ঢাকা : ভারতের বেশ কিছু স্বনামধন্য লেখক, সাংবাদিক ও বিভিন্ন অধিকারকর্মীদের বিনা বিচারে বন্দি করে রাখার জন্য বিশ্বের শীর্ষ ১৬জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। ভারতের সরকারের সমালোচনার অপরাধে এসব বন্দিগণ সবাই কারাগারে রয়েছেন।
এদিকে বিবৃতি প্রদানকারীদের পক্ষে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেনও তার সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।
‘ভারতে মৌলিক স্বাধীনতার অবমাননা’ শীর্ষক এক বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়ায় লেখক অমিতাভ ঘোষ, মার্কিন অধ্যাপক মার্থা নাসবাউম, ওয়েন্ডি ব্রাউন, শেলডন পোলক প্রমুখ অংশ নিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ৭৫ বছর বয়সী জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, লেখক ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যম নিউজক্লিকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থকে গ্রেপ্তার করে ছয় মাস কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। কিন্তু কোনো অভিযোগপত্র এখনও জমা দেয়া হয়নি। এমনকি তার অফিস ও বাসায় কয়েক সপ্তাহ ধরে অপরাধসংক্রান্ত প্রমাণের খোঁজে বারবার তল্লাশি চালানো হলেও কিছুই পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপের ক্ষতিকর বিষয়গুলো সবার নজরে আসা উচিত।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অন্যদেরকে আরও দীর্ঘ সময় যাবত কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। যেমন (ভীমা)–কোরেগাঁও মামলায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা (চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কারণে আদালত যাদের জামিনে মুক্তি দিয়েছেন তারা ব্যতীত) কোনো বিচার ছাড়াই পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন।’
[220602]
১৬ শিক্ষাবিদ বলছেন, দিল্লির দাঙ্গায় অভিযুক্ত অনেককে দীর্ঘ সময় কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। আর এই সময়টা তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে যে সর্বোচ্চ সাজা হয়, তার চেয়েও বেশি। এ সময় ভারতে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি দেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন এই ১৬ শিক্ষাবিদ। একই সঙ্গে ভারতে গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত রাখতে দেশটির কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে বিচার বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
এদিকে আলাদা করে দেয়া এক বিবৃতিতে অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, ভারত যে গণতন্ত্রের দাবি করে, তা অভিযুক্ত এসব মানুষকে বিনা বিচারে কারাবন্দী করে রাখার চর্চার মাধ্যমে ‘দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যাত’ হয়েছে। তিনি বলেন, ভারতে আইনের অপব্যবহার হচ্ছে। তবে দেশটি সবচেয়ে নিকৃষ্ট যেসব অন্যায় করছে, নিশ্চিতভাবে তার একটি হচ্ছে বিনা বিচারে কারাবন্দী করে রাখা।
[220611]
দীর্ঘদিন ধরে ভারতকে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সুস্থ গণতান্ত্রিক দেশ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু চলমান এসব কর্মকাণ্ড গণতান্ত্রিক ভারতের জন্য মর্মান্তিক। এটা শুধু এ দেশের জনগণের জন্য নয় বরং পুরো মানবতার জন্য মর্মান্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর দানকারী শিক্ষাবিদরা হলেন- অমিতাভ ঘোষ, মার্থা নাসবাউম, ওয়েন্ডি ব্রাউন, শেলডন পোলক, জুডিথ বাটলার, গায়াত্রী চক্রবর্তী, স্টিভেন লুকস, ডেভিড ব্রমউইচ, মারজোরি কোহেন, জোনাথন কোল, জেনেট গায়াটসো, ক্যারল রোভানে, জেন ওয়ার্নের-মুলার, চার্লস টেইলর, আকিল বিলগ্রামি ও ডেভিড সুলমান। সূত্র: দ্য ওয়্যার
এমটিআই