ঢাকা: ৭২ জন যাত্রী ও ক্রু নিয়ে নেপালের একটি বিমান গতকাল রোববার সকালে পোখারা বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৮ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে বিমানের আর কেউ বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বিবিসির এক প্রতিবেদনে নেপালের এই বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আগে কী ঘটেছিলে তা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, পোখারায় বিধ্বস্ত ইয়েতি এয়ারলাইন্সের বিমানটি অবতরণের আগ মুহূর্তে ল্যান্ডিং প্যাড পরিবর্তনের অনুমতি চেয়েছিল। অনুমতি দেয়া হলেও শেষমেশ আর অবতরণ করতে পারেনি বিমানটি। তবে শেষ মুহূর্তে ল্যান্ডিং প্যাড বদলের দরকার কেন হয়েছিল তা নিয়ে শুরু হয়েছে গুঞ্জন।
নেপালের স্থানীয় পত্রিকা ইকান্তিপুর তাদের এক প্রতিবেদনে বলছে , বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটির রানওয়ে-৩০এ অবতরণের কথা ছিল। একই পাইলট ও ক্রু সমেত বিমানটি একই রানওয়েতে ওই দিন সকালবেলাতেও একবার অবতরণ করেছিল। তবে, শেষ মুহূর্তে বিমানটি রানওয়ে-১২তে অবতরণের অনুমতি চায়।
কাঠমাণ্ডু পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলছে, সবশেষ বিমানটি নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পশ্চিম দিক থেকে অবতরণের মাত্র দুমিনিট আগে ট্রাফিক এয়ার কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আর তার পরপরই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। স্থানীয় সময় বেলা ১০টা ৫৩ মিনিটে এটি বিমানবন্দরে অবতরণের কথা ছিল।
বিবিসি নেপালি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, বিমানটির পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টন কামাল কে সি। যিনি রোববারই আরেকটি ফ্লাইট নিয়ে কাঠমান্ডু থেকে পোখারায় গেছেন। ইয়েতি এয়ারলাইন্স বলছে, সম্প্রতি চালু হওয়া পোখারা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে এর আগে পরীক্ষামূলক উড্ডয়নও করেছেন তিনি।
কর্মকর্তারা বলছেন যে, অবতরনের বিষয়ে বিমানবন্দর থেকে অনুমতিও পেয়েছিলেন পাইলট। তখনও পর্যন্ত কোন সমস্যা ছিল না। অবতরণের জন্য ‘ক্লিয়ারেন্স’ বা অনুমতি পাওয়ার পর বিমানটি বিমানবন্দর থেকে দৃশ্যমানও হয়েছিল এবং ১০-২০ সেকেন্ডের মধ্যে সেটি রানওয়েতে পৌঁছানোর কথা ছিল।
বিমানবন্দরে থাকা একজন ট্রাফিক কন্ট্রোলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসি নেপালি-কে বলেন, “মোড় নেয়ার সময় যখন ল্যান্ডিং গিয়ারটি খুলে, তখনই বিমানটি ‘স্থির’ হয়ে যায়।”
বিমানযাত্রায় ‘স্থির’ মানে হচ্ছে কোন বিমান তার উচ্চতা ধরে রাখতে পারে না। অর্থাৎ সেটি আর আকাশে ভেসে থাকতে পারে না।
তিনি বলেন, “কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে যতদূর দেখা যায় সে পর্যন্তই বিমানটি নিচে নেমে আসে।”
পোখারা বিমানবন্দরের মুখপাত্র বিষ্ণু অধিকারী বলেন, রোববার আবহাওয়া পরিষ্কার ছিল এবং ফ্লাইটগুলোও নিয়মিতই চলছিল। তিনি বলেন, “নতুন বিমানবন্দরে ফ্লাইটে কোনো সমস্যা ছিল না। সেগুলো নিয়মিতই ছিল। আজ আবহাওয়াও পরিষ্কার।”
গত পহেলা জানুয়ারি থেকে চালু হওয়া পোখারা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পূর্ব এবং পশ্চিম দিক থেকে বিমানগুলো অবতরণ করে থাকে। পূর্ব দিক থেকে অবতরণের জন্য রানওয়ে থ্রি জিরো এবং পশ্চিম দিক থেকে অবতরণের ক্ষেত্রে রানওয়ে ওয়ান টু ব্যবহার করতে বিমানগুলোকে বলা হয়।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে যে, বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি ভিএফআর বা ভিজ্যুয়াল ফ্লাইট রুলস প্রযুক্তি ব্যবহার করে অবতরণ করতে যাাচ্ছিল। ভিএফআর হচ্ছে পরিষ্কার আবহাওয়ায় অবতরণের পদ্ধতি।
তিনি বলেন, বিমানটি যখন যোগাযোগ করে তখন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল তাদের থ্রি জিরো রানওয়ে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। কিন্তু বিমানটি ১৫ মাইলের মধ্যে আসার পর সেটি রানওয়ে ওয়ান টু ব্যবহারের অনুমতি চায়। আমি নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি এবং আমি পশ্চিম দিক থেকে অবতরণ করতে চাই।
বিমানবন্দরের মুখপাত্র বিষ্ণু অধিকারী বলেন, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ সম্পর্কে তদন্তের পর জানা যাবে। বিমানবন্দরের কোন কারিগরি ত্রুটি ছিল কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি এটা বলেন।
পোখারায় বিমান বিধ্বস্তের প্রকৃত কারণ জানতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। বিমান দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে অভ্যন্তরীণ সব এয়ারলাইন্সকে উড্ডয়নের আগে বিমান পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিবিসি নেপালি সার্ভিসকে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, মনে হচ্ছিলো বিমানটি অবতরণের আগে মোড় নিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। বিবিসি আরও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছে এবং তারা সবাই বলেছে যে, দুর্ঘটনাটি এতো হঠাৎ করে ঘটেছে যে তারা কিছু বুঝেই উঠতে পারেননি।
৪৩ বছর বয়সী কামলা গুরুং বলেন, আমার চোখের সামনে আমি বিমানটি পুড়ে যেতে দেখেছি।” কামলা বলেন যে, দুর্ঘটনাটি দেখে শিশুরা ভয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে।
সোনালীনিউজ/এম