ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে করোনা, চৌদ্দ জেলায় মৃত্যু ১৭৬

  • নিজস্ব প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২১, ০১:৫৯ পিএম
ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা : দেশে দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে মহামারি করোনা। বেড়েই যাচ্ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে করোনায় দেশের বিভিন্ন জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ঢাকার বাইরের চৌদ্দ জেলার ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ চিত্র উঠে এসেছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরপরই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী বিভাগ। এ বিভাগে এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এরপরে ময়মনসিংহে-১৭ জন, কুষ্টিয়ায়-১৭ জন, চুয়াডাঙ্গায়-১০ জন। 

খুলনা : খুলনায় ৪ হাসপাতালে এক দিনে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ৯ জন, জেলা জেনারেল হাসপাতালে ২ জন, গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৮ জন ও আবু নাসের হাসপাতালে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান।

ডেডিকেটেড হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা (ফোকাল পার্সন) সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, এ হাসপাতালে মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে করোনা নিয়ে ৮ জন ও উপসর্গ নিয়ে ১ জন মারা গেছেন। করোনা শনাক্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে খুলনার ৬ জন ও বাগেরহাটে ২ জন।

এ ছাড়া এ হাসপাতালে ১৯৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। যার মধ্যে রেড জোনে ১২৯ জন, ইয়েলো জোনে ৪৫ জন, এইচডিইউতে ২০ ও আইসিইউতে ১৯ জন। নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৩২ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫১ জন।

গাজী মেডিক্যালের মালিক গাজী মিজানুর রহমান জানান, এই হাসপাতালে মৃত ৮ জনের মধ্য খুলনার ২, যশোরের ২, বাগেরহাটের ১, নড়াইলের ১, চুয়াডাঙ্গায় ১ ও পিরোজপুরের ১ জন।

হাসপাতালে ১৫০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে ৯ ও এইচডিইউতে ১১ জন। এক দিনে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ২১ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২০ জন।

জেলা জেনারেল হাসপাতালের মুখপাত্র আবু রাশেদ জানান, এ হাসপাতালে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। দুইজনেরই বাড়ি খুলনায়। এ হাসপাতালে মোট ৬৮ জন রোগী রয়েছেন। নতুন ভর্তি হয়েছে ১৮ জন; বাড়ি ফিরেছেন ১৩ জন।

আবু নাসের হাসপাতালের মুখপাত্র প্রকাশ দেব নাথ জানান, এ হাসপাতালে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে খুলনার ২ জন ও ঝিনাইদহের ১ জন। হাসপাতালে ৪৩ জন রোগীর মধ্যে আইসিইউতে ১০ জন রয়েছেন। এখানে নতুন ভর্তি হয়েছেন ৪ জন; বাড়ি ফিরেছেন ১ জন।

রাজশাহী : রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে আরও ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়।

মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। বাকিদের মৃত্যু হয়েছে উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে ৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। বাকি ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে উপসর্গ নিয়ে। তাদের মধ্যে একজনের করোনা নেগেটিভও হয়েছিল। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ৪ ও পুরুষ ১৪। তাদের মধ্যে রাজশাহীর ৯, নওগাঁর ৩, নাটোরের ২ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২, পাবনা ১, কুষ্টিয়ার ১ জন রয়েছেন।

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ায় দিন দিন ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে করোনা। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জন করোনায় ও উপসর্গ নিয়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। কুষ্টিয়া করোনা হাসপাতালের করোনা ইউনিটগুলোর সেবিকা ইনচার্জ দীপ্তি রানী নিশ্চিত করেন এ তথ্য। জেলা প্রশাসনের হিসাবে এ ছাড়াও ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৩২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ৭৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় এই শনাক্তের হার বেড়ে ৩১ দশমিক ২২ শতাংশ হয়েছে।

আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাক্তার তাপস কুমার সরকার জানান, করোনা ডেডিকেডেড কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ২০০ বেডে করোনা ও এর উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন ২৮৯ জন রোগী। এর মধ্যে ২০২ জন করোনা আক্রান্ত। প্রায় ৭০ শতাংশ রোগীদের অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে। করোনায় এ পর্যন্ত জেলায় ২৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২৪ ঘণ্টায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫ জন করোনা শনাক্ত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে আরও ১২ জন মারা যান।

হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট ও করোনা ইউনিটের ফোকাল পার্সন ডা. মহিউদ্দিন খান মুন বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে করোনা ইউনিটে ৩৭১ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৫৫ জন। আইসিইউতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২১ জন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৬৪৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৩৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় জেলায় আক্রান্তের হার ৩৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৫১৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৯১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। শনাক্তের হার ৩৭ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১১ জন। এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দুই নারীসহ ৩ জন মারা গেছেন। আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন চার নারীসহ ৮ জন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এএসএম ফাতেহ্ আকরাম।

চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নতুন শনাক্তদের মধ্যে সদর উপজেলার ৭৭ জন, আলমডাঙ্গায় ৩৫ জন, দামুড়হুদায় ৩১ জন ও জীবননগরে ৪৮ জন রয়েছেন।

এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৬৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২৬ জন। এ পর্যন্ত জেলায় মারা গেছেন ১২৫ জন।

এএসএম ফাতেহ্ আকরাম জানান, জেলায় বর্তমানে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতালে আইসোলেশনে রয়েছেন ১৩২ জন। বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন ১ হাজার ৬২১ জন। এ ছাড়াও উপসর্গ নিয়ে সদর হাসপাতালে অর্ধশতাধিক রোগী হলুদ জোনে ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক।

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ১০৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ৭১৩ জন। শনাক্তের হার শতকরা ৩৫ শতাংশ। একই দিনে করোনা কেড়ে নিয়েছে ৯ জনের প্রাণ। এর মধ্যে নগরের ২ জন ও উপজেলায় ৭ জন। এই নিয়ে চট্টগ্রামে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৪৪ জনে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে বৃহস্পতিবার সকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আক্রান্ত ৭১৩ জনের মধ্যে ৪৭৭ জন নগরের ও ২৩৬ জন উপজেলার বাসিন্দা। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনায় মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৯১৩ জনে।

এছাড়া যশোর-১১ জন, ফরিদপুর-১৫ জন, বগুড়ায়-১২ জন, টাঙ্গাইল-১১ জন, সাতক্ষীরায়-১০ জন, বরিশালে-১০ জন, কুমিল্লায়-৭ জন এবং কিশোরগঞ্জে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সব জেলার সিভিল সার্জনের কাজ থেকে পাওয়া খবরে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে বুধবার (৭ জুলাই) সারাদেশে ২০১ জনের মৃত্যু হয়। শনাক্তের সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ১৬২ জনে। যা বিগত সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ