ঢাকা : স্বাধীনতাযুদ্ধে নিজ মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রণাঙ্গনে লড়ে গেছেন অনেক নারী। নিজের জীবনকে তুচ্ছ মনে করে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন দেশমাতৃকার তরে। এমন সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একজন অধ্যাপক ড. এসএম আনোয়ারা বেগম অন্যতম। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা নারীর সহোদর বোন মনোয়ারা বেগম ও ভাই সরদার রশিদও ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা।
বর্তমানে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারীরাও এগিয়ে যাচ্ছে সমান তালে। শিক্ষা ক্ষেত্রে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের অবস্থান, নিরাপত্তা ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তাদের ভূমিকা এবং তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সম্প্রতি সোনালীনিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপিকা আনোয়ারা বেগম। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মাহমুদ তানজীদ।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স এবং জাহাঙ্গীরনগর থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৫৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালীর কালিকাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন দুই সহোদর আনোয়ারা বেগম (আনু)। মা-বাবা, পাঁচ বোন ও এক ভাই নিয়ে ছিল তাদের পরিবার।
এ ছাড়া, শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য আনোয়ারা ‘ডা. এমএ ওয়াজেদ মিঞা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন’ কর্তৃক ২০১৫ সালে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি একাধিক সম্মাননা পদক লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ও বোর্ডের পাঠ্যপুস্তকসহ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ও গবেষণাধর্মী লেখা রয়েছে।
সোনালীনিউজ : গবেষণায় জবি নারী শিক্ষকরা কতটুকু এগিয়ে আছে?
আনোয়ারা : আমি দীর্ঘদিন শিক্ষার কাজে বাইরে ছিলাম তাই এই সম্পর্কে আমার ধারণা নাই।
সোনালীনিউজ : নারী শিক্ষকদের আলাদা কোনো সংগঠন আছে কিনা?
আনোয়ারা : আশা আছে, আলাদা কোনো সংগঠন নাই।
সোনালীনিউজ : যৌন নির্যাতন নিয়ে নারী শিক্ষকদের ভূমিকা আছে?
আনোয়ারা : হ্যাঁ, ক্যাম্পাসে যেকোনো ধরনের অপর্কমকে ঘৃণা করি এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাই।
সোনালীনিউজ : ইসলামিক ও চারুকলা বিভাগে নারী শিক্ষক নাই কেন?
আনোয়ারা : এটাতো বলতে পারি না হয়তো নারী প্রার্থীদের যোগ্যতা থাকে না তাই নাই। তাছাড়া নারী শিক্ষক নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে আলাদা কোনো শর্ত নাই।
সোনালীনিউজ : মুক্তিযুদ্ধ করে শিক্ষকতা জীবনে আসলেন কিভাবে?
আনোয়ারা : পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমে আমার এতটুকু পথ আসা। অনেক হুমকি আসে তার জীবনে কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে এসেছেন তিনি।
সোনালীনিউজ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আপনার অনুভূতিটা কী?
আনোয়ারা : বঙ্গবন্ধুর ১৫ আগস্ট নিয়ে আমার লেখা বই আছে। বঙ্গবন্ধুর হাতের পরশ আমার মাথায় লেগেছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণের পেছনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অবিস্মরণীয় অবদান রয়েছে যা এদেশের সাধারণ মানুষ এখনো ভালো করে জানে না। ঊনসত্তরের আন্দোলনে আমি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আটক হওয়ার পর আনোয়ারা বঙ্গবন্ধুর পরিবারের পাশে থাকেন।
সোনালীনিউজ : ৬৯ ও ৬৬-এর আন্দোলনে আপনার কোনো ভূমিকা ছিল?
আনোয়ারা : ১৯৬৮-৬৯ সালের গণঅভুত্থান আন্দোলনে আনোয়ারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন ছিল রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি।
সোনালীনিউজ : আপনার মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ কোথায় থেকে নেওয়া হয়?
আনোয়ারা : ১৯৭১ সালে পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ছাত্রী ছিলেন আনোয়ারা। সেখানে ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ হলে এলাকার তরুণদের সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। এলাকায় বেশ কিছু বাংকার তৈরি করেছিলেন। ৯ নম্বর সেক্টরের অধীনে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন আনোয়ারা। পটুয়াখালী জুবিলী কলেজ মাঠে অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ২৬ মার্চ থেকে প্রায় এক মাস প্রশিক্ষণ নেন। দীর্ঘ সাত মাস সুন্দরবন এলাকায় যুদ্ধরত ছিলেন।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর