ঢাকা : করোনার কারণে দেশের আয় বৈষম্য ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসমতা আরো বেড়েছে। একদিকে নতুন দরিদ্রের সংখ্যা বাড়ছে, অপরদিকে ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে। এ সংকট থেকে উত্তরণে ভোক্তাবান্ধব অর্থনীতি ও রাজনীতির কোনো বিকল্প নেই বলে মত দিয়েছে ভোক্তার স্বার্থ নিয়ে কাজ করা কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
বুধবার (৯ জুন) ‘উন্নয়ন এবং অসমতায় ভোক্তা অধিকার’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে সংগঠনটি এসব কথা জানায়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ। এ সময় বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক এম শামসুল আলম, অধ্যাপক মলয় ভৌমিক, রাজেকুজ্জামান রতন ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
গোলাম রহমান বলেন, ‘করোনাকালে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। অপরদিকে নিত্যপণ্যের দাম হুহু করে বেড়েছে। তারপরও সম্প্রতি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান যে তথ্য দিলেন তাতে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে ২,২০০ ডলার ছাড়িয়েছে। বেশিরভাগ মানুষের আয় কমার পরও মাথাপিছু আয় কীভাবে বাড়ল? এর অর্থ একদিকে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরো দরিদ্র হচ্ছে, অপরদিকে বিত্তশালীরা আরো বেশি সম্পদের মালিক হচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতির দুটি প্রধান বিষয় রয়েছে, একটি প্রফিট, অন্যটি রেগুলেশন। কিন্তু এ দেশে প্রফিটের চাকা খুব জোরে জোরে ঘুরছে, অথচ রেগুলেশনের চাকা একেবারেই ঘুরছে না। এখনো দুই ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই রাজধানী ঢাকা পানির নিচে চলে যায়, চট্টগ্রামের অবস্থা তো আরো ত্রাহি ত্রাহি। এর জন্য দুটি বিষয়ে কাজ করতে হবে।
প্রথমত, পরিবেশকে তার মতো করে ছেড়ে দিতে হবে। আর দ্বিতীয়ত, ভোক্তা অধিকারের আন্দোলন ও ভোক্তাদের সচেতনতা তৃণমূলেও নিয়ে যেতে হবে।’
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণ করতে হলে এবং তাদের যথাযথ সেবা দিতে হলে উন্নয়নে অসমতা দূর করতে হবে। এ জন্য ভোক্তাবান্ধব সমাজ, অর্থনীতি, একই সঙ্গে রাজনীতিও দরকার। নিয়মিত রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।
‘পাশাপাশি রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগকে আরো আন্তরিক হতে হবে। না হলে বিচার বিভাগের দ্বারস্থ হতে হবে। এই তিন বিভাগ আন্তরিক হলেই ভোক্তারা তার ন্যায্য অধিকার পাবেন।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ব মান অনুসারে দেশে দরিদ্রের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে দারিদ্র্য রেখার ঊর্ধ্বে প্রকৃত দৈনিক আয় নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান মান অনুসারে একজনের দৈনিক ব্যয় দেড় ডলার, বাংলাদেশি টাকায় ১০০ টাকার ওপরে। তাহলে কোনো পরিবারের সদস্যসংখ্যা চারজন হলে পরিবারের মাসিক আয় কমপক্ষে ১২,০০০ টাকা হতে হবে।’
এম শামসুল আলম বলেন, ‘যে-কোনো সেবার উৎপাদন খরচের চারগুণ দামে ভোক্তার কাছে যাচ্ছে। অকারণে নানাভাবে এসবের মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। তাই সরকার যে বরাদ্দ দিচ্ছে তা ভোক্তাদের জন্য খরচ হচ্ছে কি না, সেটা তাদেরকেই নিশ্চিত করতে হব। এ ক্ষেত্রে ভোক্তাদের আরো সচেতন হতে হবে। নজরদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর যে নিষ্ক্রিয়তা সেটা দূর করতে হবে।’
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘সরকার আইনের মধ্যে থেকেই ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় অনেকগুলো রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান গঠন করে দিয়েছে কিন্তু সেগুলো তাদের দায়িত্ব পালন করছে না। এদের একটি হচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ভূতুড়ে বিল নিয়ে ভোক্তাদের প্রচুর অভিযোগ থাকলেও এই প্রতিষ্ঠানটি কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’
শেষ পর্যন্ত সংস্থাটি আদালতে দোষ স্বীকারও করছে, কিন্তু তার পরের ঘটনাগুলোতেও একই কাজ করছে। এখনো ভোক্তারা রাষ্ট্রের কাছে তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না।
আলোচকরা ভোক্তা অধিকার এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের অসমতাগুলো তুলে ধরে এর প্রতিকারের জন্য ক্যাবকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
সোনালীনিউজ/এমটিআই