ঢাকা : কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না সীমান্ত এলাকায় কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা। সীমান্তবর্তী জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নমুনা সংগ্রহও। এসব এলাকার বিভিন্ন ল্যাবে স্তূপ হয়ে আছে করোনা পরীক্ষার জন্য নেওয়া নমুনা। এমন পরিস্থিতিতে করোনা পরীক্ষার ফল দ্রুত পেতে সীমান্তবর্তী জেলার পাশের এলাকার ল্যাবেও নমুনা পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে রোববার (১৩ জুন) অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে এসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
নাজমুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী জেলাসহ যেসব এলাকায় সংক্রমণ বেশি, সেসব এলাকার করোনা নমুনা যেসব এলাকায় চাপ কম, সেখানে পাঠিয়ে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীর পাশাপাশি বগুড়াতেও কিছু নমুনা পাঠানো হবে। এ ছাড়া যেখানে চাপ কম আছে, সেখানে এই নমুনা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে নমুনা পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁসহ দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় সংক্রমণের হার অনেক বেশি। যে কারণে সরকারি উদ্যোগে বিধিনিষেধ চলমান রয়েছে। তাই এ অঞ্চলগুলোতে অ্যান্টিজেন টেস্ট বাড়ানো হয়েছে। এমনকি করোনা পরীক্ষা জন্য যে ১০০ টাকা নেওয়া হতো, সেটাও নেওয়া হচ্ছে না। তিনি আরো জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সীমান্তবর্তী এলাকাকে তিন ভাগে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করেছে। ১০ শতাংশের বেশি সংক্রমণের হার থাকা জেলাগুলোকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আর ৫-৯ শতাংশ হার থাকা জেলাগুলোকে মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ও ৫ শতাংশের নিচের জেলাকে স্বল্প ঝুঁকির অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, গত এক দিনে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে আরও ২ হাজার ২৩৬ জনের শরীরে। এই নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ২৬ হাজার ৯২২ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ১১৮ জনের। দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ৩৫ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল গত ৯ মে। ওই দিন ৫৬ জনের মৃত্যুর সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোববার জানানো হয়, গত এক দিনে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে আরও ২ হাজার ২৩৬ জনের শরীরে। এই নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ২৬ হাজার ৯২২ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ১১৮ জনের।
গত একদিনে ৫১২টি ল্যাবে ১৮ হাজার ৭৪৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমকি ৩৯ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ২ হাজার ২৪২ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৬৬ হাজার ২৬৬ জন। সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত একদিনে মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৩২ জন, নারী ১৫ জন। তাদের মধ্যে বিশোর্ধ্ব ১, ত্রিশোর্ধ্ব ৫, চল্লিশোর্ধ্ব ৪, পঞ্চাশোর্ধ্ব ৮, ষাটোর্ধ্ব ২৯ জন।
বিভাগ অনুযায়ী ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯, খুলনায় ৮, রাজশাহীতে ৬, বরিশাল ১, সিলেট ২, রংপুরে ৪ ও ময়মনসিংহে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে গত বছরের ৮ মার্চ। ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের তথ্য প্রকাশ করা হয়। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের কথা ঘোষণা করে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত বছরের ৪ জানুয়ারি থেকেই দেশের বিমানবন্দরসহ সব স্থল ও নৌবন্দরে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং শুরু করে। ওই বছরের ৪ মার্চ সমন্বিত করোনা কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ