ঢাকা : একের পর এক অভিযোগ প্রকাশ হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অর্থ ও নগরবিষয়ক মন্ত্রী এবং শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে। লন্ডনের ফ্ল্যাট থেকে আয় লুকানো, লন্ডনে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট উপহার, ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তা করানোসহ বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বেশ চাপের মধ্যে পড়েছেন তিনি।
এমনকি ইতিমধ্যে টিউলিপের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের সিদ্ধান্তও নিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এছাড়া এই তদন্তের মধ্যেই সিটি মিনিস্টারের দায়িত্ব থেকে টিউলিপকে সরে দাঁড়ানোর কথাও উঠেছে কয়েকটি মহল থেকে।
এতসব কিছুর মধ্যে আবারও অভিযোগের তীর ছুটলো বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকির বিরুদ্ধে।
শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন করায় এক সাংবাদিককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকির বিরুদ্ধে। ওই সময় সেই সাংবাদিক অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে মন্তব্য করতে ছাড়েননি তিনি।
[241519]
ওই ভিডিও পোস্ট করে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সংবাদ প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ।
ভিডিওতে দেখা গেছে, ২০১৬ সাল শেখ হাসিনার শাসনামলে নিখোঁজ হওয়া ব্রিটিশ-বাংলাদেশি আইনজীবী ব্যারিস্টার আরমানের ব্যাপারে ২০১৭ সালে শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপকে প্রশ্ন করেছিলেন চ্যানেল-৪ এর এক ব্রিটিশ সাংবাদিক। জবাবে সাংবাদিকের উদ্দেশে টিউলিপ বলেছিলেন, ‘খুব সতর্ক থাকুন।’
টিউলিপ হুমকির সুরে বলেন, আমি হ্যাম্পস্টেড এবং কিলবার্নের একজন লেবার এমপি। আমি একজন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য। খুব সাবধান থাকবেন। আমি বাংলাদেশি নই এবং আপনি যার কথা বলছেন, তাদের মামলা সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। আমার বক্তব্য এখানেই শেষ।
শেষের দিকে টিউলিপ অন্তঃসত্ত্বা সাংবাদিক ও প্রডিউসার ডেইজি আইলিফকে বলেন, এখানে আসার জন্য ধন্যবাদ ডেইজি। আশা করি, তোমার সন্তান ভালোভাবে হবে। কারণ, প্রসব খুবই কঠিন। দেখা হবে।
এরপরই তার একজন সহকারী ক্যামেরার সামনে হাত দিয়ে সাংবাদিকদের ভিডিও ধারণ বন্ধ করতে বলেন। ওই সহকারী সাংবাদিকদের প্রশ্নগুলোকে অপ্রাসঙ্গিক ও বেপরোয়া মন্তব্য করে সাংবাদিকদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
চ্যানেল-৪ নিউজের প্রধান সংবাদদাতা অ্যালেক্স থমসন টিউলিপ সিদ্দিকের সে মন্তব্যকে হুমকিস্বরূপ বলে অভিহিত করেছেন। যদিও পরবর্তীতে টিউলিপ স্বীকার করেছিলেন যে, তার কথা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
[241518]
অন্যদিকে ভুক্তভোগী সাংবাদিক আইলিফ গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে একটি পোস্টে তার পুরনো অভিজ্ঞতা নতুন করে শেয়ার করেছেন। তিনি বলেন, যখন আমি ২০১৭ সালে টিউলিপ সিদ্দিকের বাংলাদেশের সঙ্গে তার রাজনৈতিক যোগসূত্র সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করি, তখন তিনি আমাকে ‘সতর্ক থাকতে’ বলেন। এ ঘটনার পর অফকম, পুলিশ এবং আমার বসদের কাছে অভিযোগ করেন এমপি। যদিও কোনো অভিযোগ টিকেনি। কারণ, সৌভাগ্যবশত আসলে যা ঘটেছিল তা ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয়েছে। যদি তা না হতো তাহলে তিনি আমার চাকরি খোয়াতেন।
এখানেই শেষ নয়। সাংবাদিকের চাকরি খোয়াতে না পেরে বসে থাকেননি টিউলিপ। তিনি পরবর্তীতে তার ক্ষমতা ও প্রশাসন ব্যবহার করে আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তা করান বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার আরমান ব্রিটিশ গনমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন যে, ‘চ্যানেল-৪ প্রতিবেদনটি প্রচার করার কয়েক ঘণ্টা আগে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী আমার বাড়িতে যায়। আমার স্ত্রীকে চুপ থাকতে বলে। বাইরের দেশের কার কার সঙ্গে আমার স্ত্রীর যোগাযোগ আছে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করে। তাকে এমনভাবে হেনস্তা করা হচ্ছিল যেন কোনো সন্ত্রাসীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
বাংলাদেশের দুর্নীতির সঙ্গে টিউলিপের সংশ্লিষ্টতা সামনে আসার আগে ২০২৪ সালের আগস্টে ফ্ল্যাট থেকে ভাড়া পাওয়ার বিষয়টি লুকানো নিয়ে সংসদীয় তদন্তের মুখে পড়েছিলেন তিনি। সেই তদন্তে তিনি পার হয়ে যান। পরে এ নিয়ে প্রক্রিয়াগত প্রশাসনিক ভুল হয়েছিল বলে ক্ষমা চান।
[241506]
পরবর্তীতে জানা যায়, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ী কাছ থেকে ২০ লাখ পাউন্ডের ফ্ল্যাট উপহার পেয়ে সেখানে বসবাস করছেন এবং আগের ফ্ল্যাট থেকে ভাড়া নিচ্ছেন তিনি।
আরও প্রকাশ হয় যে, টিউলিপ তার বোন আজমিনার (৩৪) মালিকানাধীন ৬.৫ লাখ পাউন্ড দামের আরেকটি ফ্ল্যাটে বসবাস করেছেন। ওই ফ্ল্যাটও তাদের খালার এক উপদেষ্টার কাছ থেকে পাওয়া। এছাড়া উত্তর লন্ডনে তাদের মা ১৪ লাখ পাউন্ডের যে পারিবারিক বাড়িতে বাস করেন, তার মালিক বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ একটি শিল্পগোষ্ঠীর একজন কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তার বাবা হাসিনা সরকারের মন্ত্রী ছিলেন।
তবে নিজের সম্পত্তির সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার যোগসূত্রের বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করেছেন টিউলিপ।
এদিকে বাংলাদেশে রূপপুর প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগের পর দুদকের অনুসন্ধান শুরুর বিষয়টিও উঠে এসেছে দ্য টাইমসের সম্পাদকীয়তে। এরপর থেকেই মন্ত্রীর পদ থেকে তার সরে দাঁড়ানোর চাপ বাড়ছে।
এমটিআই