ঢাকা : বিদ্রোহীদের আকস্মিক আক্রমণে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক দখল এবং প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের দেশত্যাগের পর ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটেছে। তবে বিদ্রোহীদের সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের সংযোগ থাকায় সিরিয়ার অস্ত্রের বিশাল মজুদ এবং কৌশলগত স্থানগুলো শত্রুদের দখলে যায় কি না তা নিয়ে সতর্ক রয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো।
ইন্ডিয়া টুডে লিখেছে, সপ্তাহান্তে সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে কয়েক ডজন বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) জানিয়েছে, আসাদ যুগ পরবর্তী সময়ে আইএস যাতে পরিস্থিতির সুযোগ নিতে না পারে সেজন্য ৭৫টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সা'র সোমবার বলেছেন, সিরিয়ায় সন্দেহভাজন রাসায়নিক অস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে তারা হামলা চালিয়েছে। এসব অস্ত্র যাতে শত্রুদের হাতে না পৌঁছায়, সেজন্য এ হামলা চালানো হয়।
ইরান ও রাশিয়ার পাশাপাশি লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর কাছ থেকে অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছিলেন বাশার আল-আসাদ। আর বিদ্রোহী জোটের প্রধান গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামকে (এইচটিএস) সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশ।
[239325]
সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কুর্দি নিয়ন্ত্রিত তেল খনন এলাকা এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের রক্ষীসেনা মিলিয়ে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৯০০ সেনা রয়েছে। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা বেশ কয়েকবার পরিবর্তিত হয়েছে, তবে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রেখেছে।
যেভাবে ক্ষমতার পালাবদল : রাশিয়া ও ইরানের সামরিক সমর্থন বাশার আল-আসাদকে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় রেখেছিল। গত সপ্তাহে সিরিয়ার বিদ্রোহী বাহিনী সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ দখল করে নেয়। প্রথমে বিদ্রোহীরা আলেপ্পো দখল করে, তারপর হামা ও হোমস দখল করে। রোববার তারা সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করে বিনা যুদ্ধে শহরটি দখল করে নেয়।
ইন্ডিয়া টুডে লিখেছে, ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে সিরিয়ার জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে জেগে উঠলে সংঘাতের সূচনা হয়। বিক্ষোভগুলো সহিংস বাধার মুখে পড়ে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মানুষ হাতে অস্ত্র তুলে নেয়।
সিরিয়ার সংঘাতে একাধিক পক্ষ ছিল- সিরিয়ার সরকারি বাহিনী, সেনাবাহিনী এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী আসাদ সরকারের পক্ষে লড়াই করেছিল; দেশটির ইদলিব শাসন করে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এবং সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মির (এসএনএ) মতো তুর্কি সমর্থিত বাহিনী উত্তরাঞ্চলে তৎপর। আসাদ সরকারকে উৎখাতের জন্য এইচটিএস ও এসএনএ হাত মিলিয়ে কাজ করলেও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) এখনো উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্বাধীন শাসন বজায় রেখেছে।
[239324]
সরকারবিরোধী আন্দোলনের শুরুর বছরগুলোতে ইসলামি চরমপন্থি এবং মধ্যপন্থি গোষ্ঠীসহ বিদ্রোহীরা সিরিয়ার বেশিরভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ অর্জন করে। ২০১৪ সালের মধ্যে তারা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, হামা, দামেস্কের নিকটবর্তী এলাকা, ইসরায়েলের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত এবং উত্তর-পূর্বে ইউফ্রেটিস ও আল-হাসাকাহ প্রদেশের কিছু অংশে শক্ত ঘাঁটি দখল করে নেয়।
ইন্ডিয়া টুডে লিখেছে, তবে ২০১৪ সালে আইএসের উত্থান এবং আসাদের প্রতি রাশিয়ার সামরিক সমর্থন পরিস্থিতি পাল্টে দেয়। আইএস উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় তাদের আধিপাত্য বিস্তার করে, অন্যদিকে রাশিয়ার বিমান হামলায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো পিছু হটতে বাধ্য হয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইরান ও হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের সহায়তায় আসাদ বাহিনী ২০১৬ সালে আলেপ্পো এবং ২০১৭ সালে ফোরাত নদীর তীরবর্তী শহরগুলো পুনরুদ্ধার করে। ২০১৯-২০২০ সালের মধ্যে সরকারি বাহিনীর চাপের মুখে বিদ্রোহীরা ইদলিব প্রদেশের দিকে যেতে বাধ্য হয়, যাতে তৈরি হয় অচলাবস্থা।
এ বছর নভেম্বরের শেষের দিকে বিরোধী বাহিনী নতুন করে আক্রমণ শুরু করলে সংঘাত আবার শুরু হয় এবং রাজধানীর দিকে অগ্রসর হয়।
এমটিআই