নিউমোনিয়া কেন হয়, লক্ষণ কি এবং প্রতিকার-প্রতিরোধ

  • স্বাস্থ্য ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৩, ০৩:৪২ পিএম

ঢাকা : নিউমোনিয়া হল এক ধরনের ফুসফুসের প্রদাহ। মানবদেহের ফুসফুসের আলভিওলি বা ছোট ছোট বায়ু থলিতে জীবাণুর সংক্রমণের ফলে এই প্রদাহের সৃষ্টি হয়।

ফুসফুসের বায়ু থলিতে তরল বা কফ দিয়ে পূর্ণ হওয়ার ফলে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, জ্বর এবং কাশি (প্রায়শই কফ সহ) এর মতো উপসর্গ দেখা দেয়।

নিউমোনিয়ার জীবাণু সাধারণত মানুষের ফুসফুস এবং শ্বাসতন্ত্রকে আক্রান্ত করে। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস এবং টিবি'র জীবাণুর মাধ্যমে নিউমোনিয়া ছড়ায়।

নিউমোনিয়ার প্রকার

১. ভাইরাল নিউমোনিয়া

ভাইরাল নিউমোনিয়া হল সবচেয়ে সাধারণ ধরন। ভাইরাসের আক্রমণে এই ধরনের নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। সাধারণত শিশু এবং বয়স্করা এতে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

২. ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া

সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে এই ধরনের নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। প্রাথমিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়ার চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। সর্দি বা ফ্লু হওয়ার পড়ে নিজে থেকে এই ধরনের সংক্রমণ হয়ে থাকে।

[206154]

নিউমোনিয়ার লক্ষণ

১. দ্রুত হৃৎস্পন্দন

২. শ্বাসকষ্ট

৩. কফসহ কাশি

৪. দুর্বল বা অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করা

৫. ঠান্ডা লাগা বা সর্দি

৬. বুকে ব্যথা, বিশেষ করে শ্বাস নেওয়ার সময়

৭. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া

৮. ডায়রিয়া

নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বেশি যাদের

৬৫ বছরের বেশি মানুষ

২ বছরের কম বয়সী শিশু

গর্ভবতী মহিলা

ধূমপায়ী

হাঁপানি, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের রোগ বা হৃদরোগে আক্রান্তরা

অটোইমিউন ডিজিজ, এইচআইভি/এইডস বা কেমোথেরাপি নিচ্ছেন এমন রোগীরা

হাসপাতালে ভর্তি গুরুত্বর অসুস্থ ব্যক্তি

[206147]

কখন ডাক্তার দেখানো উচিত

সাধারণত বেশীরভাগ নিউমোনিয়া প্রাথমিক চিকিৎসায় সেরে উঠে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা মারাত্মক পর্যায়ে রূপ নেয়। তাই কিছু লক্ষণ রয়েছে যা দেখে বুঝতে হবে যে রোগটি মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেছে।

শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া

টানা ১০২ ডিগ্রি বা তার বেশি জ্বর

বুক ব্যাথা

কফসহ অনবরত কাশি

উপরোক্ত লক্ষণগুলো চরম পর্যায়ে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

নিউমোনিয়ার কিছু ঘরোয়া প্রতিকার

১. লবণ পানি দিয়ে গার্গল

প্রাথমিকভাবে হালকা গরম পানিতে লবণ দিয়ে গার্গল করা গলার কিছু শ্লেষ্মা বা কফ অপসারণ করতে সাহায্য করে এবং ব্যথা বা জ্বালাপোড়া ভাব উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।

২. পিপারমিন্ট চা পান

পিপারমিন্ট জ্বালা উপশম করতে এবং কফ বের করে দিতেও সাহায্য করে। এটি একটি কার্যকর ডিকনজেস্ট্যান্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং ব্যথানাশক উপাদান। তাই চায়ের সাথে পুদিনা পাতা মিশিয়ে খাওয়া যায় অথবা পিপারমিন্টের ঘ্রাণ নিয়েও কিছুটা কষ্ট লাঘব করা যায়।

৩. কফি পান করা

নিউমোনিয়ায় শ্বাসকষ্ট হলে অনেক সময় কফি পান শ্বাসকষ্ট কমাতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে ক্যাফেইন শ্বাসনালীকে প্রশস্ত করতে সাহায্য করতে পারে।

৪. আদা চা পান করা

আদার মধ্যে প্রদাহ বিরোধী এবং ব্যথা উপশমকারী বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। আদা চা নিউমোনিয়ার লক্ষণ কমানোর পাশাপাশি শরীরকে হাইড্রেট রাখে।

৫. মেথি চা পান করা

২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে মেথি চা জ্বরের মধ্যে শরীরে ঘাম ঝড়িয়ে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে সহায়তা করে।

৬. গরম খাবার খাওয়া

নিউমোনিয়া হলে ঠাণ্ডা বাসি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এ সময় গরম খাবার ও গরম জাতীয় তরল খাবার খেতে হবে।

নিউমোনিয়া প্রতিরোধ

১. পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করে তোলা।

২. ধূমপান ফুসফুসের ক্ষতি করে এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতাকে বাধা দেয়। তাই অবিলম্বে ধূমপান ত্যাগ করা উচিত।

৩. চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে যেসব নিউমোনিয়ার টিকা পাওয়া যায় তা নিজে দেয়া এবং পরিবারের শিশুসহ অন্যান্য সদস্যের দেয়া উচিত।

৪. নিয়মিত সাবান এবং পানি দিয়ে হাত ধুয়ে পরিস্কার রাখা।

৫. উচ্চ মাত্রার বায়ু দূষণ বা দূষিত এলাকা এড়িয়ে চলা

৬. অ্যাকটিভ থাকা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা

৭. পুষ্টিকর এবং সুষম খাদ্যভ্যাস তৈর করা।

সূত্র: হেলথলাইন এবং হেলথপার্টনারস

এমটিআই