লেবাননের ‘শিশুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ চালাচ্ছে ইসরায়েল, অভিযোগ চিকিৎসকের

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৪, ০৭:৩৮ পিএম

ঢাকা : ইসরায়েল লেবাননের ‘শিশুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বৈরুতের একজন শল্য চিকিৎসক।‌

আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত মেডিকেল হাসপাতালের ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ- সার্জন ডাঃ ঘাসান আবু-সিত্তাহ গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলায় বিপুল সংখ্যক শিশু হতাহত হওয়ার কথা তুলে ধরে লেবাননেও একই ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন।

তিনি এখন বৈরুতে থাকলেও এর আগে গাজায় কাজ করেছেন, জানিয়েছে সিএনএন।

ডাঃ আবু-সিত্তাহ সিএনএনকে বলেন, গত বছরের অক্টোবর ও নভেম্বরে গাজায় আমি যা দেখেছি এখন সেটার অনুরূপ চিত্র লেবাননে দেখতে পাচ্ছি।

[233715]

তিনি জানান, শিশুরা তাদের বাড়িতেই আহত হচ্ছে আর কিছু ক্ষেত্রে পরিবারের বহু সদস্যকে নিহত হতে দেখছে।

আমরা আবার শিশুদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ দেখতে পাচ্ছি, বলেন এই চিকিৎসক।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, ইসরায়েল হিজবুল্লাহর ওপর হামলা জোরদার করার পর থেকে লেবাননে ১১ দিনে কমপক্ষে ১০০ শিশু নিহত এবং গত ছয় সপ্তাহে ৬৯০ জনেরও বেশি শিশু আহত হয়েছে।

তবে ইসরায়েল বলছে, হামলার জন্য নির্ধারিত ভবনগুলোর বাসিন্দাদের ফোন কল করা এবং টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে সতর্ক করার মাধ্যমে বেসামরিকদের ক্ষতি কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।

[233706]

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো বেশ কয়েকটি মানবাধিকার গোষ্ঠী বলছে, এ ধরনের সতর্কতা জানানোর মাধ্যমে ইসরায়েল বেসামরিকদের ক্ষতি সীমিত রাখার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন থেকে নিষ্কৃতি পাবে না।

বৈরুত মেডিকেল হাসপাতালের প্লাস্টিক অ্যান্ড রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি বিভাগের পরিচালক আবু-সিত্তাহ গাজা ও লেবাননে হামলার মধ্যে মিলের কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা একই ধরনের পরিণতি দেখছি, এই শিশুদের মুখেও বিস্ফোরণে আঘাত, তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলতে হচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তুলে আনার সময় চূর্ণবিচূর্ণ শরীর পাওয়া যাচ্ছে । স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এসবের সঙ্গে শুরু থেকেই লড়াই করছে।

এদিকে, ইসরায়েলি হামলায় নয়জন স্বাস্থ্যকর্মী আহত হওয়ার পর দক্ষিণ লেবাননের একটি হাসপাতাল থেকে সবাইকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

বিনতে জাবিলের শহীদ সালাহ ঘান্দুর হাসপাতালের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে লেবাননের জাতীয় সংবাদ সংস্থা (এনএনএ) জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী হাসপাতালের আশপাশ খালি করার নির্দেশের দেওয়ার পর হামলাটি চালানো হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আহত নয় স্বাস্থ্যকর্মীর অধিকাংশেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ওই হাসপাতাল সংলগ্ন একটি মসজিদে হামলা চালিয়েছে, যেটিকে হিজবুল্লাহর কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল।

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় মারজায়ুন সরকারি হাসপাতালের পরিচালক ড. মোনেস কালাকিশ সিএনএনকে বলেন, শুক্রবার ইসরায়েলি হামলার পর মারজায়ুন সরকারি হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি ইসরাইলি হামলায় লেবাননের স্বাস্থ্য অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেছেন, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ৩৭টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে বাধ্য করা হয়েছে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশটির ২৮ জন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী নিহত হয়েছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ৪১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৯৬ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যোদ্ধা ও বেসামরিক নাগরিকের তথ্য পৃথকভাবে উল্লেখ না করলেও নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে ইসরায়েল জানায়, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে তারা গাজায় ১৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। তবে সিএনএন এসব সংখ্যা যাচাই স্বাধীনভাবে করতে পারেনি।

এমটিআই