এইডস প্রতিরোধই করণীয়

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩, ০৩:৫৮ পিএম

ঢাকা : বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য বিষয়ক সংকটগুলোর একটি হলো এইডস। এই মারণব্যাধির জন্য দায়ী এইচআইভি ভাইরাস।

দেশে সাড়ে তিন দশকের ইতিহাসে সর্বোচ্চ এইডস রোগী শনাক্ত এবং এই রোগে মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। চলতি বছরে বাংলাদেশে নতুন করে ১ হাজার ২৭৬ জন এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ২৬৬ জন। এই সংখ্যা দেশে ১৯৮৯ সালের পর, অর্থাৎ ৩৪ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

১৯৮০ সালে প্রথম এই ভাইরাস ছড়াতে শুরু করে বলে জানা যায়। প্রাণঘাতী ব্যাধি এইডস সম্পর্কে সবারই কমবেশি ভুল ধারণা আছে। এ কারণেই এইডস রোগীকে খারাপ চোখে দেখে সমাজ। সবার ধারণা থাকে, এই রোগটি হওয়ার মূল কারণ হলো অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক!

[214112]

তবে শারীরিক সম্পর্ক ছাড়াও একাধিক কারণ আছে এইচআইভি পজেটিভ হওয়ার।

এইডসের কারণ

মূলত এইডস হচ্ছে হিউম্যান ইমিউনো ডেফিশিয়েন্সি নামের রেট্রোভাইরাসের কারণে সৃষ্ট একটি রোগ। মানুষের রক্ত ও অন্যান্য দেহ রসেই একমাত্র বেঁচে থাকে এই ভাইরাস, যা মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা হ্রাস করে।  

এর ফলে একজন এইডস রোগী খুব সহজেই যে কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু ঘটাতে পারে।

এছাড়া এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আরও কারণ হল,

১. নারী বা পুরুষ কারও শরীরে এই ভাইরাস থাকলে, যৌন সম্পর্কের ফলে অন্যজনের শরীরে সহজেই প্রবেশ করবে এই রেট্রোভাইরাস।

২. ইঞ্জেকশন নেওয়ার সময় নতুন সিরিঞ্জ ও সূচ ব্যবহার করা না হলে দ্রুত এই ভাইরাস অন্যের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

৩. এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত রক্ত যদি কেউ শরীরে গ্রহণ করে তবে তারও এইডস হতে পারে।

৪. এইডসে আক্রান্ত প্রসূতির সন্তানের শরীরেও এইডস হতে পারে। বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে শিশুর দেহে এই ভাইরাস প্রবেশ করে।

৫. এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করা ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, অস্ত্রোপচারের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সুস্থ ব্যক্তির দেহে ভুলবশত ব্যবহার হলে তা থেকে রোগ ছড়ায়।

৬. এইচআইভিতে আক্রান্তদের মাড়ির ক্ষত ও দেহের ক্ষত থেকে নিঃসৃত লালা ও রস থেকে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।

এইডসের লক্ষণ

এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর শুরুর কয়েকটি সপ্তাহের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাব দেখা দিতে পারে, হালকা জ্বর, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীরে র‍্যাশ দেখা দিতে পারে।

অন্যান্য লক্ষণগুলো দেখা দেবে যখন ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করাই এইচআইভির মুল বিপদ।

প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকলে কাশি, ডাইরিয়া, লিম্ফ নোড বা চামড়ার নিচে ফুলে যাওয়া গোটার মতো দেখা দেবে, ওজন কমে যাবে।

কোন লক্ষণ দেখা না দিলে এইচআইভি আক্রান্ত নন এটিও ভুল ধারণা। এই জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার পরও একজন ব্যক্তির শরীরে দীর্ঘদিন কোন রকমের লক্ষণ দেখা নাও দিতে পারে।

চিকিৎসার অভাবে আরও ভয়াবহ অসুখও হতে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে সামান্য অসুখেও মৃত্যুর সম্ভাবনা তৈরি হয় যদি তার চিকিৎসা না নেয়া হয় কারণ শরীর তার স্বাভাবিক নিয়ে আর অসুখের সাথে লড়াই করতে পারে না

এইডস প্রতিরোধ

এইডস প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা হলো:

১. অন্যের রক্ত গ্রহণ বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের আগে রক্তে এইচআইভি আছে কিনা পরীক্ষা করে নেয়া

২. ইনজেকশন নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবারই নতুন সুচ/সিরিঞ্জ ব্যবহার করা

৩. অনিরাপদ ও একাধিক যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা

৪. স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো নারী বা পুরুষের সাথে দৈহিক সম্পর্কের সময় কনডম ব্যবহার করা

৫. এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত মায়ের সন্তান গ্রহণ বা সন্তানকে বুকের দুধ দেয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া,

৬. কোন যৌন রোগ থাকলে বিলম্ব না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া,

৭. অন্যের ব্যবহার করা ব্লেড ব্যবহার না করা এবং

৮. ধর্মীয় ও নৈতিক অনুশাসন মেনে চলা।

এইডস সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা

আগে বেশীরভাগ মানুষই বিশ্বাস করতো যে এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে বা তার ত্বক ও মুখের লালা দ্বারা আপনিও আক্রান্ত হবেন। কিন্তু এটি কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। একই বাতাসে নিশ্বাস নিলে, হাত মেলালে, জড়িয়ে ধরলে, তার ব্যবহৃত কোন জিনিস ব্যবহার করলে আপনিও এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন না।

মশা একই ঘরে থাকা মানুষজনকে কামড়াতে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ে যদি অন্য কাউকে কামড়ায় তাহলেও এটি ছড়াতে পারে সেটি ভুল ধারনা।

যৌন মিলনের পর স্নান করলে এইচআইভি ভাইরাস পরিষ্কার হয় এই ধারনাও একেবারেই ভুল।

এইচআইভি পজিটিভ নারী বা পুরুষের সাথে ওরাল সেক্সের মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়া সম্ভব। কিন্তু এর হার খুব বিরল।

কনডম ব্যবহার করলে এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার কোনই সম্ভাবনা এমন ধারনাও ঠিক নয়। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌন মিলনের সময়ে কনডম ফুটো হয়ে গেলে আপনি বিপদে পড়তে পারেন।

এমটিআই