ঢাকা: ব্রিটেনে নতুন প্রজাতির করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর এবার ইতালি এবং হংকংয়েও তা শনাক্ত হয়েছে। সম্প্রতি ব্রিটেন ফেরত দুই হংকং শিক্ষার্থীর শরীরে ভাইরাসটি চিহ্নিত হয়েছে। এদিকে বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ইতালিতে ২ ব্যাক্তির শরীরে নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। খবর রয়টার্স ও আনাদোলু এজেন্সির।
স্থানীয় সময় বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) হংকংয়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষা কেন্দ্রের সংক্রামক রোগ শাখার প্রধান ডা. চুয়াং শুক-কুয়ান এক সংবাদ সম্মেলনে তার দেশে নতুন করোনা ভাইরাসের দুই রোগি শনাক্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ব্রিটেনের ‘এশিয়ান ফাইনানশিয়াল হাব’ থেকে ফেরার পর দুই শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হন। তাদের শরীরে পাওয়া নমুনার সঙ্গে ইউরোপের নতুন ধরণের করোনাভাইরাসের মিল পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।’
এদিকে, ইতালিতে নতুন ধরনের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তিকে তার নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। কিছুদিন ধরে তার মধ্যে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা লাগার লক্ষণ দেখা দেয়। এরপর তার থেকে ‘মলিকুলার সোয়াব টেস্ট’ এর জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেটা নিয়ে রিইউনিটি হাসপাতালের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয় এবং এটি নতুন ধরনের করোনাভাইরাস বলে নিশ্চিত করা হয়।
এর আগে গেল রোববার নতুন ধরনের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী সনাক্ত হয়েছিল ইতালিতে। যদিও তিনি যুক্তরাজ্য থেকে ফিরেছিলেন। যেখানে প্রায় শতাধিক স্থানে নতুন ধরনের এই ভাইরাসের উপস্থিতি সনাক্ত করা গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হওয়া করোনাভাইরাসের এ নতুন প্রজাতি এখন পর্যন্ত ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস এবং অস্ট্রেলিয়াতে শনাক্ত হয়েছে। নতুন ধরণের এই ভাইরাসে বিশেষ করে শিশুরাও সংক্রমণের শিকার হতে পারে এমনটাই ধারণা চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের। তবে নতুন প্রকৃতির এই ভাইরাস সম্পর্কে জানার তাগিদ দিচ্ছেন ভাইরোলজিস্ট বা ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, ব্রিটেনে সম্প্রতি করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু হওয়ার পর থেকে রাজধানী লন্ডনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্বে প্রকোপ দেখা দিয়েছে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের। যার তাণ্ডব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দেশটিতে। এমতাবস্থায় জারি করা হয়েছে লকডাউন। এমনকি বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এক সপ্তাহের জন্য সবধরনের যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসের চরিত্র বদলানো নতুন কিছু নয়। চলমান করোনাভাইরাসেরও বিভিন্ন প্রজাতি আছে। তবে এখন পর্যন্ত সেই প্রজাতিগুলোর মধ্যে আর বেশি ক্ষতিকারক কিছু দেখা যায়নি। কিন্তু নতুন করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তা আগের তুলনায় অনেক বেশি ছোঁয়াচে এবং ভয়ংকরভাবে দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে।
গত মাসে দেখা গিয়েছিল, লাখ লাখ মিংক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। আবার স্পেনে একটি নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল, যা ইউরোপের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু দুটি ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ওই ভাইরাস মূল করোনা ভাইরাসের থেকে মারাত্মক নয়।
কিন্তু এবার যুক্তরাজ্যে গত সপ্তাহে যে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে, তা আগের থেকে অনেক দ্রুত ছড়াচ্ছে। তবে এই ভাইরাসে মানুষের অসুস্থতা আরো জটিল চেহারা নিচ্ছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা এমনিতেই মারাত্মক। ফলে করোনা হলে তাতে জীবনের ঝুঁকি থাকে। সে জন্যই দ্রুত করোনা ছড়ালে তা আরো মারাত্মক হয়ে উঠতে বাধ্য।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, ‘নতুন ধরনের করোনাভাইরাস আগের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি গতিতে ছড়াচ্ছে। যার জেরে দক্ষিণ ইংল্যান্ডে সম্প্রতি অতি দ্রুত গতি করোনা বিস্তার লাভ করছে।’ খবর ডয়েচে ভেলের।
ভাইরাসটি যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে তা গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানিয়েছিল যুক্তরাজ্য। লন্ডনে নতুন যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ৬০ শতাংশই নতুন ভাইরাসটির কবলে পড়েছেন।
দেশটির জনস্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গত রোববারই এক হাজার ১০০ জন নতুন এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। ক্রমেই তা আরও বাড়ছে। ভাইরাসটি প্রথম উৎপত্তি ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকায়।
এদিকে নতুন ভাইরাসকে আটকাতে প্রধানমন্ত্রী জনসন লন্ডন এবং দক্ষিণপূর্ব ইংল্যান্ডে আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করেছেন। গত শনিবার তিনি বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে, ততই এই ভাইরাস সম্পর্কে আমরা বেশি করে জানছি। ভাইরাস যদি চরিত্র বদল করে আক্রমণ করে, তবে আমাদেরও আত্মরক্ষার চরিত্র বদল করতে হবে।’
আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া যাচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত এই নতুন ধরনের ভাইরাসকে আটকানো কঠিন। কারণ, এই ভাইরাস অতি দ্রুত ছড়ায়। যুক্তরাজ্যে এখন করোনার প্রতিষেধক দেয়া চলছে। এখন আশি বছরের বেশি বয়সীদের এই প্রতিষেধক দেয়া হচ্ছে।’
সোনালীনিউজ/এমএইচ