ঢাকা : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সর্বাধিক ভোট পাওয়ার রেকর্ড করেছেন জো বাইডেন। ২০০৮ সালে সর্বাধিক পপুলার ভোট পাওয়া বারাক ওবামার রেকর্ড ভেঙে দিলেন তারই ডেমোক্র্যাট দলীয় সতীর্থ ৭৭ বছর বয়সী জো । আর তার নেতৃত্বে ধারাবাহিকভাবে একের পর এক অঙ্গরাজ্যে নীল ঝাণ্ডা উড়িয়ে সদম্ভে শ্বেতমহলের মসনদ দখলে এগিয়ে যাচ্ছে ডেমোক্র্যাটরা। সবকিছু ঠিক থাকলে, বাইডেন বিষেই হতে যাচ্ছে রিপাবলিকান হস্তীবধ।
বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) গণনা হওয়া ভোটের হিসেবে সাত কোটি ২১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৮৯ ভোট পেয়েছেন বাইডেন। এর আগে সর্বোচ্চ ভোটের রেকর্ডধারী বারাক ওবামা পেয়েছিলেন ছয় কোটি ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫১৬ ভোট।
শুধু তাই নয় চলতি নির্বাচনে পপুলার ভোটে নিজের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ইতোমধ্যে নিশ্চিত করেছেন জো বাইডেন। ৫০ শতাংশের বেশি পপুলার ভোট পেয়ে শীর্ষে আছেন বাইডেন। বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন পর্যন্ত পেয়েছেন ছয় কোটি ৮৬ লাখ ৪৩ হাজার ৫৪৪ ভোট। দেশটিতে এখনও পাঁচটি রাজ্যের ভোট গণনা বাকি আছে।
তবে সেই রাজ্যগুলোতে গণনার জন্য বাকি থাকা ভোটের সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ ২১ হাজার। এই সব ভোট ট্রাম্প শিবিরে যোগ করলেও পপুলার ভোটে এগিয়ে থাকবেন জো বাইডেন। তবে নেভাদা রাজ্যে এগিয়ে আছেন জো বাইডেন। সেই হিসেব অটুট থাকলে আরও ভোট পাবেন বাইডেন। সবমিলিয়ে দেশটির ইতিহাসে সর্বাধিক পপুলার ভোটের অধিকারী এখন জো বাইডেন। এবারের নির্বাচন ভেঙেছে আরও একটি রেকর্ড। ১৯০৮ সালের পর এবারই দেশটিতে সর্বাধিক সংখ্যক যোগ্য নাগরিক তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ৬৭ শতাংশ অনুমান করা হলেও এবার সর্বোচ্চ ৬৫ শতাংশ ভোট জমা পড়েছে।
বুধবার সকাল থেকে ভোট গণনা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বোঝা গিয়েছিল, কেউ কাউকে সহজে ছাড়ছেন না। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুপুরের মধ্যেই জিতে নিয়েছিলেন ফ্লোরিডা এবং টেক্সাস। টেক্সাসের ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ৩৮। ফ্লোরিডার ২৯। বস্তুত, টেক্সাস জেতার পরে এক সময় মনে হচ্ছিল, ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া আর কেবল সময়ের অপেক্ষা। অবশ্য এই প্রেক্ষাপটে নিজের বিজয় সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যও করেছিলেন তিনি।
বাইডেনও অবশ্য এদিন সকাল থেকেই জেতার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। সুইং স্টেট দখল করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ক্লিন সুইপ করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৫টি ইলেকটোরাল ভোট। এই রাজ্য কার দিকে যাচ্ছে, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। তবে শেষ বেলায় মিশিগান জয় করে বাইডেন জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছেন। ট্রাম্প এখনো দাঁড়িয়ে আছেন ২১৪টি ভোটে। বাইডেন পৌঁছে গিয়েছেন ২৬৪ ভোটে। আর ছয়টি ভোট পেলেই প্রেসিডেন্টের সিংহাসনে বসতে পারবেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী।
তবে খেলা এখানেই থামছে না। পতনের আভাস পেতেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে আদালতের স্মরণাপন্ন হওয়ার ঘোষণা দেয়া রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার সজা মামলাই ঠুকে দিয়েছেন।
এদিকে তার পাল্টা জবাব দিতে আইনি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন বাইডেনের আইনজীবীরা। বাইডেনের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ এনে মিশিগানে ফের ভোট গণনার আর্জিও জানিয়েছেন ট্রাম্প। শুধু তাই নয়, নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে ট্রাম্প বাহিনী। ফলে জিতলেও সহজে প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসতে পারবেন না বাইডেন। আইনি লড়াইয়ে নামতে হবে।
বাইডেন বাহিনী অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, সমস্ত রকম আইনি লড়াইয়ের জন্য তারাও গাঁটছড়া বেঁধেই নামবেন। ট্রাম্প নির্বাচনের আগে থেকেই পোস্টাল ব্যালট নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন। বুধবারেও একাধিকবার সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
নির্বাচন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পোস্টাল ব্যালট গুণতে সময় লাগছে বলেই দ্রুত ফলাফল জানানো যাচ্ছে না। এই পোস্টাল ব্যালট নিয়েই ট্রাম্প অচলাবস্থা তৈরি করতে পারেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার জন্য ২৭০ টি ভোট লাগে। বিভিন্ন রাজ্যের ইলেকটোরাল কলেজ ভোট যোগ করে ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে হয় প্রার্থীদের। এখনো পর্যন্ত বাইডেন দখল করতে পেরেছেন মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি, ওয়াশিংটন, নিউ মেক্সিকো, ভার্জিনিয়া, ম্যাসাচুসেটসের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট।
ট্রাম্প পেয়েছেন টেক্সাস, ফ্লোরিডা, কেনটাকি, লুসিয়ানা, মিসিসিপি, টেনিসির মতো রাজ্য। এখন দেখার ২৭০ ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে আর কত সময় লাগে বাইডেনের। আর ট্রাম্প নতুন কী চাল চালেন।
সোনালীনিউজ/এমটিআই