ঈদে ঘরমুখো মানুষ কোনো বাধা মানছে না

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ১০, ২০২১, ১০:১১ পিএম

ঢাকা : করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে ঈদ সামনে রেখে মানুষকে ঢাকা ছাড়তে নিরুৎসাহিত করা হলেও তাতে কর্ণপাত করছে না কেউ। দূরপাল্লার গাড়ি, ফেরি চলাচল বন্ধ রেখে, বিজিবি মোতয়েন করেও  মানুষকে গ্রামের বাড়ি যাওয়া থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে না।

সোমবার (১০ মে) সকালে ফেরিঘাটে দেখা গেছে ঘরে ফেরা মানুষের ঢল। বেলা বাড়ার সঙ্গে মানুষের ঢল আরো বাড়তে থাকে। বিআইডব্লিউটিসি রাতভর ১৫টি ফেরি দিয়ে পারাপার করলেও ভোর থেকে তা বন্ধ করে দেয়। তবে সকাল পৌনে ৮টার দিকে আটটি অ্যাম্বুলেন্সসহ ফেরি ফরিদপুর- ১ নম্বর ঘাট থেকে ছেড়ে যায়।

বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, দিনের বেলায় ফেরি বন্ধ। শুধু জরুরি পরিষেবার কিছু যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। সেই ফেরিতেই লোকজন স্রোতের মতো উঠে যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যেও লোকজন বাড়ি ছুটছেন। কোনো বাধাই মানছেন না। পুরো ফেরি মানুষে ভর্তি হয়ে যেতে সময় লাগে কয়েক মিনিট। লোকজনের চাপে ফেরির ডালা ওঠানো যাচ্ছিল না। পুলিশ তখন লাঠিপেটা করে ফেরির ডালা ওঠানোর ব্যবস্থা করে। পরে গাদাগাদি করে ছোট ফেরিটিতে করে প্রায় দেড় হাজার মানুষ ওপারের কাঁঠালবাড়ি ঘাটের দিকে রওনা দেয়।

বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোহাম্মদ ফয়সাল জানান, সকাল ৮টার দিকে যে ফেরিটি ছাড়া হয়, তাতে ছিল কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স। পরে সকাল ১০টার দিকে ওপর থেকে আসা নির্দেশনায় আরেকটি ফেরি ছাড়া হয়। ফেরি শাহপরানে প্রায় পাঁচ হাজার যাত্রী পার হয়। এরপর ঘাটে চাপ কিছুটা কমে। তবে এখনো পারাপারের অপেক্ষায় আছে কয়েকশ যানবাহন। ফেরিঘাটের আশপাশে জেলে নৌকা ও ট্রলারে করেও অনেকে পদ্মা পার হওয়ার চেষ্টা করেন। পদ্মা নদীর মাওয়া মৎস্য আড়ত সংলগ্ন ঘাট এলাকা, পদ্মা নদীর লৌহজং চ্যানেল এলাকা এবং শিমুলিয়া ঘাট এলাকা থেকে নৌপুলিশ সেসব ট্রলার আটক করে।

মাওয়া নৌ-পুলিশ স্টেশনের ইনচার্জ জেএম সিরাজুল কবির বলেন, ফেরি বন্ধের নির্দেশনার পরও রোববার প্রচুর যাত্রী শিমুলিয়া ঘাটে আসছে। ফেরিতে উঠতে না পেরে অনেকে বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ইঞ্জিন চালিত ছোট ছোট ট্রলারে করে পদ্মা পার হওয়ার চেষ্টা করে। এসব ট্রলারে এক থেকে দেড়শ যাত্রী উঠেছিল। ট্রলারের ১২ জন চালককেও আটক করা হয়েছে।

পাটুরিয়া ঘাটে সকালে চাপ কম থাকলেও দুপুর নাগাদ জড়ো হতে শুরু করেন যাত্রীরা। সকাল থেকে একটি ফেরিই ছয়বার আসা-যাওয়া করে। প্রতিবারই পণ্যবাহী যান ও অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে ফেরিতে ওঠে যাত্রী। তবে সকালে যাত্রীর সংখ্যা কম থাকলেও দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ফেরিতে দেখা যায় যাত্রীদের ঢল। যাত্রী ঠেকাতে এ ঘাটে দেখা গেছে শিবালয় থানা পুলিশের টহল।

এ বিষয়ে কথা হয় শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানিয়া সুলতানা বলেন, ঘাটে পুলিশ আছে। তারা যাত্রীদের সামলাতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে ফেরিঘাটে এলেই যাত্রীরা সব বাধা উপেক্ষা করে ছুটে তাতে উঠছেন।

এই ঘাটের উপব্যাবস্থাপক ফিরোজ শেখ জানান, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভোর থেকে ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনের যান, অ্যাম্বুলেন্স বা লাশবাহী গাড়ি পারাপার করার জন্য একটি ফেরি চলছে। পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ছাড়া হবে রাতে।

বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে দু-একটি ফেরি চললেও ঘাটে দীর্ঘ সময় আটকে আছে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যানবাহন। ঘাটে যাত্রীর সঙ্গে যানবাহনের দীর্ঘ সারি।

এদিকে মাছ, তরমুজসহ কাঁচামালে পচন ধরায় বাংলাবাজার ঘাটে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিসি) লোকজন ও পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। ঘাটে কোনো বিধিনিষেধই মানতে চাইছেন না দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাংলাবাজার ঘাট থেকে দুটি ফেরি অ্যাম্বলেন্সসহ জরুরি যানবাহন নিয়ে পার হয়। তবে যাত্রীদের চাপে জরুরি যানবাহন তোলা পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিসিকে বেগ পেতে হয়।

সকাল থেকেই উভয় পাড়ে যাত্রী ও যানবাহনের প্রচণ্ড ভিড় শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে যাত্রী ও যানবাহনে সয়লাব হয়ে যায় ঘাট এলাকা। ফেরির জন্য অপেক্ষা করছেন যাত্রী ও যানবাহনগুলো। দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে রোগী নিয়ে বাংলাবাজার ঘাটে এসে অ্যাম্বুলেন্সকেও দেখা গেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে। জরুরি সার্ভিস পারাপারে বিলম্ব হওয়ায় সাধারণ যাত্রীদের পাশাপাশি রোগীরাও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

ট্রাকচালক হায়দার আলী বলেন, প্রায় চার দিন ধরে তরমুজ নিয়ে ঘাটে বসে আছি। পকেটে খাবার টাকা নেই। রাতে কাঁচামাল পার করার কথা কিন্তু পার হতে পারছি না। সারা রাতই ট্রাকগুলো একপাশে রেখে প্রাইভেটকার ও যাত্রী পার করছে ফেরি কর্তৃপক্ষ। পুলিশও আমাদের সিরিয়াল দিচ্ছে না।

অ্যাম্বুলেন্সচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, মুমূর্ষু রোগী নিয়ে বরিশাল থেকে সকাল ৭টায় বাংলাবাজার ঘাটে পৌঁছেছি। গাড়ির মধ্যে রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ। রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ফেরি ছাড়ার কথা বললেও সময়মতো ছাড়ছে না। দু-একটি ফেরি এলেও যাত্রীদের চাপে অ্যাম্বুলেন্স ওঠানো যাচ্ছে না। ঢাকায় কখন পৌঁছতে পারব তা জানি না।

অন্যান্য বছর ঈদের এই সময়টাতে গাবতলী থাকতো লোকে লোকারণ্য। গাবতলীতে এবার সে চিত্র নেই, কারণ বাস বন্ধ। তবে আমিনবাজার ব্রিজ পার হলেই দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। হাজারো মানুষ গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। সেখানে সহজেই মিলছে কার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল।

সোমবার (১০ মে) সকালে দেখা গেছে, সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাস, কার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে চেপেই যাত্রীরা যাচ্ছেন আরিচা-পাটুরিয়া ঘাটের দিকে। প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। বাসে জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। তবে প্রশাসনের তৎপরতায় যাত্রীদের গাবতলী থেকে হেঁটে আমিনবাজার গিয়ে ঘাটের গাড়ি ধরতে হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই