ঢাকা : দিন যত গড়াচ্ছে ততই যেন আরো বেশি অস্থির হয়ে উঠেছে মানুষ। ঢিলেঢালা ভাব চলে এসেছে পুলিশ চেকপোস্টগুলোতে। দোকানিরাও বিভিন্ন কৌশলে খুলছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
এদিকে করোনাও ক্রমশ বিস্তৃত করছে তার থাবা। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের সর্বোচ্চ মহল থেকে বলা হচ্ছে, মানুষ যদি এমনটা করে তাহলে পুলিশ ও রাষ্ট্র অসহায় হয়ে পড়ে।
লকডাউনের আদলে দেওয়া কঠোর বিধিনিষেধের অষ্টম দিনে রাজধানীর অনেক স্থানে চেকপোস্টগুলোতে শিথিলতা দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) যাত্রাবাড়ী, বিমানবন্দর সড়ক, কারওয়ান বাজার ও রামপুরা ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। ব্যাপক প্রাইভেট কারের উপস্থিতি দেখা গেছে রাস্তায়। অনেকটা অবাধেই চলে এসব ব্যক্তিগত গাড়ি। এর সঙ্গে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলেও যাত্রী নিয়ে অবাধে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে।
যেসব এলাকায় বিশেষ অভিযান চলছে না, সেখানে এসব ব্যক্তিগত গাড়ি, ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চলাচলে কোনো ধরনের বাধা পেতে দেখা যায়নি।
ফুটপাতে পথচারীর সংখ্যাও কম ছিল না। তবে তাদের প্রায় কারো মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। গুলিস্তানে ছিল রিকশার ছড়াছড়ি। কারওয়ান বাজার এলাকার এক রিকশাচালক বলেন, গত কয়েক দিনের থেইকা আইজকা ভালোই লোকজন দ্যাখতাছি। আইজকা ভাড়াও ভালো পাইছি। পণ্যবাহী টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের সামনে ছিল মানুষের জটলা।
মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার চলাচলের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করলেও ব্যাংক, বীমা, শেয়ারবাজার, গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা চালু রয়েছে। ফলে কর্মজীবী মানুষগুলোকে প্রতিদিন অফিসে ছুটতে হচ্ছে।
কর্মীদের অফিস যাতায়াতের জন্য কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থা করেছে। ভাড়া করা বড় বাসও রয়েছে এ তালিকায়। যাদের অফিসের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা নেই তারা কেউ রিকশা, কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ হেঁটে অফিস যাতায়াত করছেন। অবশ্য বেশি ব্যবহূত হচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ি।
যাত্রাবাড়ী এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যে চেক পোস্টগুলোতে লকডাউনকালে প্রতিটি গাড়িকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়, গতকাল সেখানে গা-ছাড়া ভাব দেখা গেছে। কিছু কিছু চেকপোস্ট অনেকটাই খালি পড়ে ছিল। ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা কিংবা কনস্টেবলদের আশপাশে বসে গল্প করতে দেখা গেছে। এসব চেকপোস্ট দিয়ে অবাধে গাড়ি চলাচল করে। এই মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যাও ছিল অনেক বেশি। বেড়েছে মানুষের চলাচলও।
রায়েরবাগে মহাসড়কের উত্তর পাশের (ঢাকা থেকে বের হওয়ার দিক) চেকপোস্টে দাঁড়ানো ডেমরা ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট শেখ এমরান হোসেন বলেন, বের হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের মূল চেকপোস্ট শনির আখড়ায়, আর প্রবেশের মূল চেকপোস্ট সাইনবোর্ডের কুবা মসজিদ এলাকায়। আমরাও এখানে চেক করি। তবে মূল চেকগুলো ওখানেই হয়। আমরা চেকপোস্টে আছি। রামপুরা ডিআইটি রোড দিয়ে কাকরাইলের দিকে এগিয়ে গেলে চোখে পড়ে না পুলিশের কোনো তৎপরতা। তবে কিছু জায়গায় তল্লাশির কারণে যানজটেরও সৃষ্টি হতে দেখা গেছে।
বিমানবন্দর সড়কে খিলক্ষেতের আগে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে গাড়ি ছাড়া হয় একটা একটা করে। পেছনে ছিল দীর্ঘ লাইন। কিন্তু চৌকি ছাড়িয়ে সামনের সড়ক ফাঁকা। পুলিশ প্রাইভেট কার দেখছে কিন্তু আটকায়নি। কিন্তু বাইক পেলেই থামিয়ে চলে জিজ্ঞাসাবাদ।
এদিকে ব্যবসায়ীরাও চুপিসারে নানান কৌশলে খুলতে শুরু করেছেন দোকান। কোনো কোনো দোকানের শাটার অর্ধেক খোলা ছিল। কেউ কেউ আবার দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে নজর রাখেন, পুলিশ আসে কি না।
মিরপুর এলাকার অলিগলিতে প্রায় সব ধরনের দোকানই খুলে গেছে। বেড়েছে মানুষের আনাগোনাও, যাদের অনেকেই স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না। ঢাকার মোহাম্মদপুরে ইলেকট্রনিকসের একজন ব্যবসায়ী গতকাল দোকান খোলেন সকাল ৭টায়। পরিচিতি ক্রেতাদের তিনি বলে রেখেছেন, তারা যেন সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে আসেন।
তিনি বলেন, আমার ব্যাংক ঋণ অনেক। ব্যবসা না করলে শোধ করব কীভাবে? এ এলাকার একজন হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী দোকানের অর্ধেক শাটার খুলে বাইরে এক কর্মচারীকে তালা চাবি দিয়ে রেখেছেন যেন পুলিশ এলে শাটার নামিয়ে তালা লাগিয়ে দেয়।
এভাবে চোর-পুলিশ খেলায় হতাশ খোদ পুলিশ প্রধান। গতকাল রাজধানীর একটি স্কুল মাঠে হতদরিদ্রদের মধ্যে খাবার ও নগদ অর্থ বিতরণ অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, নানান বাহানায় মানুষ যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানে অযথাই রাস্তায় বের হয়ে পড়ে তাহলে পুলিশ ও রাষ্ট্র অসহায় হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, করোনার সেকেন্ড ওয়েভের স্থায়িত্ব নির্ভর করে আমাদের প্রত্যেকের আচরণের ওপর। দুই সপ্তাহ বাসায় বসে থাকা খুব বেশিকিছু না, যদি এর জন্য আমরা আগামী ৫০ বছর পর্যন্ত ভালো থাকতে পারি। দয়া করে রাস্তাঘাটে ভিড় করবেন না।
একই অনুষ্ঠানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মাস্ক না পরলে ফেরেশতাও করোনা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে না।
আপনি পুলিশ দেখে মাস্ক পরবেন আর পুলিশ চলে গেলে মাস্ক খুলে ফেলবেন, আপনাকে কিন্তু আল্লাহর ফেরশতাও এসে বাঁচানোর চেষ্টা করবে না। বাঁচার জন্য একটি মাস্কই যথেষ্ট। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আমরা নিজেকে এবং জাতিকে এই মহাবিপদ থেকে রক্ষা করতে পারব।
সোনালীনিউজ/এমটিআই