ঢাকা : পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচনের পর সরকার গঠন নিয়ে বড় দলগুলোর দৌড়ঝাঁপ, সমঝোতা চলছে। পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) মধ্যে মোটামুটি সমঝোতা হয়ে গেছে। তবে এরপরও পিটিআই হাল ছাড়েনি। প্রধানমন্ত্রী পদের লড়াইয়ে এখনো রয়েছে তারা।
দলের প্রতিষ্ঠাতা কারাবন্দী ইমরান খানের সঙ্গে কয়েক দফা সাক্ষাতের পর পিটিআইয়ের নেতারা সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়া (কেপি) প্রাদেশিক পরিষদের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থীর নামও ঘোষণা করেছেন তারা।
কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হিসেবে পিটিআই ওমর আইয়ুব খানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে মিয়া মোহাম্মদ আসলাম ও খাইবার পাখতুনখাওয়ায় আলি আমিন গান্দাপুরের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
[217607]
তবে পিটিআইয়ের প্রধানমন্ত্রী পদে ওমর আইয়ুব খানকে নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। পাকিস্তানের ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের নাতি তিনি। তার বাড়ি কেপির হাজারা অঞ্চলের হরিপুর এলাকায়। বর্তমানে তিনি পিটিআইয়ের মহাসচিব।
প্রায় দুই দশক ধরে রাজনীতি করছেন ওমর। তিনি আগে পিএমএল-এন ও পিএমএল-কিউ দলের রাজনীতি করেছেন। বর্তমানে তিনি পিটিআইয়ের সঙ্গে যুক্ত।
পাকিস্তানের বিনিয়োগ বোর্ড থেকে প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত জীবনীতে জানা যায়, ওমর আইয়ুব ১৯৯৩ ও ১৯৯৬ সালে জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে যথাক্রমে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ২০০৭ সালে বিশ্ব অর্থনীতি ফোরাম (ডব্লিউইএফ) তাঁকে ইয়াং গ্লোবাল লিডার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
১৯৭০ সালের ২৬ জানুয়ারি ওমরের জন্ম। ২০০২ সালের নির্বাচনে প্রথম জয়ী ওমর পার্লামেন্ট সদস্য হন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজের মন্ত্রিসভায় তিনি অর্থ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ছিলেন।
২০০৮ সালে পিটিআই নেতা ওমর পিএমএল-কিউ দলের হয়ে হরিপুর এনএ-১৯ আসনে নির্বাচন করেন। তবে পিএমএল-এনের প্রার্থী সরদার মোাহম্মদ মুশতাকের কাছে হেরে যান।
২০১৩ সালের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের আগে ওমর দলত্যাগ করে পিএমএল-এনে যোগ দেন। অবশ্য এবারও তিনি নির্বাচনে পিটিআইয়ের প্রার্থী রাজা আমির জামানের কাছে হেরে যান।
[217609]
ওমর নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেন। এতে আমির জামানের সদস্যপদ স্থগিত হয়ে যায়। ট্রাইব্যুনাল সাতটি কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের আদেশ দেন। পরে ৫০০ ভোটে এগিয়ে থেকে নির্বাচনে জয়ী হন ওমর।
পরে আবার আমির জামান অ্যাপেক্স আদালতে নির্বাচনের ফল চ্যালেঞ্জ করেন। তবে আদালত তার আবেদন খারিজ করে দেন। পরবর্তী সময় তিনি রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেন। পরে আদালত তার রিভিউ আবেদন গ্রহণ করেন এবং ২০১৫ সালের জুনে আদালত ওমরের বিরুদ্ধে রায় দেন, যার ফলে তিনি পার্লামেন্টের সদস্যপদ হারান।
২০১৮ সালে ওমর আইয়ুব পিএমএল-এন ছেড়ে দেন। তিনি ইমরান খানের পিটিআইয়ে যোগ দেন। সেই বছর তিনি পিটিআইয়ের টিকিটে নির্বাচন করে পিএমএল-এনের প্রার্থী বাবর নওয়াজ খানকে হারিয়ে বিজয়ী হন।
নির্বাচনে সাফল্যের পর ওমর কেন্দ্রীয় সরকারের জ্বালানিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান।
গত বছরের মে মাসে পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীদের ওপর রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের মধ্যে ওমর দলের মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি হচ্ছেন দলের হাতে গোনা কয়েকজন নেতাদের একজন, যিনি তুমুল প্রতিকূল পরিবেশেও দলের সঙ্গে ছিলেন।
৮ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ওমর পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পিএমএল-এনের বাবর নওয়াজ খানকে হারিয়ে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন।
পিটিআই ওমরকে প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দিয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তিনি পিএমএল-এনের প্রার্থী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বিরুদ্ধে লড়বেন। অবশ্য পিএমএল-এনের প্রার্থীর পক্ষে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি), মুত্তাহিদা কাওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (পিকিউএম-পি), পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদে আযমসহ (পিএমএল-কিউ) আরও কয়েকটি দলের সমর্থন রয়েছে।
এমটিআই