ঢাকা: বসন্তের হালকা হিমেল রোদ্দুর মেখে নয়, গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে পুড়ে এবার নিতে হবে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ। সঙ্গে রয়েছে মহামারি করোনার চোখ রাঙানি। আবহাওয়ার পূর্বাভাসও ভালো নয়। যেকোনো সময় হতে পারে ঝড়-বৃষ্টি। এসব মাথায় নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির বইমেলা এবার হচ্ছে স্বাধীনতার মাস মার্চে। চলবে পহেলা বৈশাখ, ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) বেলা ৩টায় প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২১’ উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। একইসঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘আমার দেখা নয়াচীন’র ইংরেজি অনুবাদ ‘new china 1952’ মোড়ক উন্মোচন করবেন। মেলার উদ্বোধনী দিনে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২০ প্রদান করা হবে।
এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী ও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. বদরুল আরেফীন।
এবারের বইমেলা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সাক্ষী হয়ে থাকবে। মেলার মূল দুই প্রাঙ্গণ বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সাজানো হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের থিমে। তবে দেশে করোনা মহামারি বেড়ে যাওয়ায় কতদিন মেলা চলবে তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মেলার আয়োজকরা বলছেন, করোনা মহামারি বেড়ে গেলে যেকোনো সময় স্থগিত হতে পারে বইমেলা।
অন্যদিকে এবারের বইমেলা মার্চে শুরু হওয়ায় ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কাও রয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মেলার অকাঠামো নির্মাণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চারটি জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। তবে ঝড়-বৃষ্টির কারণে মেলার অভ্যন্তরে বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়লে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন প্রকাশকরা।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে সরেজমিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মূল মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মেলার স্টলগুলোর ভেতরে-বাইরে চলেছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার ভিড় এড়াতে স্টলের সামনে ফাঁকা জায়গা থাকছে বেশি এবং একটি থেকে আরেক স্টলের দূরত্বও বাড়ানো হয়েছে বেশি।
আয়োজকরা বলছেন, এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের জন্য রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে দিয়ে নতুন করে একটি প্রবেশ ও বের হওয়ার পথসহ তিনটি গেট থাকবে। রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের প্রবেশ গেটের পাশে পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও থাকবে। বিশেষ দিনগুলোয় লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা রাখছেন আয়োজকরা। পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য মেলাজুড়ে তিন শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
বাংলা একাডেমি থেকে জানানো হয়েছে, বইমেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। তবে এবার করোনার ঝুঁকির কারণে মেলার প্রথমদিন থেকে থাকছে না ‘শিশু প্রহর’। তবে পরবর্তীতে করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে হয়তো ঘোষণা আসতে পারে শিশু প্রহরের।
করোনারভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় এবার একুশে বইমেলার আয়তন দ্বিগুণ বাড়িয়ে প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুট করা হয়েছে। এবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৭টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫৪টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৮০টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সব মিলেয়ে ৫৪০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৩৪টি ইউনিট এবং ৩৩টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল মেলা প্রাঙ্গণে ১৩৫টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দের পাশাপাশি পাঁচটি উন্মুক্ত স্টলসহ ১৪০টি স্টল দেওয়া হয়েছে।
বাংলা একাডেমির পরিচালক ও বইমেলার সদস্য সচিব জালাল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরই অমর একুশে বইমেলা সবার জন্য খুলে দেওয়া হবে। করোনার কারণে এবার মেলার প্রথমদিন থেকে থাকছে না ‘শিশু প্রহর’। যদি পরবর্তীতে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়, তখন শিশু প্রহর হবে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, এবার বইমেলায় স্বাস্থ্যবিধিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এজন্য মেলায় প্রবেশ এবং অভ্যন্তরে প্রত্যেক ব্যক্তির মুখে সঠিকভাবে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা থাকবে। একইসঙ্গে মেলার প্রতিটি প্রবেশমুখে জীবানুনাশক ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকবে।