ঢাকা : করোনা টিকা দেশে আসার আগে ও পরে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের সংশয়ের কথা বলেছিলেন। তবে করোনাভাইরাসের গণটিকা শুরু হওয়ার আগে ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে টিকা নিয়ে অজানা ভীতি। আর টিকা নিবন্ধনের গতি বেড়েছে।
জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন এক লাখ মানুষ। যেখানে এর আগের আট দিনে নিবন্ধন হয়েছিল দেড় লাখ।
গত ২৭ জানুয়ারি উদ্বোধন হলেও সারা দেশে করোনার গণটিকা প্রয়োগ শুরু হচ্ছে আগামী রোববার। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যারা টিকা নিতে আগ্রহী তাদেরকে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। যদিও পরে সিদ্ধান্ত পাল্টে জানানো হয়, যারা অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন না, তারা টিকাদান কেন্দ্রে গিয়েও ফরম পূরণ করতে পারবেন। অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হয়েছে ২৭ জানুয়ারি টিকা দান উদ্বোধনের দিন থেকেই। নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা অ্যাপ তৈরি করা হলেও সেটি অবশ্য গুগল প্লে স্টোরে আসেনি। নিবন্ধন চলছে ওয়েবসাইটে।
২৭ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি বেলা দুইটা পর্যন্ত দেড় লাখ মানুষ টিকার জন্য নিবন্ধন করা হয়। তবে টিকা প্রয়োগ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে নিবন্ধনের গতিও বেড়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন এক লাখের বেশি মানুষ।
রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমন তথ্য জানান
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা। টিকাদান কর্মসূচির বাস্তবায়নের কারণে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি সাপ্তাহিক ছুটির দিনও অফিস করছেন।
নাসিমা জানান শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত দুই লাখ ৪৬ হাজার ২৬৭ জন মানুষ নিবন্ধন করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন টিকার কার্যক্রমে বা স্বাস্থ্য সেবা দিতে যে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি যান, তারা অপারগদের টিকার নিবন্ধন করতে সহায়তা করবেন। এছাড়াও ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রেও তারা সহযোগিতা পাবেন। তাদের নিবন্ধন করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহায়তা করা হবে।’
এই নিবন্ধনে ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা হাসপাতালে কর্মরত স্বাস্থ্যসেবা সহকারী কর্মীরা সহযোগিতা করবে বলেও জানান নাসিমা। নিবন্ধন নিয়ে কোনো সমস্যা হলে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করার পরামর্শও দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।
টিকা নিয়ে অপপ্রচারে কান না দিয়ে, টিকা নেওয়ার আহ্বানও জানান নাসিমা। তিনি বলেন, দেশে এ পর্যন্ত যে ৫৬৭ জন টিকা নিয়েছেন, তারা সবাই সুস্থ আছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) লাইন ডিরেক্টর মিজানুর রহমান বলেন, টিকা নিতে এখন পর্যন্ত ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই আবেদন করতে হবে। এখন সুরক্ষা অ্যাপটি চালু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আগে ঘোষণা ছিল, সুরক্ষা অ্যাপটি নিবন্ধন শুরুর দিনই অবমুক্ত করা হবে। সেটি কেন করা গেল না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ প্রায় শেষ। গুগলের কিছু শর্ত রয়েছে, সেগুলো পূরণ হলেই অ্যাপটি উন্মুক্ত করা হবে।’
তবে কবে সেসব শর্ত পূর্ণ হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তারিখ না দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি। উন্মুক্ত হলে আমরা অবশ্যই আমাদের সংবাদ বিবৃতির মাধ্যমে জানাব।’
এই কর্মকর্তা জানান, প্রথম পর্যায়ের টিকা সবার জন্য উন্মুক্ত না হলেও ৫৫ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সী যে কেউ নিবন্ধন করতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার তালিকায় থাকার প্রয়োজন নেই। ৫৫ বছরের কম বয়সী যারা অগ্রাধিকার তালিকায় আছেন কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে পারেননি, তাদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমাদের মেইলে (ষরহবফরৎবপঃড়ৎ—সরং.ফমযং.মড়া.নফ) জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর পাঠাতে হবে।’
প্রয়োগের জন্য বাংলাদেশের হাতে আছে ৭০ লাখ টিকা। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্রবাহিনী, জনপ্রতিনিধি, সরকারের অত্যাবশ্যকীয় কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা ও ৫৫ বছরের বেশি বয়সীরা প্রথম ধাপে টিকা পাবেন।
প্রয়োগের জন্য বাংলাদেশ ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ৪০ লাখ টিকা কিনেছে, যেটির উদ্ভাবক অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির। এ ছাড়া সারা বিশ্বে ন্যায্যতার ভিত্তিতে বিতরণের জন্য গড়ে উঠা জোট কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া যাবে আরো পৌনে সাত কোটি টিকা। এই টিকাও আসবে সিরাম থেকেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে ও গর্ভবতী কাউকে করোনার টিকা দেওয়া হবে না।
এ ছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত অ্যালার্জি, অন্য টিকা নিয়ে আগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে এমন ৮০ শতাংশের বেশি মৃত্যুঝুঁকি আছে এমন রোগীকে করোনার টিকা দেওয়া হবে না।
সোনালীনিউজ/এমটিআই