ঢাকা : নভেম্বরের মাঝামাঝি এসেও দেশে ডেঙ্গুতে বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ জন মারা গেছে। এর আগে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ছিল ২ ও ২০ সেপ্টেম্বর। এ দুদিন ২১ জন করে মারা যায়।
গতকাল পর্যন্ত চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু দেড় হাজার ছাড়িয়েছে। মোট মৃত্যু দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫২০ জনে। মৃত্যুর এই সংখ্যা দেশে ডেঙ্গুর ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে পর্যন্ত সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ছিল গত বছর, ২৮১ জন।
এ ছাড়া ২০১৯ সালে ১৭৯, ২০২১ সালে ১০৫, ২০০০ সালে ৯৩, ২০০২ সালে ৫৮, ২০০১ সালে ৪৪, ২০১৬ সালে ১৪, ২০০৪ সালে ১৩, ২০০৬ সালে ১১, ২০০৩ সালে ১০, ২০১৭ সালে ৮, ২০২০ সালে ৭ , ২০১১ ও ২০১৫ সালে ৬ জন করে, ২০০৫ সালে ৪, ২০১৩ সালে ২ ও ২০১২ সালে ১ জন মারা যায়।
[211258]
গত ২৩ বছরের মধ্যে ৫ বছর, অর্থাৎ ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ও ২০১৪ সালে দেশে ডেঙ্গুতে কেউ মারা যায়নি।
এ বছর ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ প্রাদুর্ভাব ও মৃত্যুর পেছনে অগোছালো স্বাস্থ্য ও মশা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মশা নিধনে এ বছর সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রশাসন। মশা নিধনে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই।
একইভাবে সর্বোচ্চ মৃত্যুর জন্য মোটা দাগে অগোছালো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকেও কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মশা নিয়ন্ত্রণ কিছুটা সময়ের ব্যাপার। কিন্তু মৃত্যু সহজেই কমানো যায়। বিশেষ করে রোগীর ধরন ভেদে স্তরভিত্তিক চিকিৎসার উদ্যোগ নিলে মৃত্যু কমবে। হাসপাতালেও জটিল রোগীদের চিকিৎসায় দেরি হচ্ছে।
এ বছর মোট মৃত্যুর মধ্যে ১৭২ জন মারা গেছে চলতি মাসের গত ১৫ দিনে। এ বছর এখনো সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে সেপ্টেম্বরে ৩৯৬ জনের। এরপর অক্টোবরে মারা গেছে ৩৫৯, আগস্টে ৩৪২ ও জুলাইয়ে ২০৪ জন। এ ছাড়া জুনে ৩৪, জানুয়ারিতে ৬, ফেব্রুয়ারিতে ৩ এবং এপ্রিল ও মে মাসে ২ জন করে মারা গেছে। মার্চ মাস ছিল মৃত্যুহীন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত সপ্তাহেও হাসপাতালে ভর্তির তিন দিনের মধ্যে মারা গেছে ৮৬ শতাংশ রোগী। ৭ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে ভর্তির ৪-৫ দিনের মধ্যে, ৬ শতাংশের ৬-১০ দিনের মধ্যে ও ১ শতাংশ ভর্তির ১০ দিনের বেশি সময়ের মধ্যে। সে সপ্তাহে মোট মৃত্যুর ৮৩ শতাংশ মারা গেছে ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে, ডেঙ্গু হেমোরেজিকে ১০ শতাংশ ও এক্সপান্ডেড ডেঙ্গুতে ৭ শতাংশ।
নতুন মারা যাওয়া ২৪ জনের মধ্যে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকায় ও ১১ জনের ঢাকার বাইরে। এ নিয়ে এ বছর ঢাকায় মারা গেল ৮৮৫ ও ঢাকার বাইরে ৬৩৫ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে পুরুষের মৃত্যু সাড়ে ছয়শ ছাড়িয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত পুরুষ মারা গেছে ৬৫২ ও নারী ৮৬৮ জন। পুরুষের তুলনায় নারী মৃত্যু বেশি। অথচ পুরুষের তুলনায় নারী রোগীর সংখ্যা কম। মোট আক্রান্তের ৪০ শতাংশ নারী কিন্তু মৃত্যু ৫৭ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৬২৩ জন ডেঙ্গু নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ২৭৪ জন, যা মোট ভর্তির ৭৮ শতাংশ এবং ঢাকায় ভর্তি হয়েছে ২২ শতাংশ বা ৩৪৯ জন। এ নিয়ে এ বছর মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৬৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৮৯ ও ঢাকায় ১ লাখ ৪ হাজার ৫৭৬ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে ৫ হাজার ৭৫৫ জন।
চলতি বছর সবচেয়ে বেশি ৩৬-৪০ বছর বয়সী ১৩৭ জন মারা গেছে, যা মোট মৃত্যুর ১০ শতাংশ। তাদের মধ্যে বেশি মারা গেছে নারী। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মারা গেছে ৯ শতাংশ করে ২৬-৩০ বছর ও ৩১-৩৫ বছর বয়সীরা। ৮ শতাংশ করে মারা গেছে ২১-২৫ বছর, ৪৬-৫০ বছর ও ৫৬-৬০ বছর বয়সী, ৭ শতাংশ করে মারা গেছে ৪১-৪৫ বছর, ৫১-৫৫ বছর ও ৬১-৬৫ বছর বয়সী রোগী। ১৬-২০ বছর বয়সী ৬ শতাংশ ও ৬৬-৭০ বছর বয়সী ৫ শতাংশ রোগীর মৃত্যুর হয়েছে। ৪ শতাংশ করে মারা গেছে ০-৫ বছর ও ৬-১০ বছর বয়সী, ৩ শতাংশ করে ১১-১৫ বছর ও ৭১-৭৫ বছর বয়সী রোগী। সবচেয়ে কম ২ শতাংশ করে মারা গেছে ৭৬-৮০ বছর ও ৮০ বছর ঊর্ধ্ব বয়সী।
এমটিআই