ঢাকা: পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সত্য প্রকাশ করায় ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির (ঢাকসাস) সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের স্টাফ রিপোর্টার নিয়াজ মাহমুদের বিরুদ্ধে এলআর এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করার হুমুকির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকসাস।
ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজের এ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মাহমুদুল হাসান এবং সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন সাগর এক বিবৃতিতে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, প্রকাশক কাজী আনিস আহমেদ এবং স্টাফ রিপোর্টার ও ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরোমের (সিএমজেএফ) সদস্য নিয়াজ মাহমুদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করার হুমকি দিয়ে এলআর গ্লোবাল গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করেছে। এ ধরনের হুমকি মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের বিকাশের অন্তরায়। এছাড়া এটি সংবাদপত্রে স্বাধীনতা সংক্রান্ত সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থি।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ স্বাধীন সাংবাদিকতায় নগ্ন হস্তক্ষেপ করায় এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশকে অনতিবিলম্বে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বানও জানান।
প্রসঙ্গত, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ-এর প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা (সিআইও) রিয়াজ ইসলামের অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ঢাকা ট্রিবিউন-এর সম্পাদক, প্রকাশক ও প্রতিবেদককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার হুমকি দিয়ে গত রোববার (২৮ মার্চ) ঢাকা ট্রিবিউনে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ ঘটনায় ইতোমধ্যে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিষ্টস ফোরামের (সিএমজেএফ)। সংঘঠনটির সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে এলআর গ্লোবালের বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ নিয়ে অনিয়ম, অর্থ আসাৎ, মূল্যায়ন রিপোর্ট জালিয়াতি এবং বিদেশি অংশীদারদের লভ্যাংশের বিষয়টি বাজারে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। নিয়ন্ত্রকসংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তদন্ত রিপোর্টেও এর প্রমাণ মিলেছে। বিদেশি শেয়ার হোল্ডাররাও এ ব্যাপারে বিএসইসিতে লিখিত অভিযোগ ও আইনি নোটিশ দিয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করা গণমাধ্যমের কাজ। কিন্তু এই রিপোর্টের কারণেই মামলার হুমকি দিয়েছে এলআর গ্লোবাল। আইনি নোটিশে পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশককেও একই হুমকি দেয়া হয়েছে।
সিএমজেএফ মনে করে, এ ধরনের হুমকি মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম বিকাশের অন্তরায়। এছাড়াও এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সংক্রান্ত সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী।
উল্লেখ্য, এলআর গ্লোবালের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তার নানান অনিয়ম নিয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে বিস্তর অভিযোগ জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির বিদেশি অংশীদাররা। এ বিষয়ে তদন্তও করেছে বিএসইসি। তদন্তে এলআর গ্লোবালের সিআইও রিয়াজ ইসলামের মানি লন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে বিধিবহির্ভূতভাবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরডটকম-এ বিনিয়োগ ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় স্বেচ্ছাচারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এসব অনিয়মে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বিদেশি উদ্যোক্তারা এখন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে। বলা হয়েছে, রিয়াজ ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বিএসইসির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমন পরিস্থিতিতে ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউন-এর সম্পাদক, প্রকাশক ও প্রতিবেদককে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করার হুমকি দিল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ।
এ নিয়ে ঢাকা ট্রিবিউনের স্টাফ রিপোর্টার নিয়াজ মাহমুদ গণমাধ্যমে বলেন, ‘যে সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এল আর গ্লোবাল লিগ্যাল নোটিশ ও ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলার হুমকি দিয়েছে, তার সব দলিল আমার কাছে আছে। সে পরিপ্রেক্ষিতেই সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। তারা লিগ্যাল নোটিশটি ২১ মার্চ ইস্যু করেছে, কিন্তু আমি ২৮ মার্চ তা রিসিভ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আতংকের বিষয় হচ্ছে, সব তথ্যপ্রমাণ থাকার পরও এলআর গ্লোবাল লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে। তবে কি সব ধরনের তথ্যপ্রমাণ থাকার পরও সংবাদ প্রকাশ করা যাবে না? এই কার্যক্রমের মাধ্যমে এল আর গ্লোবাল তাদের দুর্বলতাকে প্রকাশ করল।’
সোনালীনিউজ/এমএইচ