনি পুলিশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছেন।

রিমান্ডে জয় জানিয়েছেন, ডিএমপির সাবেক কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশনা পেয়েই তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেন। সরকার পতনের পর পরই রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বিদ্রোহের চেষ্টা চালিয়েছেন। আইজিপি ময়নুল ইসলাম ও ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসানসহ সিনিয়র কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে আশ্বস্ত করার পরও কেন রাজারবাগ অশান্ত ছিল-এমন প্রশ্নের জবাবে জয় ডিবিকে জানিয়েছে, ‘বিশেষ উদ্দেশেই পুলিশে অস্থিরতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল।’ রাজারবাগে আন্দোলন জোরদার করতে এসপি ও ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মোবাইলে ফোন করেও আন্দোলনে যোগদান করার জন্য হুমকি দেওয়া হয় বলে জয় স্বীকার করেছেন।

[229700]

পুলিশ জানিয়েছে, জয় ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে উসকানিমূলক বার্তা পোস্ট দিয়েছে। হঠাৎ পুলিশের ‘নেতা’ বনে যাওয়া কনস্টেবল জয়ের অতীত কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ডিবি জানায়, পুলিশের পলাতক শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিচার এবং তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার দাবি যখন জোরালো হচ্ছে তখন নেতা সেজে সারা দেশের পুলিশ সদস্যদের বিভ্রান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছেন জয়।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর পুলিশের একাংশের কর্মবিরতি চলাকালে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জয়ের বার্তা ছিল, ‘কর্মবিরতি চলছে, চলবে; কেউ গায়ে ইউনিফর্ম লাগাবেন না, নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে লাইনে সিভিল পোশাকে ডিউটি চলবে, লাইনের বাইরে কেউ ডিউটিতে যাবেন না, যে যেখানে আছেন সে সেখানে অবস্থান করবেন, ঢাকার মধ্যে যারা আছেন তারা রাজারবাগে উপস্থিত হবেন, ১১ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে-ভয়, হুমকি, গরহাজির একযোগে প্রতিহত করবেন।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) ফারুক আহমেদ বলেন, পুলিশে চাকরি করতে হলে অবশ্যই শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। এটা সিবিএ অফিস না। যখন তখন আন্দোলনে নামা যাবে না। অনেকের দাবি-দাওয়া থাকতে পারে। সেগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করতে হবে। পুলিশের কল্যাণে যা যা প্রয়োজন সবই করা হবে। কিন্তু বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না। তিনি বলেন, সামনের দিনগুলোতে পুলিশিং হবে জনগণের। যারা জনবান্ধব পুলিশিং করতে চায়, তারাই টিকে থাকবে। আর যারা কোনো বিশেষ দলের হয়ে কাজ করতে চায় তাদের জন্য পুলিশিং না। তারা চাইলে চাকরি ছেড়ে রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে পারেন। 

সূত্র-যুগান্তর

আইএ