দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০২১, ০২:৫৯ পিএম

ঢাকা : দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী দিনদিন বেড়েইে চলেছে। সেইসাথে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এভাবে চলতে থাকলে সংক্রমণ ও মৃত্যু গত জুন মাসকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেইসাথে অক্সিজেনসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা পড়তে পারে চ্যালেঞ্জের মুখে।

বৃহস্পতিবার (৮ জুলােই) দেশে করোনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হলেও রেকর্ড গড়েছে আক্রান্তের সংখ্যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার একদিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৯৯ জনের। এর আগের দিন যা ছিল সবোর্চ্চ ২০১ জন। সংক্রমিত হয়েছেন ১১ হাজার ৬৫১ জন, যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ। এর আগে গত মঙ্গলবার ১১ হাজার ৫২৫ জন শনাক্ত হয়েছিলেন। এ নিয়ে করোনায় দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৫ হাজার ৭৯২ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৯ লাখ ৮৯ হাজার ২১৯ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে দেশে দ্রুত বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। দুই  দিন আগে সোমবার করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা যান ১৬৪ জন, যা দেশে এক দিনে করোনায় তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু। মঙ্গলবার মারা যান চতুর্থ সর্বোচ্চ ১৬৩ জন। গত ১ জুলাই ১৪৩, ২ জুলাই ১৩২, ৩ জুলাই ১৩৪ এবং ৪ জুলাই ১৫৩ জনের মৃত্যু হয়। এভাবে গত কয়েকদিন ধরেই করোনায় মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা মহামারির ১৬ মাসের মধ্যে চলতি বছরের জুনের শেষ দিক থেকে করোনার আঘাতে বেশি জর্জরিত হয়েছে বাংলাদেশ। তবে চলতি জুলাই মাসে প্রথম ৮ দিনে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণে যে ধারা, তা অব্যাহত থাকলে জুন মাসকেও তা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, দেশের চলমান লকডাউন বা কঠোর বিধিনিষেধ অমান্য করছেন বেশিরভাগ মানুষ। এতে রোগী সংখ্যা যদি অস্বাভাবিক বেড়ে যায় তাহলে আবারো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এমনটা চলতে থাকলে এবারের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে। সংক্রমণের উচ্চমুখী এই প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে, জুলাইয়ের রোগী সংখ্যা এপ্রিল ও জুন মাসকেও ছাড়িয়ে যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজধানী ঢাকার অন্যতম বড় সরকারি আটটি হাসপাতালের ১২৭টি আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) বেডের সবগুলোতে রোগী ভর্তি। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আশঙ্কাজনক হারে কমে আসছে ফাঁকা আইসিইউর সংখ্যা। অপরদিকে দেশের ১৩ হাসপাতালে সাধারণ শয্যার বিপরীতে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি রয়েছে।

করোনা মহামারির ঢেউয়ে দেশে বিভিন্ন বিভাগের হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। সিলেট বিভাগের হাসপাতালগুলোতে বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। সাধারণ বেডে কোনোমতে চিকিৎসা সেবা দেওয়া গেলেও মুমূর্ষু রোগীদের বাঁচাতে মিলছে না প্রয়োজনীয় আইসিইউ বেড। প্রিয়জনকে বাঁচাতে স্বজনরা এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছেন।

আইসিইউ সংকটের পাশাপাশি অতিরিক্ত রোগীর চাপে হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের সরবরাহেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। আর এসব কারণে বিভাগে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিলেটে একটি আইসিইউ বেডের জন্য করোনাক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের স্বজনদের রীতিমতো মাতম চলছে। প্রিয়জনকে বাঁচাতে একটি আইসিইউ বেডের জন্য এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা।

ওসমানী হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, আরো ১০ শয্যার একটি আইসিইউ ইউনিট প্রস্তুত করা হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগ থেকে এটার কাঠামোগত কাজ হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় অক্সিজেন বা যন্ত্রাংশের বাজেট না থাকায় তা এখনই চালু করা যাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম জেলায় এযাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭১৩ জনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার খবর পাওয়া গেছে।

জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) রেকর্ড সংক্রমণের দিনে চট্টগ্রামে মৃত্যু হয়েছে আরো নয়জনের। সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১১টি ল্যাবে দুই হাজার ১০৯টি নমুনা পরীক্ষা করে পজেটিভ পাওয়া গেছে ৭১৩ জনের। এর মধ্যে নগরীর ৪৭৭ জন এবং বিভিন্ন উপজেলার রয়েছে ২৩৬ জন।

খুলনা বিভাগেও করোনা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি ঘটেনি। গত ২৪ ঘণ্টায় এই বিভাগে ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে এক হাজার ৭৩২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা।

এর আগে বুধবার বিভাগে সর্বোচ্চ ৬০ জনের মৃত্যু ও এক হাজার ৯০০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ৬ জুলাই ৪০ জনের মৃত্যু ও এক হাজার ৮৬৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। ৫ জুলাই ৫১ জনের মৃত্যু ও এক হাজার ৪৭০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

সোনালীনিউজ/এমটিআই