ঢাকা : দেশে প্রথম ধাপে নির্মিত মডেল মসজিদগুলোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস সৃষ্টি ও মানুষ হত্যা আমাদের ধর্মের ইমেজ নষ্ট করছে। ওলামা একরামদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই পথ সর্বনাশা পথ। এই পথ থেকে দেশের যুবসমাজকে রক্ষা করতে হবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মানুষ হত্যা করে কেউ বেহেশতে যাবে না। এটা ভুল কথা। মানুষকে এটা বোঝাতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুন) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে একসঙ্গে প্রথম পর্যায়ে নির্মিত এসব মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
ইসলামের প্রচার-প্রসার এবং মসজিদকে জ্ঞান চর্চা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে নির্মিত ৫০টি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একসঙ্গে এতগুলো মসজিদ নির্মাণের ঘটনা বিশ্বে বিরল বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
শুধু নামাজ আদায় নয়- মসজিদ হবে গবেষণা, ইসলামী সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র। হারিয়ে যাওয়া ইসলামের চিরায়ত এই ঐতিহ্যকে ধারণ করে দৃষ্টিনন্দন এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার।
তিনি আরও বলেন, সামাজিক কমিটি করে যুবসমাজকে মাদক, সন্ত্রাস, নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানুষকে সোচ্চার করে তুলতে হবে। মাদক সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আজকে আমি সত্যি খুব আনন্দিত। মডেল মসজিদগুলো হতে ইসলামের সঠিক মর্মবাণী প্রচার হবে, ইসলামের সঠিক প্রচার হবে। ইসলামের সঠিক জ্ঞান চর্চা হবে। জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় মুসলমানরা আবারও এগিয়ে যাবে। ধর্ম সম্পর্কে মানুষ যেন সচেতন হয় আমরা তা চাই।
রাজধানী ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, মুসলিম বিশ্বের এই প্রথম কোনও দেশের সরকার প্রধান একসঙ্গে ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণ করছে। এর আগে কোনও মুসলিম শাসক বা সরকারপ্রধান একসঙ্গে এতগুলো মসজিদ নির্মাণ করেননি। এটি একটি অনন্য এবং যুগান্তকারী ঘটনা আমরা বলবো।
একসঙ্গে এতগুলো মসজিদ নির্মাণের যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ধর্ম প্রতিমন্ত্রী দেশের পক্ষ থেকে থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে নিজস্ব অর্থায়নে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে মডেল মসজিদ ও সংস্কৃতি কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করছে সরকার।
আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত সুবিশাল এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সে নারী ও পুরুষদের পৃথক ওজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা, লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র, পবিত্র কুরআন হেফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজ্জযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, অটিজম কেন্দ্র, গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র থাকবে। এ ছাড়া ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা এবং গাড়ি পার্কিং সুবিধা রাখা হয়েছে।
মডেল মসজিদগুলোতে দ্বীনি দাওয়া কার্যক্রম ও ইসলামী সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি মাদক, সন্ত্রাস, যৌতুক, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ বিভিন্ন সামাজিক ব্যাধি রোধে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. নজিবর রহমান জানান, মডেল মসজিদগুলো শুধু নামাজ পড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এখানে ইসলামী সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি জ্ঞান অর্জন ও গবেষণা সুযোগ থাকবে, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে।
তিনি আরও জানান, এটাই হচ্ছে বিশ্বে প্রথম কোনও সরকারের একই সময়ে একসঙ্গে এত বিপুল সংখ্যক মসজিদ নির্মাণের ঘটনা। যা বিশ্বে বিরল।
৫৬০টি মডেল মসজিদে সারাদেশে প্রতিদিন ৪ লাখ ৯৪ হাজার ২০০ জন পুরুষ ও ৩১ হাজার ৪০০ জন নারী একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
লাইব্রেরি সুবিধার আওতায় প্রতিদিন ৩৪ হাজার পাঠক একসঙ্গে কোরআন ও ইসলামিক বই পড়তে পারবেন। ইসলামিক বিষয়ে গবেষণার সুযোগ থাকবে ৬ হাজার ৮০০ জনের। ৫৬ হাজার মুসল্লি সবসময় দোয়া, মোনাজাতসহ তসবিহ পড়তে পারবেন।
মসজিদগুলো থেকে প্রতি বছর ১৪ হাজার হাফেজ তৈরির ব্যবস্থা থাকবে। আরও থাকবে ইসলামিক নানা বিষয়সহ প্রতিবছর ১ লাখ ৬৮ হাজার শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা। ২ হাজার ২৪০ জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসন ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হবে প্রকল্পের আওতায়। কেন্দ্রগুলোতে পবিত্র হজ পালনের জন্য ডিজিটাল নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকবে।
৪০ শতাংশ জায়গার উপর তিন ক্যাটাগরিতে মসজিদগুলো নির্মিত হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে ৪ তলা, উপজেলার জন্য ৩ তলা এবং উপকূলীয় এলাকায় ৪ তলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
এ-ক্যাটাগরিতে ৬৪টি জেলা শহরে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬৯টি চারতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। এই মসজিদগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৩৬০ দশমিক ০৯ বর্গমিটার।
বি-ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার।
সি-ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৫২ দশমিক ১২ বর্গমিটার। উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নীচতলা ফাঁকা থাকবে।
জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মাণাধীন মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ১২শ’ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। অপরপক্ষে উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ৯শ’ মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ