ঢাকা: করোনাভাইরাসের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ চাকরি প্রত্যাশিদের পক্ষে সংসদে কথা বলেছেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। তিনি করোনাকাল বিবেচনায় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর জোর দাবি জনিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৯ জুন) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে অর্থবিল পাসের আগে বিলের সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য রাখেন তিনি। এসময় চাকরি প্রত্যাশিদের বয়সসীমা বাড়ানো বিষয়টি তুলে ধরেন।
বিরোধী দলীয় এই সংসদ নেতা বলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়স আজকে যাদের পার হয়ে যাচ্ছে, তারা অস্থির অবস্থায় আছে। এটা বিবেচনায় রেখে অন্ততপক্ষে কোভিডকালীন সময়ে যতক্ষণ না পর্যন্ত করোনামুক্ত হচ্ছি, তার জন্য এই সময়টায় চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে করোনার জন্য ক্ষতিগ্রস্থ সরকারি চাকরি প্রত্যাশিতদের প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে বয়সের জটিলতা সরকারের নজরদারিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। আজ মঙ্গলবার তিনি গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, যে সময় থেকে চাকরির বিজ্ঞপ্তিগুলো হওয়ার কথা কিংবা পরীক্ষা নেওয়ার কথা সেই সময় থেকে কয়েক মাস বয়সে ছাড় পাবেন চাকরিপ্রার্থীরা।
তিনি বলেন, করোনায় বিধিনিষেধের কারণে চাকরিপ্রার্থীরা বয়সের দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে বয়সটা যাতে ছাড় দেওয়া হয় সেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, যে সময়টা তাদের ক্ষতি হয়েছে, যখন যে সময় বিজ্ঞপ্তি হওয়ার কথা ছিল, আগের সময় ধরেই পরবর্তীকালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এতে বয়সে ছাড় পাবেন প্রার্থীরা।
মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে চাকরিপ্রার্থীদের বয়সে ছাড় দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
তবে দীর্ঘদিন ধরে করোনাকালীন প্রণোদনা হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩২-এ উন্নীত করার দাবি জানিয়ে আসছিলো ‘চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ চাই’- আন্দোলনের কেন্দ্রীয় টিম।
সর্বশেষ রোববার (২৭ জুন) শাহবাগ জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে চাকরিপ্রত্যাশীরা জানান, ‘করোনাকালীন অচলাবস্থায় সব বয়সের শিক্ষার্থী চাকরিপ্রত্যাশীরা ইতোমধ্যেই দেড় বছর হারিয়ে ফেলেছে যা দুই বছরের দিকে ধাবমান। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ হওয়ায় দেড় লক্ষ তরুণ-তরুণী (করোনার শুরুর সময়ে যাদের ২৮+ বয়সের ছিলো) চাকরির পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ না পেয়েই তারা ৩০ বছর বয়স অতিক্রম করতে চলেছে। যেসব শিক্ষার্থীরা ২৬ বছর বয়সে শিক্ষাজীবন শেষ করে সেই করোনা শুরুর সময় থেকে আশায় বসে আছে চাকরির পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবে, তারাও এই দেড় বছর হারাতে চলছে। সরকারি বিধি মোতাবেক প্রচলিত যে ৩০ বছর বয়স অবধি আবেদনের সুযোগ পাওয়ার কথা করোনার আঘাত কিন্তু প্রকৃতই সেই সুযোগ দিচ্ছে না।’
তারা বলেন, ‘২০১১ সালে এসে অবসরের বয়স বেড়ে হয় ৫৯ আর মহান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য হয় ৬০। অবসরের বয়স যেহেতু ২ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে সেক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ২ বছর বৃদ্ধি করলে সেটাও আর সাংঘর্ষিক হয় না। প্রাপ্ত তথ্যমতে, করোনাকালে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরিমাণ ৮৭ শতাংশ থেকে কমে ১৩ শতাংশে উপনীত হয়েছে; বেকারত্বের হার ২০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ততার স্বীকার এই দেড় লাখ চাকরিপ্রত্যাশী বেকারত্বের হার আরও বৃদ্ধি করবে।’
ব্যাকডেট দেওয়ার মাধ্যমে সব বয়সী চাকরিপ্রত্যাশীদের ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করে তারা বলেন, চাকরিতে আবেদনের বয়স স্থায়ীভাবে ২ বছর বাড়িয়ে ৩২ বছর করলে সকলেই তাদের হারিয়ে যাওয়া ২ বছর ফিরে পাবে। এসময় তারা চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ করার জন্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, গত বছর করোনা মাহামারিতে সাধারণ ছুটির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত চাকরিপ্রার্থীদের বয়সের ছাড় দেয় সরকার। ওই বছর ২৫ মার্চ যাদের বয়স ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছিল তাদের পরবর্তী পাঁচ মাস পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে আবেদনের সুযোগ দিয়ে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে নির্দেশনা দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সোনালীনিউজ/এমএইচ