ঢাকা : দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর অন্তত দুই মাস পার হয়েছে। সংক্রমণ কমাতে গত ৫ এপ্রিল দেওয়া হয় সরকারি বিধিনিষেধ। ১৬ এপ্রিল থেকে কঠোর বিবিনিষেধ আরোপ করে সরকার, যা এখনো চলছে। এর মধ্যে পার হয়েছে ঈদুল ফিতর। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়া আটকাতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও সেসব উপেক্ষা করেছে মানুষ। কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি।
অথচ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে গণপরিবহন ও বাজার থেকে মানুষের সংক্রমণ হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
দেশে আগে থেকেই ছিল সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট, ইউকে ভ্যারিয়েন্ট ও ব্রাজিল ভ্যারিয়েন্ট। দেশে ঈদের আগেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এই ভ্যারিয়েন্ট অনেক বেশি শক্তিশালী ও সংক্রামক। তা সত্ত্বেও মানুষের মধ্যে বিধিনিষেধ মানার তেমন কোনো প্রবণতা নেই।
সরকার ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বার বার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বললেও তাতে কেউ কর্ণপাত করছে না। শহরে মাস্ক পরার প্রবণতা কম। আর গ্রামের মানুষ করোনা শহরে থাকে। গ্রামে করোনাই নেই।
দরিদ্রদের ধারণা, এটা বড়লোকের অসুখ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা নিয়ে মানুষকে সঠিক বার্তা দিতে এবং এর ভয়াবহতা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে উদাসীন। সাধারণ মানুষকে বোঝানো না গেলে লকডাউনের ফল দীর্ঘস্থায়ী হবে না। যেভাবে মানুষকে মোবিলাইজ করার কথা ছিল, সেটা করতে পারিনি আমরা।
কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৩৪তম সভায় সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের প্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। কমিটি মনে করে, ঈদের আগে যাতায়াত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। মানুষ ঝুঁকি নিয়ে গাদাগাদি করে গ্রামে গেছে। ঈদের পর একইভাবে মানুষ ফিরে আসছে। এতে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বেড়েছে। কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. সহিদুল্লা বাংলা বলেন, সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের কঠোর বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চত করা প্রয়োজন।
জনস্বাস্থ্যবিদ চিন্ময় দাস বাংলা বলেন, স্বাস্থ্যসেবা শুরু হয় বাড়ি থেকে। স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, পরিবারকল্যাণ কর্মীরা বাড়িতে প্রতি মাসে গিয়ে মা ও শিশুস্বাস্থ্যের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার যেসব বার্তা রয়েছে সেগুলো দিয়ে থাকেন, উঠান বৈঠকসহ নানা কাজ করেন। যার কারণে এখন বাংলাদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি এত সাফল্য পেয়েছে। এখন প্রতিটি মা জানেন সন্তানের জন্মের পর টিকা দিতে হবে। কিন্তু করোনার শুরু থেকেই জনগণকে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে। মাঠপর্যায় থেকে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের এখানে কাজে লাগানো হলে রোগী শনাক্ত ও তাদের সংস্পর্শে আসাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যেত। ভিয়েতনাম, ভুটান এভাবেই করোনা প্রতিরোধ করেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল বলেন, করোনার প্রায় দেড় বছরে স্বাস্থ্য বিভাগ সামগ্রিকভাবে কিছু চিন্তা করেনি। এ নিয়ে কোনো তদারকি হয়নি। কারো কোরো জবাবদিহিতাও ছিল না।
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ করোনার সময় নিজেদের দুর্নীতি, দুর্বলতা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। করোনা নিয়ে ভাবার মতো সক্ষমতা তাদের ছিল না।
সোনালীনিউজ/এমটিআই