ঢাকা : চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলের হামলায় আল ইসরা বিশ্ববিদ্যালয় ভবন গাজার মানচিত্র থেকে মুছে গেছে। ইসরায়েলি বাহিনী ভবনটি উড়িয়ে দিয়েছে, ধ্বংস করে ফেলেছে। এর আগে ইসরায়েল কয়েক সপ্তাহের জন্য এ ভবনকে সামরিক ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করেছিল বলে জানা গেছে।
গাজায় যুদ্ধে ইতোমধ্যেই নজিরবিহীন প্রাণহানি ঘটেছে। কিন্তু সেখানে সরকারি ও বেসরকারি ভবন ধ্বংস হওয়া নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসি নিউজ-কে এ বিষয়ে তার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
তার মতে, গাজা যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিতে তরুণদের একটি 'প্রজন্ম' হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে, গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ‘ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স’ (ওচা) যুদ্ধের প্রভাবের ওপর নিয়মিত বুলেটিন প্রকাশ করে।
[215783]
সংস্থাটির সর্বশেষ তথ্যানুসারে, গাজার অন্তত ৬০ শতাংশ বাড়ি বা আবাসন ইউনিট ধ্বংস কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতি ১০ টি স্কুলের মধ্যে ৯ টির গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। হাসপাতাল,পাবলিক বিল্ডিং ও বিদ্যুতের নেটওয়ার্কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
যে কোনো সমাজের মতো, গাজার ভবিষ্যৎ হচ্ছে সেখানকার শিশুরা। কিন্তু জাতিসংঘ বলছে সেখানে তারা চরমভাবে যুদ্ধের শিকার। তারা তাদের অধিকার পুরোপুরি হারিয়ে ফেলতে পারে।
জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থার (ইউএনডব্লিউআরএ) কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি গাজায় চতুর্থবারের মতো ভ্রমণ শেষে ফিরে এসে বলেছেন, “আজকাল সেখানে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুল সিস্টেমে ৫ লাখেরও বেশি শিশু আছে। কিন্তু মানুষের বাড়িঘর ইসরায়েলের হামলায় ধ্বংস হয়েছে। তাদেরকে সেখানে ফিরিয়ে আনা না গেলে শিশুরা স্কুলে ফিরে যাবে কি করে? তাই শিশুদের একটি প্রজন্ম হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে বলেই আমি শঙ্কিত।”
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাদের উল্লাস করার ছবিগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। একটি ছবিতে উত্তর গাজায় জাতিসংঘের নীল রঙা একটি স্কুল সম্পূর্ণ ধ্বংস হতে দেখা গেছে।
এই সমস্ত ঘটনায় ইসরায়েল গতবছর ৭ অক্টোবরে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের কৃতকর্মের সাজা ঢালাওভাবে গাজাবাসীকে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ করছে অনেকে।
ইসরায়েলের মিলিটারি ডিভিশন ‘কোগাট’ এর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে এক সাংবাদিক স্কুল ভবন এভাবে ধ্বংস করার কারণ জিজ্ঞেস করলে জবাবে তিনি বলেন, হামাস নিষ্ঠুর আগ্রাস চালায় এবং ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামলা চালাতে স্কুলের মতো বেসামরিক প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে- হামাস এবং অন্যান্য সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করছে এবং কার্যত প্রতিটি হাসপাতালেই ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) সেনারা ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ পেয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১৩টি কার্যকর। এর মধ্যে অনেকগুলো বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে যাদের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তারা প্রায়ই চিকিৎসা না নিয়েই চলে যায়।
‘ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স’ (ওচা) বুলেটিনে জানানো হয়েছে, ক্যান্সার রোগী এবং যাদের কিডনি ডায়ালাইসিস বা নব-জন্মের শিশুর মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার প্রয়োজন তারা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
ইসরায়েরের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের সদস্যসহ কয়েকজন বিশিষ্ট ডানপন্থি ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ বলেছেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় হল বেসামরিক নাগরিকদেরকে গাজা ছেড়ে মিশর বা অন্যান্য আরব দেশে যেতে ‘উৎসাহিত করা’।
ইসরায়েল গাজাকে পরিত্যাক্ত ভূখন্ডে পরিণত করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে লাজারিনির আশঙ্কা যুদ্ধের প্রভাবে গাজার মানুষের হয়ত ওই ভূখন্ড ছেড়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না। তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ের বাস্তব পরিস্থিতি সেদিকেই যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, “পূর্ণ বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত এবং হামাস যখন আর ইসরায়েলের জন্য হুমকি থাকবে না ততক্ষণ পর্যন্ত গাজায় সামরিক অভিযান চলবে।
ইসরায়েলি সরকারের নীতি হল, শেষ পর্যন্ত কোন ইসরায়েলিই গাজায় থাকবে না। কিন্তু যেদিন যুদ্ধ কার্যত শেষ হবে, সেদিন গাজা ভূখণ্ডে অবশিষ্টই বা থাকবে কী?
এমটিআই