হানিয়াহ হত্যার প্রতিশোধ নিতে মরিয়া ইরান, প্রস্তুত ইসরায়েলও 

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২৪, ১০:৫৪ এএম
ফাইল ছবি

ঢাকা: ইরানের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়াহ হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নিতে চলেছে দেশটির সরকার। এ লক্ষ্যে গোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছে তারা। বিপরীতে ইরানের দিক থেকে যে কোন ধরনের হামলার জবাব দিয়ে প্রস্তুত আছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে ইসরায়েলও। আর এক্ষেত্রে ইসরায়েলকে বরাবরের মতো সর্বাত্মক সমর্থন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। এমন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি আরও সংকটপূর্ণ হয়ে ওঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স বলছে, নিজেদের ভূখণ্ডে ইসমাইল হানিয়া নিহত হওয়ার পর ইসরায়েলে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান। মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানিয়েছে তেহরান।

[228717]

প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইরানের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজার স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস, ইসলামিক জিহাদ, ইয়েমেনের সশস্ত্র হুতি বিদ্রোহী, লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ ও ইরাকের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে শিগগিরই আলোচনায় বসার কথা ইরানের প্রতিনিধিদের। তেহরানের এ বৈঠকে ইসরায়েলে হামলা চালানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় খোঁজা হবে।

আলোচনায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামিনি ও প্রভাবশালী রেভল্যুশনারি গার্ডস বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্তকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন ইরানের আরেকজন কর্মকর্তা।

ইরানের সেনাপ্রধান জেনারেল মোহাম্মাদ বাকেরি বলেছেন, হামলা অবশ্যই চালানো হবে। কোনো সন্দেহ নেই, নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে অনুতাপ করতে হবে।

তেহরানে গত বুধবার ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছে হামাস ও ইরান। তবে এর দায় এখনো স্বীকার করেনি ইসরায়েল।

ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার দায় শিকার না করলেও এক দিন আগে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের কাছে হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার ফুয়াদ শুকুরকে হত্যা করার কথা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী।

বৃহস্পতিবার ফুয়াদের দাফনের সময় দেওয়া ভাষণে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এ হত্যার জবাব দেওয়া হবে। ইসরায়েল জানে না, কোন বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে তারা।

এরপরই হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চল লক্ষ্য করে কয়েক ডজন কাতিউশা রকেট ছুড়েছে তারা। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের শামা গ্রামে ইসরায়েলের হামলার জবাবে এ রকেট ছোড়া হয়েছে।

এদিকে ইসরায়েলের হামলায় ফুয়াদ শুকুর নিহত হওয়ার পরই দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত বছরের ৭ আগস্ট ফিলিস্তিনের গাজায় হামলার শুরু থেকেই ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে আসছিলেন বাইডেন। তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েক দফায় গাজায় যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে নেতানিয়াহু প্রশাসনকে তাগাদাও দেন তিনি, নেন বেশ কিছু উদ্যোগ। সবশেষ হানিয়াহ হত্যার ঘটনায় বাইডেন বললেন, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা যুদ্ধবিরতির চুক্তির জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।

তবে হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলের নিরাপত্তা রক্ষায় আবারও নেতানিয়াহুকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন। একইসঙ্গে ইরান, হামাস, হিজবুল্লাহ ও হুতিদের সব হুমকির বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পাশে থাকার কথা বলেছেন তিনি।

মার্কিন সমর্থন পাওয়ার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, ‘যেকোনো পরিস্থিতির জন্য ইসরায়েল প্রস্তুত রয়েছে। আমাদের ওপর কোনো আগ্রাসন চালানো হলে, তার হিসাব ভালোমতো চুকিয়ে দেওয়া হবে। কেউ যদি আমাদের ওপর হামলা চালায়, তার জবাবে পাল্টা হামলা চালানো হবে।’

হিজবুল্লাহ নেতা নাসারাল্লাহর হুমকির পর একই কথা বলেছিলেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। তার কড়া হুঁশিয়ারি ছিল, ‘ভারী মূল্য চুকানোর আগে বড় বড় কথা, হুমকি ও মিথ্যা বলা বন্ধ করুন, নাসারাল্লাহ। ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে পূর্ণ শক্তি খাটাব আমরা।’

এসআই