ঢাকা : আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সেনা প্রত্যাহার ও দেশ ছাড়তে ইচ্ছুক আফগানদের সরিয়ে নেয়ার অভিযান শেষ ধাপে পৌঁছেছে। বিবিসির খবরে বলা হয়, ৩১ আগস্ট বেধে দেয়া সময়সীমা অনুযায়ী শুক্রবার (২৭ আগস্ট) শেষ ধাপের উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনা ঘটে কাবুলে। আল জাজিরার জানিয়েছে, কাবুল বিমানবন্দরের একটি ফটকের বাইরে জোড়া বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা ১১০-এ পৌঁছেছে। নিহতদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। এতে আহত হয়েছেন দেড়শ’র বেশি মানুষ।
পেন্টাগন জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে ১৮ মার্কিন সেনাও রয়েছেন। আত্মঘাতি এ হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন আইএসকেপি (ইসলামিক স্ট্যাট অব খোরাসান প্রোভিন্স)।
হামলার জেরে আফগানিস্তান জুড়ে শোকের আবহ বিরাজ করছে। টেলিভিশন ফুটেজে দেখা যায়, কাবুলের একটি মেঝেতে সারি সারি লাশ পড়ে আছে; স্বজন হারাদের কান্না আর হাহাকার ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। অবশ্য কাবুলের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয়া তালেবান এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, বিমানবন্দরের কাছে ওই ঘটনাস্থলটি পাহারা দিচ্ছেন তালেবান সদস্যরা। সেখানে ছেঁড়া কাপড়, ব্যাগ এলোমেলোভাবে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। যেখানে বৃহস্পতিবার বিকেলেও বহু মানুষের সমাগম ছিল, শুক্রবার সেই স্থানটিতে নিরাপত্তা বাহিনীর দু’এক সদস্য ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি।
এর আগে নিহতের সংখ্যা ১০৩ উল্লেখ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, নিহতদের মধ্যে অন্তত ৯০ জন আফগান রয়েছেন। বাকি ১৩ জন মার্কিন সেনা। ভয়াবহ এ হামলার কড়া জবাব দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তিনি বলেন, হামলাকারীদের খুঁজে বের করা হবে এবং তাদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়া হবে। এ হামলার জেরে কাবুল থেকে সরিয়ে নেয়ার অভিযান ব্যাহত হবে না বলেও জানান তিনি। তালেবানরা বলছে, হামলায় নিহতদের মধ্যে তাদের অন্তত ২৮ সদস্য রয়েছেন।
গত ১৫ আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। এর পর থেকেই বিমানবন্দরের দেশ ছাড়তে ইচ্ছুক আফগানদের ঢল নামে। হাজার হাজার আফগান বিমানবন্দর ও এর আশপাশে জড়ো হতে থাকেন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খায় বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণে থাকা যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী। এ প্রেক্ষাপটে আইএসের হামলার সতর্কতা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তাতেও দেশত্যাগী আফগানদের ভিড় কমেনি বিমানবন্দর থেকে।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যমটি জানায়, প্রথম বোমাটি বিস্ফোরিত হয়েছিল বিমানবন্দরের আবি ফটকে। এর কাছেই বিমানবন্দরের বাইরে একটি হোটেলের সামনে অপর বিস্ফোরণটি ঘটে।
২০১১ সালের পর বিস্ফোরণে মার্কিন বাহিনীতে এতো বেশি প্রাণহানীর ঘটনা আর ঘটেনি। আগামী ৩১ আগস্ট আফগানিস্তান ছাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী। এর ঠিক পাঁচদিন আগেই এ হামলার ঘটনা ঘটলো।
মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা এ ধরনের আরও হামলার শঙ্কা প্রকাশ করছেন। এ কারণে কাবুল বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তবে জো বাইডেন বলছেন, হামলার জেরে উদ্ধার অভিযান বন্ধ রাখবেন না তারা।
সোনালীনিউজ/এমটিআই