ঢাকা : রান্নার মসলা হিসেবে অতি সুপরিচিত নাম লবঙ্গ। এটি মিষ্টি ও সুগন্ধযুক্ত মশলা হিসেবেই বেশি পরিচিত। যেকোনো ধরনের খাবারে স্বাদ আনতে ব্যবহার করা হতে থাকে লবঙ্গ। তবে স্বাস্থ্যের উপকারিতার দিক থেকেও লবঙ্গের অবদান অনেক।
লবঙ্গ কি?
লবঙ্গের ইংরেজি নাম হল ক্লোভ এবং এর বিজ্ঞানসম্মত নাম হল সিজিজিয়াম অ্যারোমাটিকাম। ‘লবঙ্গ’ গাছের ফুলের কুড়িকে শুকিয়ে লবঙ্গ তৈরি করা হয়। একে লং বলেও ডাকা হয়। লবঙ্গের সুগন্ধের মূল কারণ “ইউজেনল”নামক যৌগ।
লবঙ্গের পুষ্টিগুণ
ইউএসডিএ (ইউনাইটেড স্টেট ডিপার্ট্মেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার) এর তথ্যমতে, প্রতি ১০০ গ্রাম লবঙ্গে, প্রোটিন ৬ গ্রাম, লিপিড ১৩ গ্রাম,কার্বোহাইড্রেট ৬৫ গ্রাম , সুগার ২ গ্রাম , শক্তি ২৭৪ কিলো-ক্যালোরি এবং ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে ৩৩ গ্রাম।
এ ছাড়া লবঙ্গে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ যার মধ্যে রয়েছে- আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম এবং জিংক উপাদান।
লবঙ্গের তেলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অ্যাসিটাইল ইউজেনল, বেটা-ক্যারোফাইলিন, ভ্যানিলিন, ক্র্যাটেগলিকঅ্যাসিড, ট্যানিন, গ্যালোট্যানিক অ্যাসিড, মিথাইল স্যালিসাইলেটসহ ইত্যাদি।
লবঙ্গের উপকারিতা
১. হজম ক্ষমতা বাড়ায় : হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে লবঙ্গ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। কারণ লবঙ্গতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার, যা হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, ডিসপেপসিয়া, এরাফ্লাটুলেন্স, এবং নসিয়ার মতো সমস্যা হাত থেকে মুক্তি দিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে লবঙ্গ।
২. দাঁতের ব্যথা কমায় : লবঙ্গ দাঁতের ব্যথা দূরকরে। মাড়ির ক্ষয় নিরাময় করে। লবঙ্গতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর নিমেষে দাঁতের যন্ত্রণা কমে যায়। পাশাপাশি মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে এই লবঙ্গ। প্রায় সব টুথপেস্টের কমন উপকরণ এই লবঙ্গ।
৩. বমি বমি ভাব দূর করে : ট্রেনে বা বাসে যাওয়ার সময় যদি মাথা ঘুরতে থাকে ও বমি এসে যায়, তাহলে মুখে একটি লবঙ্গ রেখে সেই রস চুষলে বমি ভাব ও মাথা ঘোরা কমে যাবে। গর্ভবতী মায়েরা সকালের বমিবমি ভাব দূর করতে লবঙ্গ চুষতে পারেন। লবঙ্গের ঝাঁঝালো গন্ধ বমি বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
[205548]
৪. মাথা ব্যথা ও স্ট্রেস কমায় : ধোঁয়া, রোদ এবং ঠান্ডার জন্য শ্লেষ্মা বেড়ে নানা ধরনের মাথা ব্যথা বা মাথার রোগ দেখা দিতে পারে। মাথা ব্যথা কমাতে লবঙ্গের উপকারিতা অপরিসীম। এ ছাড়া ক্লান্তি ভাব বা স্ট্রেস কমাতে লবঙ্গ খুবই উপকারী একটি উপাদান। প্রতিনিয়ত নিয়ম করে ১টি অথবা ২টি লবঙ্গ চুষে খাওয়া হলে স্ট্রেস অথবা ক্লান্তি ভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
৫. খাবারে রুচি বৃদ্ধি করে : বিভিন্ন রোগ বিশেষ করে পেটের রোগে এবং জ্বরে ভোগার পরে খাবারে অরুচি দেখা দেয়। ভাত-রুটি, মাছ-মাংস, মিষ্টান্ন বা যে কোন উপাদেয় খাবারে পর্যন্ত রুচি হয় না সেক্ষেত্রে লবঙ্গ চুর্ণ সকালে খালি পেটে দুপুরে খাবারের পরে খেলে খাবারে রুচি ফিরে আসবে।
৬. বায়োঅ্যাক্টিভ উপাদান বিদ্যমান : লবঙ্গতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিকারসিনোজেনিক, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়া, অ্যান্টিইনফ্লেমেটোরি, হেপাটো-প্রোটেক্টিভসহ আরো অনেক বায়ো অ্যাক্টিভ উপাদান পাওয়া যায়। লবঙ্গ কলেরা, যকৃতের সমস্যা, ক্যান্সার, শরীরে ব্যথা ইত্যাদি থেকে শরীরকে রক্ষা করে। অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ যে কোনও ধরনের জীবাণুকে মেরে ফেলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৭. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে : ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন তৈরি হতে পারে না। গবেষণায় দেখা গেছে, লবঙ্গের রস শরীরের ভিতরে ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে ও কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, এবং রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৮. ত্বকের সংক্রমণ সারায় : আসলে লবঙ্গে উপস্থিত ভোলাটাইল অয়েল শরীরে উপস্থিত টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। সেই সঙ্গে জীবাণুদেরও মেরে ফেলে। ফলে সংক্রমণ জনিত কষ্ট কমতে একেবারেই সময় লাগে না। ঘা পচড়া হতে পারবে না।
লবঙ্গের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া
১. অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে লবঙ্গ খেলে অ্যালার্জি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
২. অতিরিক্ত লবঙ্গ খেলে অনেক সময় রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যেতে পারে যা শরীরে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।
৩. অতিরিক্ত লবঙ্গ খেলে এতে থাকা ইউজেনল রক্তকে পাতলা করে ফেলে।
৪. বেশি পরিমাণে লবঙ্গ খেলে মাথা ঘোরা, বমি বমিভাব সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এমটিআই