ঢাকা: জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের পৌনে দুই লাখ আবেদন দিনের পর দিন ধরে পড়ে আছে কর্মকর্তাদের টেবিলে। বিষয়টি নজরে আসায় কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে দ্রুত আবেদন নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এনআইডিগুলো সংশোধনের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদনগুলোর মধ্যে ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ ক্যাটাগরির আবেদনগুলো নিষ্পত্তির জন্য থানা/উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে।
ইসির তথ্যানুযায়ী, এনআইডি সেবা আধুনিক করতে গত বছরের ২৬ এপ্রিল থেকে অনলাইনে এনআইডি সেবা কার্যক্রম চালু হয়। ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ ও ‘ঘ’ ক্যাটাগরি করে সংশোধনের জন্য মাঠপর্যায়ের নির্বাচন অফিসারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ‘ক’ ক্যাটাগরিতে থানা নির্বাচন অফিসাররা এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার ৬২৮টি অবেদন নিষ্পন্ন করেছেন। এই ক্যাটাগরিতে অনিষ্পন্ন রয়েছে ৫৩ হাজার ৬৯৬ জনের আবেদন। ‘খ’ ক্যাটাগরিতে জেলা নির্বাচন অফিসাররা নিষ্পন্ন করেছেন ৪৭ হাজার ২৫৭ জনের অবেদন, অনিষ্পন্ন রয়েছে ৪৩ হাজার ৭৭৩টি। ‘গ’ ক্যাটাগরিতে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা নিষ্পন্ন করেছেন ২১ হাজার ৪২৭ জনের আবেদন। এই ক্যাটাগরিতে ১০ জন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে অনিষ্পন্ন রয়েছে ৬৯ হাজার ৪৯টি আবেদন। সবচেয় বেশি আবেদন এই ক্যাটাগরিতে রয়েছে।
এছাড়া ‘ঘ’ ক্যাটাগরিতে নিষ্পন্ন করা হয়েছে মাত্র ৩১২টি আবেদন। অনিষ্পন্ন রয়েছে ১২৪৬ ভোটারের আবেদন।
এনআইডি মহাপরিচালকের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে ১০টি আঞ্চলে ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ এই তিন ক্যাটাগরিতে বিপুল সংখ্যক সংশোধনের আবেদন দীর্ঘদিন ধরে অনিষ্পন্ন অবস্থায় পড়ে আছে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে আবেদনগুলো নিষ্পন্নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
“আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সব থানা/উপজেলা ও সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা তার দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘ক' ও 'খ’ ক্যাটাগরির সব আবেদন নিষ্পন্ন করে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে রিপোর্ট পাঠাবেন। আগামী ১ জুলাইয়ের মধ্যে অঞ্চল ও ক্যাটাগরি (জেলা, থানা/উপজেলা) ভিত্তিক নিষ্পন্ন ও অনিষ্পন্ন আবেদনের সমন্বিত রিপোর্ট উপ-পরিচালক, জাতীয় পরিচয়পত্র বরাবর দেওয়ার জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হলো।”
ইসি কর্মকর্তারা জানান, কিছু কর্মকর্তার অবহেলার কারণে এনআইডি সেবা নিতে এসে একের পর এক সমস্যায় পড়ছেন ভোটাররা। অনেক সেবাগ্রহীতা মাসের পর মাস ঘুরেও সেবা পাচ্ছেন না।
ইসির ভুলের কারণে এনআইডি নিয়ে হয়রানিতে কোটি ভোটার। সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলা, অনিয়ম ও ইচ্ছাকৃত ভুলের কারণে অসহায়ের মতো ঘুরছেন সেবাপ্রার্থীরা। বর্তমানে এনআইডি’র নতুন ডিজি সংশোধনীর জট সমাধানে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। এই কর্মসূচি সফল হলে কোটি ভোটার উপকৃত হবেন।
ইসিসংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত যারা ভোটার হয়েছেন, এমন কয়েক কোটি ভোটারের দ্বিতীয় ফরম ইসির অনলাইনে নেই। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ফেলে রাখায় এসব ফরমের মধ্যে বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ইসির অপারেটররা এনআইডিতে ভুল লিখলেও সেটা চেক করার সুযোগ থাকছে না ভোটারদের। পরবর্তীতে ভুল এনআইডি’র সংশোধন করতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন ভোটাররা।
এ বিষয়ে জানতে এনআইডি’র মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবীরকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সারাদেশের সংশোধিত এনআইডি’র ফাইলগুলো দ্রুত নিষ্পন্নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। থানা/উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে যেসব সংশোধিত আবেদন রয়েছে, সেগুলো আগামী ৩০ জুনের মধ্যে নিষ্পন্ন করতে বলা হয়েছে।
সোনালীনিউজ/এইচএন