চ্যালেঞ্জের মুখে টিকা কার্যক্রম!  

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২১, ০৫:৫৮ পিএম

ঢাকা : দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। মৃত্যু সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বেশ কয়েক দিন আগে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে আতঙ্কের মধ্যেই রয়েছে জনগণ। এর মধ্যেই টিকা সরবরাহের অনিশ্চয়তায় প্রয়োগ কার্যক্রম ঝুঁকির মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বর্তমানে যে টিকা মজুত আছে, তাতে এপ্রিল মাসে কোনো সমস্যা হবে না। তবে মে মাসের মধ্যে টিকা না এলে কার্যক্রম নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। যদিও সেরাম ছাড়া রাশিয়া এবং চীনসহ বিকল্প সব জায়গা থেকে টিকা আনার চেষ্টা চলছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শুরু থেকেই বিকল্প না রেখে একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে  টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত ২৫ জানুয়ারি ৫০ লাখ টিকা আসে বাংলাদেশে। ২১ জানুয়ারি উপহার হিসেবে আরো ২০ লাখ টিকা ঢাকায় পৌঁছায়। ফেব্রুয়ারিতে ৫০ লাখ আসার কথা থাকলেও এসেছে মাত্র ২০ লাখ। সবমিলিয়ে টিকা এসেছিল এক কোটি দুই লাখ ডোজ। মার্চে ৫০ লাখ টিকা আসার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো চালান আসেনি। কবে নাগাদ আসতে পারে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারছে না।

যদিও কোভ্যাক্স বাংলাদেশের ২০ শতাংশ মানুষের জন্য টিকা সরবরাহ করবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ হচ্ছে কোভ্যাক্স- যার আওতায় ১৯০টিরও বেশি দেশে টিকা সরবরাহ করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথম ধাপে বাংলাদেশকে যে এক কোটি ডোজ টিকা দিতে চেয়েছিল, সেরামের অপারগতায় তা-ও অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

প্রথম ডোজের টিকা যে সংখ্যক মানুষ নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রায় দশ লাখ ঘাটতি রয়েছে- যা সরকারি হিসাবেই পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের (এনসিডিসি) পরিচালক ও মিডিয়া সেলের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, আমাদের কাছে যে টিকা আছে, তা দিয়ে এ মাস চলে যাবে। তবে পরবর্তী মাসে যদি আমরা কোথাও থেকে টিকা না পাই, তখনই সংকটে পড়ে যেতে হবে। যা আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

টিকার বিষয়ে চীন বা রাশিয়া- কারো থেকেই এখনো কোনো নিশ্চয়তা আসেনি। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিষয়টি দেখছেন, বিভিন্ন দেশে খোঁজখবর নিচ্ছেন। ভারত, রাশিয়া, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশের সরকারপ্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো ফল আমরা পাইনি। যদিও কোভ্যাক্সের টিকা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিস্ট্রিবিউট শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। আমরাও সেই তালিকায় আছি। ওটা পেলে আমাদের জন্য বড় একটা সুবিধা হবে। 

সেরাম যদি কোভ্যাক্সকেও টিকা না দেয়, তাহলে বাংলাদেশের টিকা পেতে কোনো সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে বলেন, সেরাম কোভ্যাক্সকে টিকা না দিলেও আমাদের টিকা প্রাপ্তিতে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ কোভ্যাক্সের সঙ্গে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের চুক্তি আছে। ফাইজার, জনসনের টিকা কোভ্যাক্স পাচ্ছে। 

সুতরাং সেরাম টিকা না দিলেও বিকল্প টিকা তারা দিতে পারবে- কেননা ওদের কাছে অনেক পোলের টিকা রয়েছে। তাই আমরা আশা করছি টিকা সময়মতো পাওয়া যাবে। আর বাকিটা তো বিভিন্ন দেশের সরকার মহলে যোগাযোগ চলছে। 

কিন্তু তারা যদি এখন অনেক বেশি দরদাম চায়, তাহলে তো এখানে অর্থনৈতিক বিষয়গুলোও দেখতে হবে। তবে বিভিন্ন দিকেই যেহেতু যোগাযোগ চলছে, একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে।

টিকার সংকট থাকলেও প্রথম ডোজ এখনো চলছে। এটা বন্ধের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে কি না জানতে চাইলে বলেন,  টিকা প্রয়োগের উদ্দেশ্য হচ্ছে- বেশি সংখ্যক মানুষকে এর আওতায় আনা। এখন যদি প্রথম ডোজ বন্ধ করে দ্বিতীয় ডোজ দিতে থাকি তাহলে তো ৩ পার্সেন্টেই থাক হলো। এই তিন ভাগ দিয়ে তো কিছুই হবে না। সংক্রমণ এবং মৃত্যু কোনোটাই কমবে না। এ জন্য পরিমাণ যাই থাকুক- যত বেশি পরিমাণে কাভারেজ দেওয়া যায়, সেটাই ভালো।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মো. খুরশিদ আলম বলেন, টিকার ঘাটতি আছে। আমরা সেরামের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, তাগাদা দিয়েছি। এর মধ্যে আমরা আমাদের অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয় থেকে দুবার সেরামকে চিঠিও দিয়েছি। তারাও প্রত্যেকবার বলছে যে এটা অসুবিধ হবে না। 

রাশিয়া এবং চীন থেকে টিকা পাওয়ার নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে বলেন, এটা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তবে দেশ দুটি এ ব্যাপারে আগ্রহী। ইতোমধ্যে আমাদের দুই-তিনটা বৈঠকও হয়েছে। 

টিকা দেবে না, এ কথা কেউ বলছে না। কিন্তু কবে পাওয়া যাবে, সেই নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ভারতের সেরামের কাছ থেকে টিকা নিয়ে বাংলাদেশকে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সেরাম এ মুহূর্তে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও টিকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই