করোনাভাইরাস ‘ওমিক্রন’ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৫ তথ্য

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২১, ০১:৪২ পিএম

ঢাকা : ডেল্টা, ডেল্টা প্লাসের পর দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ উদ্বেগ বাড়ছেই বিশ্ব জুড়ে। এই ধরন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে ইতিমধ্যেই সব দেশকে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

কিন্তু এখনও ভাইরাসের নতুন রূপের ভয়াবহতা সম্পর্কে পুরোপুরি জানা সম্ভব হয়নি। কিন্তু জিনের বিন্যাসের একাধিক বার বদল ঘটানোয় মনে করা হচ্ছে করোনার এই রূপ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

ওমিক্রন নিয়ে পাঁচ তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এগুলো হলো:

১. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আগে যারা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, এমন ব্যক্তিরা ফের খুব সহজেই আক্রান্ত হতে পারেন ওমিক্রনে।

২. এক ব্যক্তির দেহ থেকে অন্যের দেহে কোনও ভাইরাস যত সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে, সেই ভাইরাস তত বেশি সংক্রামক। করোনার ডেল্টা ও অন্য ধরনের তুলনায় ওমিক্রন বেশি সংক্রামক কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা এই রূপকে ধরতে সক্ষম।

৩. কোভিডের বিভিন্ন টিকার উপর এই ভাইরাসের প্রভাব কতটা, তা জানার জন্য কাজ চলছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

৪. করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন আরও ভয়াবহ রোগ ঘটাবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। করোনার অন্য ধরনে আক্রান্ত হলে যেসব উপসর্গ দেখা যায়, তার থেকে আলাদা কোনও উপসর্গ ওমিক্রন ডেকে আনছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

৫. প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্য জানাচ্ছে, কোভিডে আক্রান্ত হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বেড়েছে। কিন্তু সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তেই রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি। কেবলমাত্র ওমিক্রনের জন্য এই বৃদ্ধি কি না, তা বলার পর্যাপ্ত তথ্য এখনও নেই বলে মত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

ওমিক্রন নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৫ নির্দেশনা : করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে কয়েকটি দেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং, জনসমাগম নিরুৎসাহিত করা এবং পর্যটন, বিনোদন কেন্দ্র, রেস্তোরাঁয় ভিড় এড়ানোসহ ১৫ নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

রোববার (২৮ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও লাইন ডাইরেক্টর, সিডিসি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে এসব নির্দেশনা জারি হয়।

নির্দেশনায় বলা হয়, সাউথ আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস ওমিক্রনের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সব দেশকে করোনার এ ধরন সম্পর্কে সতর্ক করেছে।

যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশ সাউথ আফ্রিকা, নামিবিয়া জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি এবং লেসোথোর সঙ্গে আকাশপথ ও সড়কপথে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে। করোনার সাউথ আফ্রিকান এ ভ্যারিয়েন্ট করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকেও অধিক সংক্রামক বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। তাই এ ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের লক্ষ্যে দেশব্যাপী নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের অনুরোধ করা হলো বলে নির্দেশনামূলক চিঠিতে বলা হয়।

১৫ দফা নির্দেশনায় রয়েছে

* দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি, লেসোথোসহ যেসব দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, সেসব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে।

* সব ধরনের (সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অন্যান্য) জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে।

* বাড়ির বাইরে সবার সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

* রেস্তোরাঁয় ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম আসনে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে

* সকল প্রকার জনসমাবেশ, পর্যটন স্থান, বিনোদনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, সিনেমা হল/থিয়েটার হল ও সামাজিক অনুষ্ঠানে (বিয়ে, বৌভাত, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি) ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম সংখ্যক লোক অংশগ্রহণ করতে পারবে।

* মসজিদসহ সকল উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

* গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।

* যেসব দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে, সেসব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।

* সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (সকল মাদ্রাসা, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টারে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।

* সকল স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে সেবাগ্রহিতা, সেবা প্রদানকারী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

* স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

* কোভিড উপসর্গ/লক্ষণযুক্ত সন্দেহজনক ও নিশ্চিত করোনা রোগীর আইসোলেশন ও কোভিড পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসা অন্যান্যদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।

* কোভিড-১৯ এর লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা এবং তার নমুনা পরীক্ষার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে সহায়তা করা যেতে পারে।

* অফিসে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন বাধ্যতামূলক নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটা দাপ্তরিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে।

* মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সচেতনতা তৈরির জন্য কমিউনিটি পর্যায়ে মাইকিং ও প্রচার চালানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মসজিদ/মন্দির/গির্জা/প্যাগোডার মাইক ব্যবহার করা যেতে পারে এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর/ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই