ঢাকা: বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে রাশিয়ার শক্তিশালী বেসরকারি ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার। দখল করে নিয়েছে দেশটির দুইটি শহরের সামরিক সব স্থাপনা। রাশিয়ার রোস্তভ-অন-দনের পর ভোরোনেজ শহরের সব সামরিক স্থাপনা ওয়াগনার দখলে নিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে নিশ্চিত করেছে বিবিসি।
গ্রুপটির প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের এই কর্মকাণ্ডকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ আখ্যা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
[201925]
রাশিয়ার অভ্যন্তরে এমন ঘটনা নিয়ে বিদ্রুপের সুরে টুইট করেছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
তবে স্টিভ রোজেনবার্গ নামের বিবিসির এক সাংবাদিক মনে করেন, গৃহযুদ্ধে জড়াবে না রাশিয়া। তিনি বলেন, এখনো মস্কো পুরো শান্ত। রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ অবস্থা ঠান্ডা। কোথাও কোনো মারামারি বা গোলাগুলির লেশমাত্র নেই।
রোজেনবার্গ বলেন, তবে এমন ঘটনা (ওয়াগনারের বিদ্রোহ ঘোষণা) রাশিয়ায় এর আগে কখনো ঘটেনি। এটি একটি বিরাট সমস্যা এবং এর সমাধান পুতিনকেই করতে হবে।
[201914]
তিনি বলেন, পুতিন কেবল ইউক্রেনে একটি যুদ্ধই শুরু করেননি, এখন তিনি তার নিজ দেশে এই সশস্ত্র বিদ্রোহ পেয়েছেন যা তাকে সমাধান করতে হবে।
এদিকে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এরই মধ্যে ২৫ হাজারের বেশি সেনা নিয়ে সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে রাজধানীর পথে যাত্রা শুরু করেছেন বিদ্রোহীরা। এ অবস্থায় রাশিয়ার রাজধানী মস্কোসহ দেশটির গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যগুলো জানিয়েছে, ইউক্রেন সীমান্তের অনেক এলাকায় এরই মধ্যে রুশবাহিনী ও ওয়াগনারের যোদ্ধারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। বিদ্রোহ দমনে ইতোমধ্যে ওয়াগনার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কার্যালয় ক্রেমলিন।
[201903]
খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের পূর্বে রোস্তভসহ কয়েকটি শহরে রুশ সেনাদের সঙ্গে ওয়াগনার যোদ্ধাদের সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন রোস্তভের বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মস্কো যাওয়ার হাইওয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার আসলে কারা:
বেশ কয়েকমাস ধরেই রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাবাহিনী ওয়াগনারের সঙ্গে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল, যা রূপ নিয়েছে বিদ্রোহে। ভাড়াটে সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ও নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন সশস্ত্র বিদ্রোহে লিপ্ত হয়েছেন।
তাদের বিষয়ে বিবিসির এক অনুসন্ধানে বলা হয়, চেচনিয়ায় যুদ্ধ করা একজন রুশ সেনা কর্মকর্তা দিমিত্রি উটকিন সম্ভবত এই বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে বর্তমানে এর প্রধান হচ্ছে ধনী ব্যবসায়ী ইয়েভগেনি প্রিগোশিন – যাকে পুতিনের রাঁধুনী বলা হয়।
কারণ এক সময় তিনি ক্রেমলিনের জন্য খাবার সরবরাহ করতেন।
ক্রিমিয়া দখলের জন্য রাশিয়ার ২০১৪ সালের যুদ্ধে ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধারা প্রথম ভুমিকা পালন করে। এরপর ২০১৫ সালে সিরিয়াতে সরকারসমর্থক বাহিনীর পাশাপাশি থেকে যুদ্ধ করে ওয়াগনার বাহিনী এবং সে সময় তারা তেলের খনিগুলোও পাহারা দিত।
তা ছাড়া ওয়াগনার বাহিনী ভাড়াটি সৈন্যরা লিবিয়ায় জেনারেল খলিফা হাফতারের সহযোগী হিসেবে এবং মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে হীরার খনি পাহারা দিতে কাজ করে।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির সরকার স্থানীয় উগ্রবাদী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওয়াগনার বাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছে।
ধারণা করা হয়, সুদানে সোনার খনি পাহারা দেওয়ার কাজ করছে ওয়াগনার বাহিনীর যোদ্ধারা।
মার্কিন সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ বাহিনীর প্রায় ১০ শতাংশ হচ্ছে ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধা।
এর মধ্যে হাজার হাজার যোদ্ধা এসেছে রাশিয়ার কারাগারগুলোতে থাকা বন্দীদের মধ্যে থেকে।
প্রথমদিকে তাদের সৈন্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৫,০০০ – যাদের অধিকাংশই ছিল বিভিন্ন রেজিমেন্টের সাবেক সৈন্য।
তবে যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা বলেন, ক্রেমলিন নিয়মিত বাহিনীর জন্য লোক পেতে সমস্যায় পড়ার পর এই ওয়াগনার বাহিনী বড় সংখ্যায় সেনা নিয়োগ শুরু করে।
সোনালীনিউজ/আইএ