প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলা আজ থেকে শুরু

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩, ০১:২৫ পিএম

ঢাকা : নেই মাস্ক বা স্বাস্থ্যবিধি মানার বাধ্যবাধকতা। নেই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নিয়ম। মনের আনন্দে প্যাভিলিয়ন আর স্টলে ঘুরে সংগ্রহ করা যাবে প্রিয় বইটি। করোনাকালের বিভীষিকা পেরিয়ে আজ ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা ২০২৩।

বাংলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী এ বইমেলা বেলা ৩টায় প্রধান অতিথি হিসাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ছোটন। অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ প্রদান করা হবে।

অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ এর স্লোগান, ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। এবার বইমেলা সুবিশাল বিস্তৃতি নিয়ে হলেও আঙ্গিকগত কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। বইয়ের সব প্যাভিলিয়ন ও স্টল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং বাংলা একাডেমির মূল অংশেই থাকছে। আর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের অংশে থাকছে সব খাবারের দোকান, নামাজের স্থান, টয়লেট। এবার কোনো অবস্থাতেই মেলার বিভিন্ন অংশে খাবারের দোকান করতে দেওয়া হবে না।

এবারের বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায়। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২ প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯ প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় ৩৮টি প্যাভিলিয়ন থাকছে। লিটলম্যাগ চত্বরে ঠাঁই পেয়েছে ১৫৩টি স্টল।

ছুটির দিন ছাড়া মেলা প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। তবে দর্শক, ক্রেতা, পাঠকদের রাত সাড়ে ৮টার পর মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। ছুটির দিন বইমেলা বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে।

শিশুচত্বরটি এবার মন্দির-গেটে প্রবেশের ঠিক ডানদিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে। যেন শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাক্সিক্ষত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে। প্রতিদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে।

বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার অংশ হিসাবে ডিজিটাল ডিসপ্লেতে জমাকৃত নতুন বইয়ের প্রচ্ছদ, তথ্য এবং বইমেলার মানচিত্র পর্যায়ক্রমে প্রদর্শিত হবে।

বইমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। মেলাপ্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (সমগ্র মেলাপ্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এবং দোয়েল চত্বর থেকে শহিদ মিনার হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চানখাঁরপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত) নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকছে।

বইমেলা নিয়ে নিরাপত্তা হুমকি নেই : অমর একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই। তবে তাতে আত্মতুষ্টিতে ভুগছে না ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। বইমেলাকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মঙ্গলবার সকালে অমর একুশে বইমেলা-২০২৩ নিরাপত্তার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।

তিনি বলেন, কেউ যেন উসকানিমূলক বই প্রকাশ না করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না লেখেন। আমাদের সাইবার ইউনিট কাজ করছে?। বইমেলায় আসতে লেখক-প্রকাশকরা কোনো ধরনের হুমকি মনে করলে আমাদের জানালে আমরা ব্যবস্থা নেব। মেলাকেন্দ্রিক নিরাপত্তার পাশাপাশি শহিদ মিনারকেন্দ্রিক ও শাহবাগ-নীলক্ষেতকেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশে তল্লাশি দল থাকবে, সন্দেহজনক কিছু দেখলে তারা তল্লাশি করবে। মেলা প্রাঙ্গণে সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক পোশাকধারী সদস্যও মোতায়েন থাকবেন। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিত মেলা প্রাঙ্গণে আসবেন এবং নিরাপত্তা বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করবেন।

চ্যানেল আইয়ের আয়োজন : অমর একুশে বইমেলা নিয়ে বরাবরের মতো চ্যানেল আইয়ের রয়েছে ভিন্নরকম আয়োজন। দীর্ঘ ১৯ বছর ফেব্রুয়ারিতে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে আসছে চ্যানেলটি। লেখকদের সাক্ষাৎকার, আড্ডার পাশাপাশি নতুন বইয়ের পরিচিতি পাঠ করা হয়। চ্যানেল আই ভবনে মঙ্গলবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মেলায় সম্প্রচারের বিস্তারিত তুলে ধরেন চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর।

ভিজ্যুয়ালি অংশ নেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। মেলার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরেন ঐক্যডটকমডটবিডির পক্ষে আমীরুল ইসলাম, বিবিএস ক্যাবলসের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদার, অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, আনন্দ আলো সম্পাদক রেজানুর রহমান ও বাচসাস সভাপতি রাজু আলীম।

ঐক্যডটকমডটবিডি-চ্যানেল আই সরাসরি বইমেলার এবারের অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করবেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, অভিনেতা শহিদুল আলম সাচ্চু, শাহরিয়ার নাজিম জয়, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি ও সাফি আহমেদ। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচার করবে চ্যানেল আই।

সোনালীনিউজ/এমটিআই