ঢাকা : দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই বাড়ছে। জুলাইয়ের ১৬ দিনেই ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২ হাজার ৯০০ জন এবং মারা গেছেন ৫৯ জন। গেল ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৪২৪ জন আর মারা গেছেন ৬ জন। দিন যত যাচ্ছে ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মনে করে, দেশে এখন ডেঙ্গুর ‘জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ চলছে। এটি জাতীয় উদ্বেগের বিষয়।
তবে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, এখনো জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা দেয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। ডেঙ্গু উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে গেলে জারি করা হতে পারে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে রোববার (১৬ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ব্রিফিং ও বিএমএ বৈজ্ঞানিক সেমিনার করে। অধিদপ্তরের ব্রিফিংয়ে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে পাবলিক হেলথ ইমারজেন্সি ঘোষণা করার মতো অবস্থা হয়েছে-আমি এখনো এটা মনে করি না। কারণ, ২০০০ সাল থেকে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ হচ্ছে। ডেঙ্গুর ম্যানেজমেন্টের একটা স্ট্যান্ডার্ড প্রটোকল আছে। এই প্রটোকল অনুসরণ করলে ডেঙ্গুতে ক্যাজুয়ালটি কমানো সম্ভব। ডেঙ্গুতে সমস্যা হচ্ছে যখন হাসপাতালে রোগী আসেন, তখন শকড হয়ে তারা আসেন।
সচিব আরও বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানো যাচ্ছে না, আমরা এর ঊর্ধ্বগতিই দেখছি। ডেঙ্গুর ধরন বদলে যাচ্ছে, আমরা গবেষণা বাড়াতে বলেছি। এখনই কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। কোন ধরনের ওষুধ কোন মাত্রায় মশা নিধনে কার্যকর তা দেখতে বলেছি। নতুন কিছু থাকলে তা নিয়ে আসতে হবে। ডেঙ্গুতে সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ আসছে।
তিনি বলেন, শকড রোগীকে ম্যানেজ করা কষ্ট হয়ে যায়। আমরা যেটা চেষ্টা করছি, সেটা হলো পরিবার পর্যায়ে অর্থাৎ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে অবস্থানকালীন সময়ে শকড পর্যন্ত যাতে না যায়। জ্বর হলে চিকিৎসার পর জ্বর ছেড়ে গেলে তখন যেন দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। জ্বর আসার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা উচিত। ডেঙ্গু না হলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
আর যদি পজিটিভ হয়, তাহলে জ্বর ছেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর একটা ম্যানেজমেন্টের প্রয়োজন হয়। সেই ম্যানেজমেন্ট হাসপাতালেও করা যায়, বাড়িতেও করা যায়। এটার জন্য যে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে আছে, এমন কিছু আমি বলছি না। তারপরও আমরা অ্যানালাইসিস (পর্যালোচনা) করে দেখব।
ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ‘পাবলিক হেলথ ইমারজেন্সি’ ঘোষণা করার মতো অবস্থায় এখনো আমরা যাইনি বলে মনে করি। এর আগে দেশে যখন করোনা পরিস্থিতি ছিল, তখন সেটা করা হয়েছিল। এবারও হয়তো সেটা করা হবে, তবে এটি করার জন্য পলিসি লেভেলে (নীতিনির্ধারক পর্যায়) কথা হতে হবে। আমরা আমাদের শঙ্কার বিষয়ে জানিয়েছি, যারা সুপারিশ করেছেন, তাদের কথাও আমলে নিচ্ছি।
[203191]
অন্যদিকে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সংশ্লিষ্টরা জানায়, দেশে এখন ডেঙ্গুর জনস্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতি চলছে। রোববার রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণবিষয়ক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বিশেষজ্ঞ ও বিএমএ নেতারা এসব কথা বলেন। সেমিনারে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
প্রথম প্রবন্ধে বিএমএ’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ২০২২ ও ২০২৩ সালের মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণের মধ্যে কোনো বিরতি ছিল না। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জনঘনত্ব, গ্রাম ও শহরে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে খারাপ করেছে। এবার ডেঙ্গুর চারটি ধরনেই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। যা জাতীয় উদ্বেগের কারণ। এখন জনস্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতি চলছে।
তিনি বলেন, জুন ৬৬ ডেঙ্গু রোগীর সার্ভেলেন্সে জানা গেছে, ডেঙ্গুর ডেন-টু দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এতে সংক্রমণের হার ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ। ডেন-থ্রি দ্বারা ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশ ও ডেন টু ও ডেন থ্রি উভয় দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।
সেমিনারে দ্বিতীয় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট বাতরোগ বিশেষজ্ঞ ও বিএমএর মেডিকেল জার্নালের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক।
[203218]
ডেঙ্গুর বিভিন্ন উপসর্গ বর্ণনা করে তিনি বলেন, চিকিৎসকদের উচিত ডেঙ্গুর চিকিৎসাবিধি বা প্রটোকল অনুসরণ করে চিকিৎসা দেওয়া। ডেঙ্গু পরীক্ষা এনএস-ওয়ান পজিটিভ থাকে জ্বর হওয়ার প্রথম তিন থেকে চার দিন। তাই জ্বরের তিন দিনের মধ্যেই রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। কারণ পঞ্চম দিন থেকে নেগেটিভ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বিএমএর সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আরও সময় দিতে হবে। সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ডেঙ্গুর ব্যাপারে আরও সক্রিয় ও সোচ্চার হতে হবে।
একদিনে ১৪২৪ জন হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যু ৬ : এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১ হাজার ৪২৪ জন সারা দেশের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময় মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। এ নিয়ে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ২০ হাজর ৮৮৭ জনে দাঁড়াল। আর মৃতের সংখ্যা হলো ১০৬ জন। ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ৭৪১ জন ভর্তি এবং ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকার বাইরে ৬৮৩ জন ভর্তি এবং দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সারা দেশে ১ হাজার ৪১০ জন সুস্থ হয়েছেন।
সোনালীনিউজ/এমটিআই